gramerkagoj
বুধবার ● ১ মে ২০২৪ ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
নীলগঞ্জে কোটি টাকার সম্পদ বঞ্চিত হয়ে মাকে নিয়ে পথে পথে ৩ বোন
প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল , ২০২৪, ০৯:২৭:০০ পিএম
দেওয়ান মোর্শেদ আলম:
GK_2024-04-18_66213cba5622c.jpg

যশোরের নীলগঞ্জে কোটি টাকার সম্পদ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে এক মা ও তার ৩ মেয়েকে। বছরের পর বছর পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে পথে পথে ঘুরছেন তারা। এ ব্যাপারে যশোর পৌরসভায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এরপরও অভিযুক্ত চক্র ওয়ারেশ ফাঁকি দিতে ভূমি অফিসকে ব্যবহার করে তঞ্চকতাপূর্ণ নামপত্তন করে নেয়ার পায়তারা করছেন।
স্থানীয় একটি মহল অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়ে বিচারপ্রার্থীদের কাগজপত্র আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগ থেকে তথ্য মিলেছে, যশোরের নীলগঞ্জ তাঁতীপাড়ার সালাউদ্দিন সাদিয়া বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও সম্পত্তি রেখে ২০১৭ সালের ১৭ নভেম্বর মারা যান। ওয়ারেশগণের মধ্যে তার দ্’ুস্ত্রী ও ১১ ছেলে মেয়ে রয়েছেন। তার সম্পদ ও সম্পত্তির মধ্যে নীলগঞ্জে ১৪ শতক জমি এবং তিনটি বেড ফোর্ড ট্রাক এবং ৮টি দোকান ঘর রয়েছে। এছাড়া বেজপাড়ায় সালাউদ্দিন সাদিয়া তার বাবা আব্দুল গফুরের দেয়া ২ কাঠা সম্পত্তিও পেয়েছিলেন যা বর্তমান রয়েছে। কিন্তু সালাউদ্দিন সাদিয়ার মৃত্যুর পর তার প্রথম স্ত্রী সায়রা খাতুন ও তার ৮ ছেলে মেয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী বেবি খাতুনকে সম্পদ সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে আসছেন।
যশোর পৌরসভায় দেয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রথম স্ত্রীর ছেলে ইসলাম, কুরবান, আলাউদ্দিন, সুমন, মেয়ে গুড়িয়া, রেশমা, দুলারী ও পপি তাদের বাবা মৃত সালাউদ্দিন সাদিয়ার সব সম্পত্তি, ব্যাংকের গচ্ছিত টাকা বসত বাড়ি নিজেদের দখলে রেথে যথেচ্ছা করছেন। দ্বিতীয় স্ত্রী বেবি খাতুন ও তার ৩ মেয়ে পিংকি, সুমি পারভিন রিতা ও সুলতানা রাজিয়া খুসবুকে সব সম্পতি সম্পদ থেকে বঞ্চিত করছেন। বাড়ি গেলে হত্যার হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছে। বাবা সালাউদ্দিন সাদিয়ার মৃত্যুর পর মা বেবি খাতুনকে নিয়ে পথে পথে ঘুরছেন ৩ বোন পিংকি, সুমি ও খসবু।
তারা দৈনিক গ্রামের কাগজ দপ্তরে এসে কান্না বিজড়িত কন্ঠে জানান, তাদের প্রয়াত বাবা সালাউদ্দিন সাদিয়ার নামে ১৪.৬২ শতক জমি, ৩টি ট্রাক ও ৮টি দোকান ঘর রয়েছে। ওই সম্পদ সম্পত্তি থেকে তাদের অংশ না দিয়ে তাড়িয়ে দেয়ায় পৌরসভায় অভিযোগ করেন তারা। সম্পত্তি সমভাবে বন্টনের দাবি জানিয়ে যশোর ৯নং ওয়ার্ডের ওই সময়ের কমিশনার আজিজুল ইসলামকে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র এবং স্ট্যাম্প দেন। কিন্তু কাউন্সিলর প্রথমে রাজি হলেও কালক্ষেপণ করে পরে সমাধান করেননি। এছাড়া স্ট্যাম্প ও কিছু কাপজপত্র রেখে দেন আজিজুল ইসলাম।
