gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১২ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
নির্বাচনে কেউ না এলে সরকার চাপিয়ে দিতে পারে না

❒ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রকাশ : শুক্রবার, ৭ অক্টোবর , ২০২২, ১২:৫৬:২৭ এ এম
কাগজ ডেস্ক :
1665082637.jpg
আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ চাইলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কেউ না এলে সরকার কিছু চাপিয়ে দিতে পারে না।   বৃহস্পতিবার বিকেলে গণভবনে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।গত নির্বাচনের আগে বিএনপি ও সমমনাদের পাশাপাশি সব দলের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এবারও সেরকম চায়ের দাওয়াত দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, সেই প্রশ্ন একজন সাংবাদিক রেখেছিলেন।এ প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গতবার যে সবার সাথে বৈঠক করলাম, আলোচনা করলাম, এরপর নির্বাচনে দেখা গেল, ৩০০ সিটে ৭০০ নোমিনেশন দিয়ে যখন নিজেরা হেরে গেল, তখন সব দোষ কার? আমাদের।’তিনি বলেন, ‘রাজনীতি করতে হলে দলগুলো নিজেরা সিদ্ধান্ত নেবে। হ্যাঁ, আমি অবশ্যই চাই সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। কারণ এতদিন কাজ করার পর নিশ্চয় আমরা চাইব, সবাই নির্বাচনে আসুক।’প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘একেবারে সবাইকে লোকমা তুলে খাওয়ায় দিতে হবে, জিতিয়ে দিতে হবে, তবেই আসব- এটা তো হতে পারে না।’ সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়ে আসছে। মানবিক কারণে নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ সাময়িক আশ্রয় দিয়েছি।তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে সম্মানের সঙ্গে ও নিরাপদে তাদের নিজ দেশে ফিরতে পারে সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।এবার জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানোর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করার জন্য জাতিসংঘকে কার্যকর ও জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে রাশিয়া-ইউক্রেন বিরোধ নিরসনের আহ্বান জানানোর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ফলে সৃষ্ট খাদ্য ও জ্বালানি সঙ্কট এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তির জন্য অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে অধিক পারস্পরিক সংহতি প্রদর্শন করার প্রতি গুরুত্বারোপ করি। এসব সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা-নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট ও বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই। চলমান সঙ্কট নিরসনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শান্তি ও উন্নয়ন ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতির প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরি।জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র এবং রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে যোগদান উপলক্ষে লন্ডন সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে টানা ১৮ দিনের সফর শেষে ৩ অক্টোবর দিনগত রাত ১টার দিকে ঢাকায় ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।গত ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী। পরে ১৯ সেপ্টেম্বর লন্ডন সফর শেষে তিনি নিউইয়র্ক যান।  ২৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২ অক্টোবর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে রওয়ানা হয়ে লন্ডনে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি দিয়ে ৩ অক্টোবর দিনগত রাত ১টায় ঢাকায় ফেরেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করেছেন। র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রশ্নে তিনি বলেছেন যে, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো অন্যায় করলে বিচারের ব্যবস্থা আছে, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ব্যবস্থাই নেই। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিচারের ঊর্ধ্বে। শুধুমাত্র গণদাবীর মুখে একটি বিচার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, র‌্যাবের প্রশিক্ষণ দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাহলে তারা কি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন? তিনি বলেন যে, সন্ত্রাস দমনে যে বাহিনী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সেই বাহিনীর বিরুদ্ধে স্যাংশন দেয়া হয়েছে। তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসীদের পক্ষে?প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আফগানিস্তানে তারা ৪০ বছর শাসন করে তালেবানদের হাতে দেশ ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছে। ভিয়েতনামে তারা পরাজিত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তারা পাকিস্তানিদের সমর্থন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের ওপর নানারকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই বক্তব্য রেখে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তি যারা বিদেশে অবস্থান করছেন এরা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় কংগ্রেসম্যান এবং বিভিন্ন প্রতিনিধিদের কাছে মিথ্যা অপপ্রচার করছে। তিনি বলেন, যারা এই সমস্ত অপপ্রচারমূলক করছে তাদের সম্বন্ধে আপনার খোঁজখবর নিয়ে দেখুন এরা সবাই বাংলাদেশ থেকে কোনোরকম অপকর্ম করে বিদেশে গেছে। তাছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানরাও সেখানে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এ ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুমের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন যে, যে গুমের তালিকা তৈরি করা হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। তিনি ফরহাদ মাজহারের নাম উল্লেখ না করে তার খুলনায় আত্মগোপন করে এবং নিউমার্কেটে তাকে দেখার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। সাম্প্রতিক সময়ে একজন মায়ের গুম হওয়া প্রসঙ্গ গণমাধ্যম তুলে ধরেছে এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, বহু মানুষ স্বেচ্ছায় পালিয়ে থেকে নিজেদেরকে গুম বলে চালিয়ে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুমের তালিকায় ভারতীয় নাগরিকের থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন যে, এই তালিকা নিয়ে তারা এখন নিজেরাই বিব্রত কিনা সেটা দেখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে র‌্যাব এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেশের শান্তি এবং শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কঠোর অবস্থান সবসময় প্রস্তুত এবং কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন।

আরও খবর

🔝