gramerkagoj
মঙ্গলবার ● ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১০ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
অস্বাভাবিক তাপে পুড়ছে মানুষ, প্রকৃতি

❒ যশোরে ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস

প্রকাশ : সোমবার, ২৫ এপ্রিল , ২০২২, ১২:০৮:৩৬ এ এম
সরোয়ার হোসেন:
1650823798.jpg
দিন যত গড়িয়েছে সূর্যের দাপট হয়েছে প্রখর। রোববারের পরিস্থিতি ছিল চরম অসহনীয়। প্রচন্ড গরমে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। গরমের প্রভাবে রোববার দিনের অধিকাংশ সময়ই শহর ছিল ফাঁকা। বিপনি বিতানগুলোতে মানুষের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। বাইরের মানুষ আর প্রকৃতি প্রখর তাপে হয়েছে সিদ্ধ। আবহাওয়ার যে পূর্বাভাস তাতে আগামী ৭২ ঘণ্টায় তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এরূপ পরিস্থিতিতে বাইরে সাবধানতার সাথে চলাচলের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তা না হলে পানিশূন্যতা থেকে ডায়রিয়া জন্ডিস হওয়ার আশংকা রয়েছে। এমনকী হিটস্ট্রোকেও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির কথা বলা হচ্ছে।তাপমাত্রার এই বিরূপ পরিস্থিতিতে রোববার সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম অস্বস্তি দেখা গেছে। সপ্তাহের প্রথম দিন হলেও শহরে মানুষের উপস্থিতি তেমন একটা লক্ষ্য করা যায়নি। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপস্থিতি থাকলেও প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হয়নি। বাজারেও একই অবস্থা দেখা গেছে। রাস্তা এড়িয়ে শহরে অবস্থানকারীরা কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করেছেন। সড়কগুলোর অবস্থা ছিল প্রায় ফাঁকা। রিকশা-ইজিবাইকগুলোতে যাত্রী ছিল কম। আবহাওয়া অফিসের ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাস থেকে জানা যায়, দেশের কয়েকটি এলাকার সাথে খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। আবহাওয়ার ওই পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে দিনের তাপমাত্রা এক থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। বাড়তে পারে রাতের তাপমাত্রাও।  আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববার তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪১ ডিগ্রিতে। এটিই ছিল রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। যশোর বিমান বন্দর আবাওয়া অফিস থেকে রোববার বিকেল পৌনে তিনটার দিকে জানা যায়, ওই মুহূর্তে যশোরে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ছিল তাপমাত্রা। সন্ধ্যা ৬টায় এই তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত এই তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে। এদিকে, গরমের প্রভাবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন মানুষ। আর কয়েকদিন পর পবিত্র ঈদ উল ফিতর। স্বাভাবিকভাবেই এই সময়টিতে ঈদের কেনাকাটায় সরগরম থাকে বাজারঘাট। তার ওপর টানা দুই বছর করোনার প্রভাব কাটিয়ে সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসায় ব্যবসায়ীরাও আশাবাদী ছিলেন এবার কেনাকাটা বেশ জমবে। কিন্তু, টানা অস্বাভাবিক গরমের প্রভাবে সেটি হচ্ছে না বলেই জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।রোববার বিকেল ৩টার দিকে যশোর সিটি প্লাজা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি শফিকুর আজাদ গ্রামের কাগজকে বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) কেনাবেচা বেশ ভালো হয়েছে। আজ (রোববার) খুবই খারাপ অবস্থা। মার্কেটে কাস্টমার অস্বাভাবিক কম। গরমের কারণে মানুষ বাইরে বের হতে চাচ্ছে না’।