
নানা দিক দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। এই ইতিবাচক অবস্থার মধ্যেও পরিবেশ দূষণ ব্যাপক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপে পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর দিকটি ওঠে আসে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এবার ‘বাংলাদেশে পরিবেশগত বিশ্লেষণ ২০১৮’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রতিবছর কেবল শহরগুলোতে পরিবেশদূষণের কারণে ৬৫০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থের ক্ষতি হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৫৩ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮২ টাকা ধরে), যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৩.৪ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলছে, পরিবেশদূষণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে। আর্থিক ক্ষতির চেয়েও ভয়ংকর আরেকটি তথ্য দিয়ে বলছে, শহরগুলোতে পরিবেশদূষণজনিত রোগে প্রতিবছর বাংলাদেশে ৮০ হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। এক বছরে বাংলাদেশে বিভিন্ন রোগে বা চিহ্নিত কারণে যত মৃত্যু হয়, তার ২৮ শতাংশই হয় পরিবেশ দূষণজনিত রোগে। অথচ পরিবেশ দূষণজনিত রোগে প্রতিবছর বৈশ্বিক মৃত্যুর হার মাত্র ১৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য এবং মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে এখনই বিশেষ করে শহর এলাকায় পরিবেশগত অবনতি ও দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, অপরিকল্পিত নগরায়ণের পাশাপাশি শিল্পায়নের কারণে বড় ও ছোট শহরগুলো ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছে। গত ৪০ বছরে শুধু ঢাকা শহর ৭৫ শতাংশ জলাভূমি হারিয়েছে। জলাভূমিগুলো ভরাট করে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। একই অবস্থা পাবনা জেলারও। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ১৯৯০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অর্ধেক জলাভূমি হারিয়ে গেছে সেখানে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, দূষণ ও পরিবেশ ক্ষয়ের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে নারী, শিশু ও দরিদ্র শ্রেণি। মনুষ্যসৃষ্ট বর্জ্য ও ইলেকট্রনিক বর্জ্য নারী, শিশু ও দরিদ্র শ্রেণিকে হুমকিতে ফেলে দিয়েছে।
দেশের এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ প্রায় ৫ কোটি মানুষ এখন শহরে বাস করছে। এজন্য পরিকল্পিত নগরায়ণের কোনো বিকল্প নেই। ঢাকা আবাসস্থল থেকে পরিণত হয়েছে বিরাট বাজারে। বস্তুত এ শহরের সুনির্দিষ্ট কোনো চরিত্র নেই। যত্রতত্র যে যেখানে পারছে, যে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। এতে নগরী তার বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। এক জগাখিচুড়ি অবস্থায় রাজধানীবাসী এখানে বাস করছে। ফলে অনেক নাগরিক সুবিধা থেকেই তারা বঞ্চিত হচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এ নগরী যেন নরকতুল্য। খেলার মাঠ নেই, নেই জলাশয়। সবুজ গাছগাছালির দেখা মেলাও ভার।
এ অবস্থায় ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য পরিকল্পনা মাফিক সবকিছু হতে হবে। মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। সবার আগে বন্ধ করতে হবে যখন তখন খোঁড়াখুঁড়ি।