gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০
gramerkagoj

❒ স্কুলের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ

দেলুয়াবাড়ি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জনের
প্রকাশ : রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর , ২০২৩, ০৯:৫৪:০০ পিএম , আপডেট : বুধবার, ২৭ মার্চ , ২০২৪, ০২:১২:১২ পিএম
শিমুল ভূইয়া:
GK_2023-12-31_65918faf3e740.jpg

স্কুল যেন তার নিজের সম্পত্তি। প্রতিষ্ঠানকে পুঁজি করে যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছেন। হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে অনুদানের প্রায় চার লাখ টাকা হজম করে ফেলেছেন। এসব অপকর্ম করছেন মণিরামপুর উপজেলার দেলুয়াবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জন রায়। তিনি টাকা ছাড়া কিছুই চেনেন না। কেবল স্কুলের টাকা না, ওই প্রতিষ্ঠানের জন্মগত প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অনুদানের টাকাও হজম করেছেন। যা গ্রামের কাগজের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। শুধু কী তাই, তিনি নিয়মিত স্কুলেও আসেন না। এমনকি হাজিরা খাতাও আটকে রাখার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি আসেন কেবল ছুটির দিনে। ওই প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষককে যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মামলাও হয়েছে।
এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে গত ১২ ডিসেম্বর বেলা ১১ টায় গ্রামের কাগজ টিম যায় দেলুয়াবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষকের কক্ষ তালাবদ্ধ। জানা যায় তিনি দীর্ঘদিন ধরেই স্কুলে অনুপস্থিত। শিক্ষক কর্মচারীদের হাজিরা খাতাও আটকে রেখেছেন। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে হাজির করা হয় সেই হাজিরা খাতা। এরপর তিনদিনের স্বাক্ষর একসাথে করেন শিক্ষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ১৯ জুন এ প্রতিষ্ঠানে পিবিজিএসআই অনুদান আসে পাঁচ লাখ টাকা। যার মধ্যে ছিল সুবিধা বঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য একলাখ ২৫ হাজার টাকা। খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, ওই স্কুলে আরিফুল ইসলাম, রিফাত হোসেন ও আছমা নামে তিনজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছে। কথা হয় ওইসব শিক্ষার্থী ও তাদের স্বজনদের সাথে। তারা জানান, প্রধান শিক্ষক তাদের কাছ থেকে সব কাগজপত্র নিয়েছেন। কিন্তু একটি টাকাও দেননি। আজ না কাল বলে ঘোরাচ্ছেন তিনি।
এছাড়া বইপত্র কেনা ও গবেষণাগারের জন্য দেড়লাখ টাকা অনুদান আসলেও তার ছিটেফোটাও দেয়া হয়নি প্রতিষ্ঠানকে। দেখা যায় লাইব্রেরিতে যেসব বই আছে তার সবই মান্ধাতা আমলের। এ বিষয়ে কথা হয় লাইব্রেরির দায়িত্বে থাকা শিক্ষক সালেহা খাতুনের সাথে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এ দায়িত্বে রয়েছেন। লাইব্রেরিতে কোনো নতুন বই কেনা হয়নি। যা আছে সবই রেজিস্ট্রারভুক্ত।
এছাড়া, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা ও শৌচাগার সংস্কার এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য চলতি বছর আসে এক লাখ ২৫ হাজার টাকার অনুদান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দু’টি পানির ফিল্টার আর কয়েক বস্তা সিমেন্ট কিনেই সেই টাকা হজম করেছেন প্রধান শিক্ষক। অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করেছেন স্কুলেরই পুরাতন ইট আর স্টিলের দরজা। এ অভিযোগ করেন অন্তত পাঁচ-সাতজন শিক্ষক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রধান শিক্ষকের ঘনিষ্ঠজন হচ্ছেন সিনিয়র শিক্ষক প্রভাষ চন্দ্র রায়। তার এসব অনৈতিক কাজে সহযোগিতা করেন অফিস সহায়ক জাহিদুল ইসলাম। তাদের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তারা প্রধান শিক্ষক জানে বলে মন্তব্য করেন। এসময় প্রধান শিক্ষক নিহার রঞ্জনের অফিসিয়াল ও ব্যক্তিগত দু’টি মোবাইল ফোন নম্বরে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
অন্যদিকে,বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ভোজগাতী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনিছুর রহমান তজু বলেন, তিনি রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত থাকেন ওই সব তার দেখার সময় নেই। সব জানে রঞ্জন নিজেই।
স্থানীয়রা জানান, তার কাছ থেকে টাকা ছাড়া কোনো সেবাই পাওয়া যায় না। সার্টিফিকেট নিতে হলেও মোটা অংকের টাকা দিতে হয়। এসব কারণে দিনের পর দিন ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, অভিভাবকেরা একাধিক অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। সম্প্রতি প্রতিবন্ধী রিফাতের বাবা লাভলু ও আরিফুলের বাবা আসাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির ঘনিষ্টজন হওয়ায় তিনি বুক ফুলিয়ে নানা ধরনের অনিয়ম করে যাচ্ছেন।

আরও খবর

🔝