
যশোরের নারাঙ্গালি এলাকার ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ী রবিন দাস শনিবারের হাটে গরুর দুটি চামড়া বিক্রি করেছেন ১১শ’ টাকায়; আর ছাগলের ৮টি চামড়া আড়াইশ’ টাকায়। চারটি ছাগলের চামড়া কেউ নিতে চায়নি বলে ফেলে দিয়েছেন।
অনুরূপভাবে শার্শা উপজেলার নাভারণ এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল বকনা গরুর ৭টি চামড়া বিক্রি করেছেন মোটে ছয়শ’ টাকায়।
যশোর সদরের চাউলিয়া এলাকার সাধন দাস ২৮টি ছাগলের চামড়া এনেছিলেন হাটে। ১২পিস বিক্রি করেছেন ১০টাকা দরে, বাকিগুলো ৮ টাকা করে দাম উঠেছে। তিনি বলেন, ১৫ থেকে ২০টাকা দরে কিনে, লবণ মাখিয়ে হাটে এনে এখন খরচই উঠছে না। এভাবে চলতে থাকলে কীভাবে করে কম্মে খাবো- সেই চিন্তায় মরছি!
শনিবার ছিল রাজারহাট এলাকায় চামড়ার হাটের দিন। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার এই হাট বসে যশোর-খুলনা মহাসড়কের পাশে রাজারহাটে, সপ্তাহে দ’দিন শনি ও মঙ্গলবারে। খুলনা বিভাগের সব ক’টি জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা এ হাটে চামড়া বেচাকেনা করে থাকেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্যানারি মালিকরা আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার মন্দাভাবের দোহায় দিয়ে চামড়ার দাম মোটেও দিতে চাইছেন না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে তাদের পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ব্যবসায়ীরা শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
রাজারহাটের এই বৃহত্তম মোকামে প্রতি হাটে কমবেশি কোটি টাকার বিকিকিনি হয়ে তাকে। কিন্তু গত তিন-চারবছর ধরে এই হাটে ৫-৬ লাখের বেশি বিকিকিনি হচ্ছে না। সামনে কোরবানির ঈদ। এই ঈদকে সামনে রেখে আশায় বুধ বেধেছেন ব্যবসায়ীরা।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ বলেন, ২০১৫ সাল থেকে চামড়া ব্যবসায় মন্দা চলছে। একটি চামড়া দুইশ’ টাকায় কিনে লবণ দিয়ে তা প্রসেস করতে আরও একশ’ টাকা খরচ হয়। এখন হাটে এসে যদি দুইশ’ টাকায় বিক্রি করা লাগে- তাহলে পুঁজি থাকবে কীভাবে।
হাটে কথা হয় মাগুরা জেলা থেকে আগত পাইকার মো. মাসুদ রানার সঙ্গে। তিনি বলেন, হাটে এখন আর ফুট হিসেবে চামড়া বিক্রি হচ্ছে না। থামকো (মাপ ছাড়াই) গরুর চামড়া দুইশ’ থেকে তিনশ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ছাগলের চামড়ার বেশিরভাগই বিক্রেতারা ফেলে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, এখন যে দাম দেয়া হচ্ছে, তাতে করে কোরবানি ঈদে যারা চামড়ার হকদার- তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গরিব মানুষ কিছুই পাবে না। দাম কম হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা হাটে চামড়াও আনতে অনীহা প্রকাশ করছেন।
নাটোরের ব্যবসায়ী গোলাম মোর্ত্তজা বলেন, ‘চামড়া কেনার মতো পরিবশে এখন নেই। ব্যবসায়ীরা সবাই চিন্তিত; কীভাবো কিনবো! ট্যানারি মালিকদের কাছে গতবারের পাওনার ১২ আনাই বাকি রয়েছে। ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরের বায়নায় মালিকরা দীর্ঘ প্রায় চারবছর ধরে এই ব্যবসাকে রুগ্ন করে রেখেছেন। এমন অবস্থায় আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি’।
তিনি বলেন, ‘আমরা লবণ দিয়ে মাস দুয়েক চামড়া ঘরে রাখতে পারি। কিন্তু ট্যানারিমালিকরা যদি তা না গ্রহণ করে, তাহলে আরও বিপর্যের মধ্যে পড়তে হবে’।
বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, ‘গত ৩/৪বছর ধরে ব্যবসায় মন্দাভাব চলছে। ট্যানারি মালিকদের কাছে আমাদের অনেক পাওনা রয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে আমাদের অনুরোধ, আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে আমাদের চামড়ার চাহিদা ছিল, সেখানে লবিং করা। এছাড়া নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করার প্রতিও নজর দেয়া হোক। দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়া হলে চামড়ার এই বাজার আমরা হারাবো। যার ফলে এই অঞ্চলের হাজার হাজার যুবক বেকার হয়ে যাবে’।