
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের নেতিবাচক মনোভাবের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবাই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে চায় যে এরা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফেরত যাক। মিয়ানমার এদের নিতে চায় না। ভলান্টিয়াররা (স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা) চায় না কোনো রিফিউজি তাদের স্বদেশে ফিরে যাক। তালিকা যখন করলাম প্রত্যাবাসনের জন্য, তখন তারা (রোহিঙ্গারা) আন্দোলন করলো তারা ফেরত যাবে না। এর পেছনে কারা কেন উসকানি দেয়? অনেক সংস্থা চায় না তারা ফিরে যাক। কারণ গেলে তাদের চাকরি থাকবে না। ফান্ড আসবে না।
রোববার (৯ জুন) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সাম্প্রতিক জাপান, সৌদি আরব, ও ফিনল্যান্ড সফরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। গণমাধ্যমের সামনে তিনি তার ত্রিদেশীয় সরকারি সফরের উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরেন।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তো চুক্তি করেছি। সব রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের (মিয়ানমার সরকার) সঙ্গে যোগাযোগও আছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার আগ্রহী না। মিয়ানমারের সেনাদের নির্মম নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানে নানাবিধ উদ্যাগ গ্রহণ করা হলেও মূলত সে দেশের সরকার তাদের ফেরত নিতে চায় না।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অপ্রীতিকর ঘটনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। বিজিবি, পুলিশ ও সেনাবাহিনী আছে। সবসময় টহলসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের কারণে সৃষ্ট সংকটের বিষয়টি ইসলামী দেশগুলোর (ওআইসি) সম্মেলনে তুলে ধরেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্মেলনে এশিয়ার পক্ষ থেকে আমি বক্তব্য দিয়েছি। এতে জঙ্গিবাদ ও রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করি।এছাড়া মুসলিম দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষার বিষয়েও কথা হয়।
চীনে যাওয়ার দাওয়াত পেয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপানে সফর করেছি। ইতিমধ্যে চীনে যাওয়ার দাওয়াত পেয়েছি। আগামী জুলাই মাসে যাওয়ার দাওয়াত আছে। চীনের প্রেসিডেন্ট দাওয়াত দিয়েছেন। ৩০ জুন আমাদের বাজেট পাসের ব্যাপার আছে। বাজেট পাস হওয়ার পর চীনে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক সামিট। সামার সামিটটা হবে ওখানে। তখন যাবো।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৮ মে জাপান দিয়ে ত্রিদেশীয় এই সফর শুরু করেন শেখ হাসিনা। পরে সেখান থেকে সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ড যান তিনি। সফরে তৃতীয় ও শেষ দেশ ফিনল্যান্ড থেকে শনিবার (৮ জুন) সকালে দেশে পৌঁছান তিনি।
ত্রিদেশীয় এই সফরের শুরুতেই জাপানের টোকিওতে ‘দ্য ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন তিনি। বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য জাপানের সঙ্গে আড়াইশ কোটি ডলারের উন্নয়ন সহায়তা চুক্তি সই হয় তার সফরে।
জাপান সফর শেষে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্সের (ওআইসি) চতুর্দশ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ৩০ মে শেখ হাসিনা সৌদি আরবে যান। সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পর পবিত্র ওমরাহ পালন করেন তিনি, জিয়ারত করেন মহানবীর (স.)-এর রওজা।
সৌদি আরব থেকে গত ৩ জুন ফিনল্যান্ড যাত্রা করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ৪ জুন দেশটির প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তোর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। পরদিন ৫ জুন অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ ও ফিনল্যান্ড আওয়ামী লীগ তার সম্মানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী সেই অনুষ্ঠানেও যোগ দেন।