gramerkagoj
শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ৫ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj

❒ যশোরে সাড়ে ছয় লাখ পাঠ্যপুস্তক বিতরণ

নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মাতোয়ারা শিক্ষার্থীরা
প্রকাশ : মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারি , ২০২৪, ১২:০১:০০ এ এম , আপডেট : মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল , ২০২৪, ১০:৪৩:০৫ পিএম
এম. আইউব:
GK_2024-01-01_6592e0ee9c662.jpg

নতুন বছরের প্রথম দিন। অনেকেই ‘শুভ নববর্ষ’ বলতে যখন ব্যস্ত; ঠিক সেই সময় নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিতে শিক্ষার্থীদের গন্তব্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। নিজ নিজ বিদ্যালয়ের পোশাক পরে নির্দিষ্ট সময়ের আগে পৌঁছানোর প্রতিযোগিতা ছিল কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। এসব শিক্ষার্থীর কারো কারো ধারণা ছিল, ‘আগে না গেলে বই পাওয়া যাবে না।’ এ কারণে আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতাও ছিল। যদিও প্রাথমিক স্তরের চাহিদার সব বই ইতিমধ্যে যশোরে পৌঁছে গেছে। আর মাধ্যমিক স্তরের বই পৌঁছেছে চাহিদার ৭০.০৪ শতাংশ। সবমিলিয়ে জেলায় নতুন বছরের প্রথম দিন ৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৮৫ জন শিক্ষার্থী বই উৎসবে মাতে।
যশোর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, জেলার আট উপজেলায় মোট বইয়ের চাহিদা ছিল ৫১ লাখ ৫০ হাজার ৫ কপি। এরমধ্যে পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত পৌঁছেছে ৪০ লাখ ৮ হাজার ২৩৫ কপি। তার মধ্যে প্রাথমিক স্তরের ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫৫১ ও মাধ্যমিক স্তরের ২৬ লাখ ৬৮ হাজার ৬৮৪ কপি রয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, অভয়নগরে প্রাকপ্রাথমিকে আমার বই ৪ হাজার ২৬০, অনুশীলন ৪ হাজার ২৬০, প্রথম শ্রেণিতে ১৪ হাজার ৯৪, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৪ হাজার ২৯৫, তৃতীয় শ্রেণিতে ২৮ হাজার ৯৩২, চতুর্থ শ্রেণিতে ২৮ হাজার ১২৮ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ২৫ হাজার ৫০৬ কপি বইয়ের চাহিদা ছিল। চাহিদা পুরোটায় বই উৎসবের আগেই পৌঁছেছে।
একইভাবে কেশবপুরে প্রাকপ্রাথমিকের আমার বই ৪ হাজার ৮১৫, অনুশীলন ৪ হাজার ৮১৫, প্রথম শ্রেণিতে ১৫ হাজার ৯০, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৫ হাজার ২৪০, তৃতীয় শ্রেণিতে ২৮ হাজার ৭৭০, চতুর্থ শ্রেণিতে ২৮ হাজার ৩২০ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ২৬ হাজার ৩১০ কপি, চৌগাছায় প্রাকপ্রাথমিকের আমার বই ৪ হাজার ১৭০, অনুশীলন ৪ হাজার ১৭০, প্রথম শ্রেণিতে ১৫ হাজার ২১৩, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৫ হাজার ১৪১, তৃতীয় শ্রেণিতে ২৯ হাজার ৯৪, চতুর্থ শ্রেণিতে ২৬ হাজার ৭০০ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ২৪ হাজার ৪৫০ কপি, ঝিকরগাছায় প্রাকপ্রাথমিকের আমার বই ৬ হাজার ৯০, অনুশীলন ৬ হাজার ৯০, প্রথম শ্রেণিতে ২০ হাজার ২২০, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৯ হাজার ৩৩৫, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩৭ হাজার ৯২০, চতুর্থ শ্রেণিতে ৩৫ হাজার ৫২০ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৩৫ হাজার ২৮০ কপি, বাঘারপাড়ায় প্রাকপ্রাথমিকের আমার বই ২ হাজার ৮৫০, অনুশীলন ২ হাজার ৮৫০, প্রথম শ্রেণিতে ১২ হাজার ৭৫০, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১২ হাজার ৩০০, তৃতীয় শ্রেণিতে ২২ হাজার ২০০, চতুর্থ শ্রেণিতে ২১ হাজার পঞ্চম শ্রেণিতে ১৯ হাজার ২০০ কপি, মণিরামপুরে প্রাকপ্রাথমিকের আমার বই ৮ হাজার ৪০০, অনুশীলন ৮ হাজার ৪০০, প্রথম শ্রেণিতে ২৮ হাজার ২৩০, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২৬ হাজার ৬২৮, তৃতীয় শ্রেণিতে ৫২ হাজার ৮০, চতুর্থ শ্রেণিতে ৫০ হাজার ৪০ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৪৪ হাজার ৭০০ কপি, শার্শায় প্রাকপ্রাথমিকের আমার বই ৮ হাজার ৬১, অনুশীলন ৮ হাজার ৬১, প্রথম শ্রেণিতে ২৪ হাজার ৫২৫, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২৪ হাজার ৪৫০, তৃতীয় শ্রেণিতে ৪৮ হাজার ১২০, চতুর্থ শ্রেণিতে ৪৫ হাজার ৬০০ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৩৭ হাজার ২০০ কপি এবং সদর উপজেলায় প্রাকপ্রাথমিকে আমার বই ১৩ হাজার ৯০, অনুশীলন ১৩ হাজার ৯০, প্রথম শ্রেণিতে ৫০ হাজার ৭০০, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৪৯ হাজার ৫০০, তৃতীয় শ্রেণিতে ৯৯ হাজার ৬৬০, চতুর্থ শ্রেণিতে ৯৭ হাজার ৬২০ ও পঞ্চম শ্রেণির ৮৯ হাজার ৪৯০ কপি বইয়ের চাহিদা ছিল। চাহিদার পুরোটায় যশোরে এসেছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোফাজ্জেল হোসেন খান। বই উৎসবের দিন অধিকাংশ বিতরণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এছাড়া, মাধ্যমিক পর্যায়ে অভয়নগরে ৪ লাখ ১৬ হাজার ২০, কেশবপুরে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৮৫, চৌগাছায় ৩ লাখ ৫ হাজার ৯৭৭, ঝিকরগাছায় ৩ লাখ ৫১ হাজার ৫১৫, বাঘারপাড়ায় ২ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩০, মণিরামপুরে ৫ লাখ ৮২ হাজার ৭৫৭, সদরে ৯ লাখ ৮১ হাজার ৬০ ও শার্শায় ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬০ কপি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। এছাড়া, ইংলিশ ও ভোকেশনালে চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৫০। পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত যশোরে চাহিদার ৭০.০৪ শতাংশ বই এসেছে বলে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন।