যশোর জজকোর্ট মার্কেটের তাফরিয়া ফ্যাশানের সত্ত্বাধিকারী শাহাদৎ হোসেন গ্রামের কাগজকে বলেন, ‘শুক্র ও শনি দুই দিন মার্কেটে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। জজকোর্ট মার্কেট, কালেক্টরেট কাটপিচ মার্কেট এবং পুরাতন কাপড়ের দোকানগুলোতে বিক্রিও হয়েছে বেশ ভালো। আজ (রোববার) এসব মার্কেট পুরো ফাঁকা। কাস্টমার নেই বললেই চলে। গরমের প্রভাব যদি আরও থাকে তাহলে ব্যবসার পরিস্থিতি করোনার থেকেও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে’।একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী রাকিব হাসান দাপ্তরিক কাজে দুপুর ২টার দিকে গিয়েছিলেন লালদিঘি এলাকায়। মাইকপট্টি হয়ে তিনি সেখানে যাওয়ার পথে রাস্তাঘাঁট প্রায় ফাঁকা দেখেছেন বলে গ্রামের কাগজকে বলেন। রাকিব বলেন, ‘শহরে যেসব মানুষ আছেন তারা কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই অবস্থান করছিলেন। রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়েনি। শহরে যানবাহনের উপস্থিতিও ছিল অস্বাভাবিকভাবে কম। পরিস্থিতি দেখে যে কারও ছুটির দিন মনে হতে পারে’!পালবাড়ি থেকে শহরের কেন্দ্রস্থলে আসা বেলাল হোসেনকে মনে হচ্ছিল কোনো যুদ্ধ জয় করে এসেছেন। সারা শরীর ভিজে একাকার। মুখের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছিল তিনি খুব ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। কারণ জিজ্ঞাসা করলে জানান, ‘বাধ্য না হলে এই সময় কেউ ঘরের বাইরে বের হয় না। বাইরে যে আগুন তাতে এক মিনিট কোথাও দাঁড়িয়ে থাকলে মানুষ পুড়ে সিদ্ধ হয়ে যাবে’।তীব্র গরমের প্রভাবে চিন্তার ভাজ পড়েছে রিকশাচালক ও ইজিবাইকারদের মধ্যে। আর মাত্র কয়েক দিন পর ঈদ। এই সময়ে বাড়তি রোজগার করে পরিবারের জন্য ঈদের কেনাকাটা করে থাকেন জানিয়ে রিকশাচালক ইকবাল মিয়া বলেন, ‘রাস্তায় বের হলিই পুড়ে যাচ্ছি। ভাড়াও নেই। যা দুই একটা পাওয়া যাচ্ছে তাতে আয়ের থেকে ব্যয় হচ্ছে বেশি। একটা খ্যাপ মাইরে দুকানে না খালি দ্বিতীয় ভাড়ার কথা চিন্তা করা যাচ্ছে না। একঘণ্টা-আধাঘণ্টা পর ছাড়া কোনো ভাড়াও পাওয়া যাচ্ছে না’।‘যা আয় হচ্ছে তাতে দিন চালানো দায়। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ঈদ শেষ’-বললেন ইকবাল মিয়া।যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক রাসেল গ্রামের কাগজকে বলেন, যে গরম পড়েছে তাতে মানুষ পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হতে পারেন। রয়েছে ডায়রিয়া, জন্ডিস এবং হিটস্ট্রোকের আশঙ্কা। তিনি বলেন, গরমের তীব্রতায় বিশেষ কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। বিশেষ করে পবিত্র মাহে রমজানের সময় এই সতর্কতা আরও বেশি নেয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা পেতে ঘন ঘন পানি খেতে হবে। রোজাদারেরা ইফতারের পর থেকে সেহেরী পর্যন্ত যতটুকু জেগে থাকবেন একটা নিয়মিত বিরতিতে পানি খেলে পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ডায়রিয়া এবং জন্ডিস থেকে রক্ষা পেতে ইফতারিতে ভাজাপোড়া, বিশেষ করে তেলেভাজা খাবার থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এসময় খেজুর এবং ফল-ফলাদি বেশি খাবার পরামর্শ দিয়ে ডাক্তার নাজমুস সাদিক বলেন, খেজুর খুব স্বাস্থ্যসম্মত একটা খাবার। এর গুণাগুণও থাকে দীর্ঘ সময়। গ্রীস্মকালীন ফল হিসেবে তরমুজ ও বাঙ্গি পানির চাহিদা পূরণে বেশ কার্যকর।   

আরও খবর

🔝