gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০
gramerkagoj
দশমিনায় বোরো বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

❒ আজাহার ভান্ডারীর টিপে আবাদ

প্রকাশ : মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি , ২০২১, ০৬:৪৫:৪৯ পিএম
দশমিনা (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা::
1614084665.jpg
বৃদ্ধাঙ্গুলী টিপে টিপে জমি আবাদ করছেন ষাটোর্ধ কৃষক। ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা সাড়ে ১১টা। মৃদু হিমেল হাওয়ায় কাঁচা হলুদ রঙের মিষ্টি রোদ্দুর পীঠে ফেলে আরাম নিচ্ছেন মনে হলেও কাছে যেতেই দেখা যায় তাঁর চোখে মুখে কষ্টের অভিব্যক্তি। মাথায় কোমরে লালসালু পেঁচানো, সোয়েটার ও লুঙ্গি পরনে লোকটির মুখভরা সাদা দাড়ি। আবাদ সংকল্প দেখে মনে হয় এমন পরিশ্রমি কৃষকদের জন্যই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষিতে সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে তাঁরা। সরেজমিনে কথা কথা হয় তাঁর এ সংবাদকর্মী’র সাথে।পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলা দক্ষিণ দাসপাড়া গ্রামের আজাহার ভান্ডারী। মাউজভান্ডার শরীফের মুরিদ আজাহার ভান্ডারী, স্ত্রী, ৪ কন্যা ও ১ ছেলে নিয়ে ৭ জনের পরিবার তাঁর। বাপ-দাদার সূত্রধরে পাওয়া পেশাজীবি কৃষক তিনি। তাঁর এ গ্রামেই উফসী বোরো চাষাবাদে পানির অভাব ঘটনায় গত রবিবার মানববন্ধন করেছে স্থানীয় কৃষকরা। বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিকে খবর ছড়িয়ে পরে এ খবর। ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা উত্তর বাঁশবাড়িয়া হাজিরহাট এলাকায় ব্রীজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বগী খালে বাঁধ দেয়। জোয়ার-ভাটা ব্যহত হওয়ায় পানিশূণ্য হয়ে পরে কৃষি জমি। মাটির জো শেষ হয়ে আসার শেষ সম্ভাবনাটুকু হারাতে চায়নি কৃষক আজাহার ভান্ডারী। তিনি জানায়, ‘খড়ার শ্যাষে বইন্নার পানি জমছিল জমিতে। পানি নামার পর রোয়ার জো গ্যাছি¹া। ধান ওডার পর দাম ভাল দেইক্কা সব বেইচ্চা দিছি। এহন ঘরে চাউল নাই। বোরো রুইয়ে ধান কামাই করমুই। বউ গুরাগারা লইয়া বচ্ছর চলতে ফলাইতেই অইবে। কি আর করমু পানির লাই¹া রোওনের জোবা হারাইয়া লাভ কি! বুড়া আঙ্গুল দিয়ে গত কর্ইরা বীজ ঢুকাই, বালতির পানি দিয়া টিপ্পা টিপ্পা লাগাই।’ এ বছর ওই গ্রামের ৩৫ কৃষক ২৬ একর উফসী বোরো-৮৯ চাষাবাদ করছে। আজাহার ভান্ডারীর আওতায় এই ব্লকে ৭০ শতাংশ। মোক্ষম সময়ে খালে বাঁধ জনিত ঘটনায় ব্লকে পানি তোলা বন্ধ হয়ে যায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আল-আমিন’র প্রচেষ্টায় খালের বাঁধ স্থলে পানি চলাচলের জন্য অস্থায়ী কালভার্ট নির্মাণ করে ব্রীজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বিধিবাম ডালিজোবা (মরাকাটাল) সময়ে জোয়ারের পানি পৌঁছায় না এ গ্রামে। আজাহার ভান্ডারীর মতো সংকল্পিত কৃষকরা উপজেলার উত্তর বাঁশবাড়িয়া, মধ্য বাঁশবাড়িয়া, গছানী, ঢনঢনিয়া, চরহোসনাবাদ, নেহালগঞ্জ, আদমপুর, বহরমপুর, বগুরা, দশমিনা, হাজিকান্দা, গোলখালী, আরজবেগী, সৈয়দজাফর, লক্ষীপুর, নিজাবাদ, গোপালদী, বেতাগী, সানকিপুর, জাফ্রাবাদ, মাছুয়াখালী, আলীপুর, যৌতা, খলিশাখালী, চাঁদপুরা, রণগোপালদী, আউনিয়াপুর, গুলি, চরঘুনি, চরবোরহান, চরশাহজালাল, চরহাদি গ্রামে এ বছর উফসী বোরো-৮৯ আবাদ করছে। সবচেয়ে বড় ব্লক উত্তর বাঁশবাড়িয়ার সভাপতি নুর জামাল গাজী জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর বেশি জমিতে উফসী বোরো-৮৯ আবাদ করছি আমরা। ব্লকের ৫০ কৃষক মিলে প্রায় দেড়’শ একর জমির চাষাবাদ সম্পন্ন করেছি ইতিমধ্যে। আশানুরূপ ফলন পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ জাফর আহম্মেদ বলেন, এ বছর ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে উফসী বোরো-৮৯ আবাদ করছে উপজেলার কৃষকরা। আশানুরূপ ফলন পেতে উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করছি। ফসলের যতœ নেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে কৃষকদের। 

আরও খবর

🔝