gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
সাতক্ষীরায় নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর, নলকূপেও নেই পানি
প্রকাশ : রবিবার, ২৪ এপ্রিল , ২০২২, ০৭:৪৯:৫০ পিএম
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
1650808211.jpg
খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে সাতক্ষীরায়। গত আড়াই মাসে সেভাবে বৃষ্টি না হওয়ায় ভূ-উপরিস্থ পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে। তীব্র খরা, বৃষ্টি হীনতা ও পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার জনজীবনে হাঁসফাঁস তৈরি হয়েছে।সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান সময়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সাতশ’ ফুট পর্যন্ত নেমে গেছে। তবে স্থান বিশেষে তা পাঁচশ’ ফুট পর্যন্ত রয়েছে। ফলে জেলার ২৫ হাজার সরকারি টিউব অয়েলে পানি উঠছে না। এ ছাড়া পারিবারিকভাবে বসানো হাজার হাজার নলকূপেও পানি নেই। এমনকি সেচের পানি উত্তোলনও বাধার মুখে পড়ছে।এদিকে সাতক্ষীরা পৌর এলাকায় গ্রাহকদের বাড়িতে পানি সরবরাহ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কিছু এলাকায় পানি গেলেও শহরের বেশির ভাগ এলাকায় পৌরসভার পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব এলাকায় মানুষ ১২০০ ফুটেরও বেশি গভীর নলকূপ বসিয়ে নিজ নিজ পরিবারের পানির চাহিদা মেটাচ্ছেন।জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুল ইসলাম জানান, জেলার ২৫ লাখ জনগোষ্ঠীর ৮৫ শতাংশ মানুষের খাবার পানি সরবরাহ করার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। কিন্তু পানির স্তর নেমে যাওয়ায় মানুষ খাবার পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।সরকারিভাবে জেলায় ১১৫টি পিএসএফ (পন্ড স্যান্ড ফিল্টার) বসানো রয়েছে। ভূ উপরিস্থ পানি নিয়ে তা শোধনের মাধ্যমে পরিবারগুলিতে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। অথচ ভূ উপরিস্থ এসব পানিও এখন অনেক কমে গেছে। ফলে কোনো কোনো জায়গায় পিএসএফ যথাযথভাবে কাজ করতে পারছে না।তিনি জানান, বেসরকারি পর্যায়ে সাতক্ষীরার কয়েকটি এনজিও বিভিন্ন স্থানে এসব পিএসএফ বসিয়েছে। সেখানেও দেখা দিয়েছে একই সংকট।জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ আরও জানিয়েছে, বৃষ্টি না হওয়ায় পানি যেমন অনেক নিচে নেমে গেছে তেমনি পানিতে লবণাক্ততাও মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী পানিতে সর্বোচ্চ ২৬০০ এমজি পার লিটার লবণাক্ততা পাওয়া গেছে।উপকূলীয় এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা ১০০০ এমজি পার লিটার। তবে দেশের অন্যান্য এলাকায় এই পানির গ্রহণযোগ্যতা সর্বোচ্চ ৬০০ এমজি পার লিটার। পানিতে অতিমাত্রায় লবণাক্ততার কারণে উপকূলের লোকজন মিষ্টি পানির খোঁজে অনেক দূর ছুটছে। কিন্তু কোথাও পানি পাচ্ছে না।এ ছাড়া শ্যামনগর, আশাশুনি এবং কয়রা এলাকাজুড়ে গ্রামবাসী বৃষ্টির পানি ধরে রেখে সারা বছর তা পান করে থাকেন। এবার সেসব পানিতে এরই মধ্যে গ্যাস এবং পোকা দেখা দিয়েছে। ফলে সে পানিও তারা খেতে পারছেন না।এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের জেলা পরিষদের ৫৭টি সরকারি পুকুর এবং কোন কোন স্থানের বেসরকারি পর্যায়ের পুকুরে পানি রিজার্ভ করে তা গ্রামবাসী খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করছেন। এই সব পুকুরে গবাদিপশু নামতে দেওয়া হয় না। এমনকি থালাবাসন ধোয়া ও গোসল করাও নিষিদ্ধ। কেবলমাত্র পানি তুলে নিয়ে তা ঘরে ঘরে শোধন করে ব্যবহার করা হচ্ছে। পানি সংকটের এই সুযোগে শহর ও গ্রামাঞ্চলের বেশ কিছু পানি ব্যবসায়ী শোধনাগার প্ল্যান্ট বসিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে তা বিক্রি করছেন। এই পানি সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এমন অবস্থায় সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় জেলাগুলির কয়েক লাখ মানুষ তীব্র পানির সংকটের মুখে পড়েছে। তবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্মকর্তারা জানান, বৃষ্টি নামলে এ অবস্থার উন্নতি হতে পারে।

আরও খবর

🔝