শিক্ষা অফিসের তথ্যানুযায়ী, এবতেদায়ী থেকে দাখিল এবং মাধ্যমিক পর্যায় মিলে জেলায় মোট বইয়ের চাহিদা ছিল ৩৮ লাখ ১০ হাজার ৪৫৪ কপি। এ পর্যন্ত এসেছে ২৬ লাখ ৬৮ হাজার ৬৮৪ কপি।
নতুন বই পেয়ে পরম মমতায় অতি যত্নে বাড়ি নিয়ে যায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০ টা এবং এর কিছু পরে যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও জিলা স্কুলে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার।
সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) খালেদা খাতুন রেখা ও জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারায়ন চন্দ্র দেবনাথের সভাপতিত্বে এ সময় বক্তৃতা করেন সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলাম। পরিচালনা করেন সিনিয়র শিক্ষক আহসান হাবীব পারভেজ।
জিলা স্কুলের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) খালেদা খাতুন রেখা ও জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন। সভাপতিত্ব করেন প্রধান শিক্ষক শোয়াইব হোসেন।
যশোর বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডক্টর আহসান হাবীব। পরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিদ্যালয়ের সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) খালেদা খাতুন রেখার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডক্টর আহসান হাবীব। বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রাবনী সুরের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন গ্রামের কাগজ সম্পাদক মবিনুল ইসলম মবিন ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তি দীপংকর দাস রতন।
কালেক্টরেট স্কুলে প্রধান অতিথি হিসেবে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার।
পুলিশ লাইন স্কুলে প্রধান অতিথি হিসেবে বই বিতরণ করেন পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার। এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরে আলম সিদ্দিকী, স্কুলের পরিচালক আব্দুল আজিজ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনোতোষ কুমার নন্দী প্রমুখ।
এমএসটিপি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে প্রধান অতিথি হিসেবে বই বিতরণ করেন স্থানীয় সরকার বিভাগ যশোরের উপপরিচালক রফিুকল হাসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন ও দাতা সদস্য মিজানুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ খায়রুল আনাম।
সেবাসংঘ বালিকা বিদ্যালয়ে বই বিতরণ উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমান আব্দার ও বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি শেখ জাহিদুর রহমান লাবু।
নিউটাউন বাদশাহ ফয়সল ইসলামী ইনস্টিটিউটে প্রধান অতিথি হিসেবে বই বিতরণ করেন বিদ্যালয়ের সভাপতি উপশহর ইউপি চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু। প্রধান শিক্ষক এসএম রবিউল আলমের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন দাতা সদস্য সৈয়দ মুনসুর আলম ও সহকারী প্রধান শিক্ষক আবু ইমরান গাজী।
নিউটাউন বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বই বিতরণ করেন বিদ্যালয়ের সভাপতি উপশহর ইউপি চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু। প্রধান শিক্ষক সুরাইয়া শিরিনের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন দাতা সদস্য সৈয়দ মুনসুর আলম, বিদ্যোৎসাহী সদস্য আসাদুজ্জামান পাভেলসহ শিক্ষকবৃন্দ। পরিচালনা করেন সহকারী শিক্ষক পারভীন আক্তার রুমি।
যশোর মিউনিসিপ্যাল প্রিপারেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বই বিতরণ করেন পৌরমেয়র হায়দার গনি খান পলাশ। বিশেষ অতিথি ছিলেন পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাছির ও পৌর কাউন্সিলর রাজিবুল আলম। সভাপতিত্ব করেন প্রধান শিক্ষক আব্দুস সবুর খান।
একইদিন আল মাহা ইন্টারন্যাশনাল মডেল একাডেমি যশোরে বই উৎসব উদযাপিত হয়। সোমবার সকালে জাকজমকপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে একাডেমি প্রাঙ্গণে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। পরে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। সভায় আল মাহা ইন্টারন্যাশনাল মডেল একাডেমির চেয়ারম্যান মাহদী হাসানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন অধ্যক্ষ ডক্টর মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন নবজীবন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যক্ষ রেজাউল করিম। সভা শেষে শিক্ষার্থীদের নতুন বই প্রদান করা হয়।

আরও খবর

🔝