gramerkagoj
শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ৬ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
ঝুঁকিতে কোটি কোটি টাকার পণ্য

❒ যশোরে খোলা আকাশের নিচে চলছে আনলোড

প্রকাশ : শুক্রবার, ২৪ সেপ্টেম্বর , ২০২১, ১১:৩১:৪৭ পিএম
সরোয়ার হোসেন:
1632504757.jpg
প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার আমদানি পণ্য খালাস হচ্ছে যশোরে। কিন্তু, দামি ও গুরুত্বপূর্ণ এই পণ্যের নেই কোনো নিরাপত্তা। খোলা আকাশের নিচে খালাস হচ্ছে পণ্যগুলো। যা ঝড়, বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। যারা পণ্য খালাসে কাজ করছেন সেই শ্রমিকরাও নানা দুর্ভোগ আর বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। এভাবেই চলছে সোয়া এক বছর।করোনা মহামারি শুরুর পর গত বছরের ২৩ এপ্রিল থেকে মালবাহী ট্রেনে বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু, বেনাপোল রেলস্টেশনে কোনো ইয়ার্ড বা পণ্য খালাসের জায়গা নেই। সেজন্য বন্দরে কাস্টমসের ছাড়পত্র নিয়ে পণ্যবাহী ট্রেন চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। সেখানে খালাস করে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে আমদানিকারকদের ঠিকানায়। যার একটি অংশ খালাস হচ্ছে যশোর রেলস্টেশন এলাকায়। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে যশোর রেলস্টেশন এলাকায় প্রতিমাসে গড়ে ৪০ থেকে ৬০ র‌্যাক আমদানি পণ্য খালাস হয়। প্রতি র‌্যাকে কমপক্ষে ৪০টি এবং সর্বোচ্চ ৬০টি কন্টেইনার থাকে। প্রতি র‌্যাকে পণ্য থাকে দেড় থেকে দুই কোটি টাকার।মেসার্স সারথী এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ-ভারত চেম্বারের সভাপতি মতিয়ার রহমান জানান, ভারত থেকে আমদানি পণ্যের মধ্যে ধানবিজ, ভুট্টাবিজ, সোডাসহ কারখানার বিভিন্ন কাঁচামাল যশোরে খালাস করা হয়। এসব পণ্য আনলোড করতে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন। কোনো ইয়ার্ড বা শেড না থাকায় পণ্যগুলো ঝুঁকি নিয়েই খালাস করা হয়। শ্রমিকেরাও পর্যাপ্ত সুবিধা না পেয়ে নাজেহাল হচ্ছেন।  শুক্রবার সরেজমিনে যশোর রেলস্টেশনে যেয়ে প্লাটফর্মের দক্ষিণ পাশে অবস্থানরত কন্টেইনার থেকে পণ্য আনলোড করতে দেখা যায় শ্রমিকদের। এসব পণ্য ট্রাকে তুলে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। প্রচন্ড গরমের মধ্যে কাজ করাতে ঘেমে একাকার হয়ে গেছেন তারা। অনেককে স্যালাইন গুলিয়ে পান করতে দেখা যায়।সিএন্ডএফ এজেন্ট সূচি এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী কাজী শাহজাহান সবুজ গ্রামের কাগজকে জানান, তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে আনা পাঁচশ’ ২০ মেট্রিকটন সোডা ছাড় করিয়েছে। এগুলো কন্টেইনার থেকে আনলোড করে ট্রাকে বগুড়ায় নিয়ে যাওয়ার কাজ চলছে। তিনি সমস্যার উল্লেখ করে বলেন, ‘আনলোড পয়েন্টে ট্রাক ঢোকার জায়গা কম। কাঁচা রাস্তা ইতিমধ্যে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ট্রাক আসা-যাওয়ার সময় রাস্তা দেবে যাচ্ছে। এখানে কোনো ওয়েস্কেল না থাকায় পণ্যর ওজনও করা যাচ্ছেনা। নেই কোনো টিনশেড। খোলা আকাশের নিচে ভয়ে ভয়েই পণ্যগুলো খালাস করতে হয়’।মাসুম, ইমরান, রাসুসহ কর্মরত কয়েকজন শ্রমিক বলেন, সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত হয়ে গেলেও কোনো জায়গায় বিশ্রাম নিতে পারেন না। পানি খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। বাথরুমের জন্যে ছুটতে হয় স্টেশনে। সামান্য চা খাওয়ার জন্যেও বাইরে যাওয়া লাগে অথবা পানির বোতলে করে এনে ঠান্ডা চা খাওয়া লাগে। এতে সময়ের অনেক অপচয় হয়। সব মিলয়ে খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা।যশোর রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (কার্য) চাঁদ আহম্মেদ গ্রামের কাগজকে বলেন, প্রায় দুই মাস আগে যশোর রেলওয়ের ইয়ার্ড তৈরির জন্য প্রায় সোয়া এক কোটি টাকার কাজ শুরু হয়েছে। এর আওতায় এখানে পণ্য আনলোড করার জন্য প্লাটফর্ম তৈরি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার আশা করছেন তিনি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ঢাকার কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ এ কাজ করছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করা হবে বলে জানান তিনি।বেনাপোলের স্টেশন মাস্টার সাঈদুর রহমান বলেন, শ্রমিকের মজুরি কম, সময় অল্প লাগে এবং পণ্যগুলো ট্রাকে দেশের অন্যান্য স্থানে সহজে নিয়ে যাওয়া যায় বলে পণ্য খালাসের স্থান হিসেবে যশোরের চাহিদা বেশি।বাংলাদেশ-ভারত চেম্বারের সভাপতি মতিয়ার রহমানের দাবি সোয়া এক বছরে সরকার প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা আয় করেছে। যশোরে পণ্য আনলোড করার কারণে ব্যবসায়ীদের টাকা ও সময়ের সাশ্রয় হচ্ছে। ফলে এখানে মানসম্পন্ন রেলওয়ে ইয়ার্ড নির্মাণ করা গেলে এবং পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এটা হতে পারে সাধারণ মানুষের রোজগারের ক্ষেত্র। এজন্য তিনি পরিপূর্ণ একটি শেড নির্মাণের দাবি জানান। এদিকে, রেলওয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, গুডইয়ার্ড না থাকার কারণে চলমান রেললাইন (যেগুলো দিয়ে নিয়মিত রেল চলাচল করে) ব্লক করে অনেক সময় পণ্য আনলোড করা হয় এখানে। এতে ট্রেনের স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হয়। ইয়ার্ড করার জন্য যশোরে পর্যাপ্ত জায়গা আছে। তবে, যে কাজ চলমান তা খুবই সীমিত। একটি পরিপূর্ণ ইয়ার্ড নির্মাণে বৃহৎ অর্থ ও পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে বলেও তারা মনে করেন। পাশাপাশি যশোর রেলস্টেশনেরও অবকাঠামোগত আরও উন্নতির কথা বলেন তারা।প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় সভায় ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে ট্রান্সপোর্ট হিসেবে রেলকে বেছে নেয়ার জন্য আমদানিকারকদেরকে উৎসাহিত করা হয়। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দুই দেশের সরকার ও চেম্বার নেতৃবৃন্দকেও দেয়া হয়।

আরও খবর

🔝