অভিযোগ উঠেছে, সাদিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী ও ৩ মেয়ে সম্পত্তির ভাগ বন্টন বুঝে পাননি। উল্টো অভিযুক্তদের পক্ষের ইসলাম ও কুরবানের নানা হুমকির মুখে বেবি খাতুন ও তার ৩ মেয়ে এখন যশোর ছেড়ে পথে পথে ঘুরছেন।
প্রয়াত সালাউদ্দিন সাদিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী বেবি আরো অভিযোগ করেন, সাবেক কমিশনার যে স্টাম্পটি রেখে দিয়েছেন সেই স্ট্যাম্পে লেখা ছিল, মৃত্যুর আগে ব্যবসায়ীক কারণে সাদিয়া তার শ্যালক হায়দার আলীর কাছ থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। ওই টাকা দিতে না পারলে ১৪ শতক জমি শ্যালক লিখে দেবেন। কিন্তু স্টাম্পটি কমিশনার আজিজুল ইসলাম রেখে দেয়ায় নতুন করে পৌরসভায় অভিযোগ দিলেও বিড়ম্বনা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সাবেক কাউন্সিলর আজিজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানিয়েছেন, মৃত সালাউদ্দিনের দ্বিতীয় স্ত্রী বেবি খাতুনের কাগজপত্র ও স্টাম্প তিনি রেখে দিয়েছেন এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মূলতঃ বেবি খাতুনের ভাইয়ের সাথে প্রয়াত স্বামী সালাউদ্দিনের অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে তিনি শালিশ করেছিলেন। সেই শালিশ অমিমাংসিত ছিল। এরপর তো তিনি আর কাউন্সিলর নেই। সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়টি ভূমি অফিস সংশ্লিষ্ট। শান্তি ও মিমাংসার পক্ষেই তিনি ছিলেন। ওই সময় কারো পক্ষই তিনি নেননি। এখন তিনি কাউন্সিলর নেই। ওয়ার্ড কাউন্সিলর নতুন। তাই এখতিয়ারও বিষয়টি নিয়ে আর কাজ করার।
বেবি খাতুনের ভাই হায়দার আলী অভিযোগ করেছেন, নীলগঞ্জের একটি প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করেছে মৃত সাদিয়ার প্রথম পক্ষের ছেলে ইসলাম ও কুরবান পক্ষ। তারা টাকা ছড়িয়ে স্থানীয়দের ম্যানেজ করছে। আর তার বোন ও ভাগ্নিদের পথে ভাসিয়ে দিচ্ছে ওই প্রথম পক্ষ। এমনকি তার নিজের দেয়া সাড়ে তিন লাখ টাকাও চাপা পড়ে যাচ্ছে ওই মহলের অনৈতিক হস্তক্ষেপে।
এদিকে যশোর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনারের (ভুমি) কাছে দেয়া আরো একটি অভিযোগ থেকে তথ্য মিলেছে, সালাউদ্দিন সাদিয়ার নামীয় ৮৯ নং নীলগঞ্জ মৌজার আর এস ৪৩৬ নং খতিয়ানের জমি ওয়ারেশ সূত্রে দ্বিতীয় স্ত্রী বেবি খাতুন তার ৩ মেয়ে প্রাপ্ত হলেও প্রথম স্ত্রীর পক্ষের শরীকগন তাদের ফাঁকি দিয়ে নামজারি করার চেষ্টা করছে। ওই নামজারি যাতে না হয় সেকারণে পৌরসভা প্রদত্ত প্রয়াত সাদিয়ার ওয়ারেশগনের তালিকার সনদ জমা দেয়া হয়েছে সদর ভূমি অফিসে। এক তরফা ও তঞ্চকতাপূর্ণ নামজারি যাতে না হয় সে আবেদন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বর্তমান কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবুল জানিয়েছেন, নীলগঞ্জের মৃত সালাউদ্দিন সাদিয়ার দুই স্ত্রী ও দুটি পরিবার। তিনি প্রয়াত সাদিয়ার দুই স্ত্রী ও দুই পক্ষের সন্তানদের নাম উল্লেখ করে ওয়ারেশ সনদও দিয়েছেন। তার কাছে অভিযোগ করেছেন দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার ৩ মেয়ে। বিষয়টি নিয়ে তিনি বসেছিলেন। বিষয়টি যশোর সদর ভূমি অফিস সংশ্লিষ্ট। সেখানে নামজারি সংক্রান্তে অভিযোগ দেয়া আছে অভিযোগকারী বেবি পক্ষের। সব মিলিয়ে বিষয়টি এখনও অমিমাংসিত রয়েছে।

আরও খবর

🔝