
যশোরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। শহর ও শহরতলীতে তার দুটি বাড়ি এখন পুলিশি কড়া নজরদারিতে রয়েছে। সেখানে এখন পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীদের সরব উপস্থিতি। ঈদের আগের রাতে যশোরে পরিবারের সদস্যদের সাথে ফোনালাপ তাকে আলোচনায় নিয়ে এসেছে।
সূত্র জানায়, দেশের আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বাড়ি যশোরে। শহরের চাঁচড়া ডালমিল রায়পাড়া ও শহরতলীর পুলেরহাটে তার দুটি বাড়ি রয়েছে। মিডিয়ায় ফলাও করে এ তথ্য প্রচার না হওয়ায় যশোরবাসী খানিকটা থমকে ছিল। কিন্তু ওসি মোয়াজ্জেমের একটি ফোনালাপের তথ্য প্রচার হওয়ায় তিনি যশোরের মানুষের কাছে আলোচনায় উঠে এসেছেন। এরপর থেকে নড়েচড়ে বসেছে যশোর জেলা প্রশাসন। তারা বাড়ি দুটিতে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া ডালমিল রায়পাড়া ও পুলেরহাট এলাকায় কয়েকটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের তৎপরতাও বৃদ্ধি করেছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা যায়। এলাকাবাসী বলেছেন, কোতোয়ালী থানার একজন ইন্সপেক্টর মঙ্গলবার দু’দফা তার বাড়িতে ফোর্স নিয়ে হাজির হন ও পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন। একইসাথে ওসি মোয়াজ্জেমের যশোরের দুটি বাড়িতে তথ্য সংগ্রহে সারাদিনই গণমাধ্যমকর্মীদের ভীড় ছিল।
সূত্র জানায়, দেশের আলোচিত ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন নিখোঁজ হবার আগে চাঁদরাতে যশোর শহরের বাড়িতে ফোন করেছিলেন। এসময় তিনি পরিবারের সকল সদস্যদের খোঁজ-খবর নেন। ঈদে বাড়ি আসতে পারছেন না বলে জানান। এছাড়া তিনি সবাইকে শান্ত থাকতে বলেন ও নিজে ভালো আছেন বলেও জানান। রংপুর থেকে তিনি এ ফোনটি করেছিলেন। এরপর পরিবারের সঙ্গে গত ৭ দিনেও তার আর কোন যোগাযোগ হয়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে।
এসব কথা জানান, তার ভাইয়ের স্ত্রী রেকসোনা খাতুন। তিনি জানান, মাস ছয়েক আগে পিতার মৃত্যুবার্ষিকীর পর আর বাড়িতে আসেননি মোয়াজ্জেম হোসেন। চাচঁড়া ডালমিল রায়পাড়ার দ্বিতীয়তলার এই বাড়িতে এখন ওসি মোয়াজ্জেমের ছোট দুই ভাই ও একমাত্র বিবাহিত বোন মায়ের সঙ্গে এখানে বসবাস করছেন। এছাড়া মোয়াজ্জেমের স্ত্রী ও সন্তান কেউ এখানে থাকেন না। তারা কুমিল্লায় বসবাস করেন বলে জানান।
পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ওসি মোয়াজ্জেমের বাবার নাম মৃত খন্দকার আনসার আলী। পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি বড়। তার এক ভাই সৌদি আরবে ও আরেক ভাই আমেরিকা প্রবাসী। মোয়াজ্জেম এ বাড়িতে থেকেই শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন। তিনি ১৯৮৫ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর ১৯৯২ সালে বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে এসআই পদে চাকরিতে প্রবেশ করেন বলে সূত্রটি জানিয়েছে। পুলিশে চাকরির পর থেকে বাড়ির সাথে তার যোগাযোগ কমে যায়। তিনি কালে-ভদ্রে বা বছরে বাড়িতে আসতেন।
রেকসোনা জানান, যশোর শহরতলীর পুলেরহাটে তাদের অপর বাড়িটি ভাড়া দেয়া রয়েছে। সেখানে তাদের কেউ থাকে না। অবশ্য তাদের আদি বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বৈডাঙ্গা গ্রামে। বাবার চাকরির সুবাদে তারা দীর্ঘদিন ধরে যশোর শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে বিচার প্রত্যাশায় স্থানীয় থানায় গেলে সহযোগিতার বদলে সে ঘটনা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে তাকে হয়রানি করেন ওসি মোয়াজ্জেম। তখন তিনি কঠোর ব্যবস্থা না নেয়ায় আসামিরা আরও সাহসী হয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে তাকে পুড়িয়ে হত্যা করে। এছাড়া, নুসরাত অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যখন চিকিৎসাধীন ছিলেন তখনও আসামিদের গ্রেফতার না করে মামলা রেকর্ড বিলম্বিত করার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে। ৮ এপ্রিল নুসরাতের মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী এ ঘটনায় কোনও আসামি ছাড় পাবে না ঘোষণা দিলে ওসি মোয়াজ্জেমের ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগ সামনে চলে আসে। এরপর গত ১৫ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা দায়ের করেন। ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এরপরে ফেনীর সোনাগাজী থানা থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। রংপুর রেঞ্জে তিনি যোগদান করলেও ঈদের পর তাকে আর খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। তিনি রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ রয়েছেন। তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে। একইসাথে গত ৭ দিন তার পরিবারসহ কারো সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই বলে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ অপূর্ব হাসান বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম সংক্রান্ত তাদের কাছে কোন তথ্য বা প্রশাসনিক কোন নিদের্শনা নেই। তবে এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী কোন সংস্থা তাদের কাছে সহযোগিতা চাইলে তারা এগিয়ে যাবেন।