gramerkagoj
মঙ্গলবার ● ৭ মে ২০২৪ ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj

❒ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪২.০৭ ডিগ্রি

যশোরাঞ্চল তাপপ্রবাহে ৭৬ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ

❒ যশোরের তাপমাত্রা ৪০.০৮ ডিগ্রি

প্রকাশ : শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪, ১২:০৩:০০ এ এম , আপডেট : মঙ্গলবার, ৭ মে , ২০২৪, ০১:০০:৫৬ পিএম
জাহিদ আহমেদ লিটন:
GK_2024-04-26_662bd7ca2b028.jpg

তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোরাঞ্চল। চলমান এ তাপপ্রবাহ ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। মাত্রাতিরিক্ত এ গরমে কাহিল হয়ে পড়েছে জনজীবন। শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যশোরে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, যশোরাঞ্চলের ওপর দিয়ে চলতি মাসে টানা ২৪ দিনের মতো তাপপ্রবাহ বইছে, যা গত ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। এ অবস্থা গত ছয় যুগেও ছিল না। এতে রীতিমত বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় তারা বৃহস্পতিবার থেকে তৃতীয় দফায় হিট এলার্ট জারি করেছেন। তারা বলেছেন, এপ্রিল মাস জুড়েই আবহাওয়ার এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে।
শুক্রবার আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, ১৯৪৮ সালের পর দেশে আবহাওয়ার এ পরিস্থিতি আর কখনো হয়নি। কিন্তু এ বছরের তাপপ্রবাহ দিনের রেকর্ড ভেঙেছে। গত ৭৬ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহ বইছে বাংলাদেশে। যা চলছে যশোর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের ওপর দিয়ে।
তিনি বলেন, তাপমাত্রা টানা অন্তত দু’দিন ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকলে তা তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদফতর। ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদফতর।
অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী বিভাগে ১ এপ্রিল থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। এরপর ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিভাগটির তাপমাত্রা ৩৬-৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। পরবর্তীতে ঢাকা, খুলনা ও রংপুর বিভাগেও তাপমাত্রা বাড়ে এবং দু’দিন তা অব্যাহত থাকে। এরমধ্যে তীব্র দাবদাহে পুড়ছে খুলনা বিভাগ।
যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপে পুড়ছে মানুষ। এ দুটি জেলায় বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর খুলনার তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৭ ডিগি ও সাতক্ষীরার তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অতি তীব্র এ তাপে কাহিল হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের জনজীবন। তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। তারা কাজে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। গরমে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। জ্বর সর্দি ও ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে শিশুদের।
এদিকে, এপ্রিল জুড়ে তাপপ্রবাহ থাকলেও মে মাসের শুরু থেকে গরম কমার সংকেত দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, এপ্রিল জুড়েই থাকবে তাপপ্রবাহ। তবে মে মাসের শুরুতেই সারাদেশে বৃষ্টিপাত হতে পারে। এরপরই গরম কমে আসবে।
শুক্রবার আবহাওয়া অধিদফতরের সবশেষ ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এই অবস্থায় শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ও জলবায়ু সংক্রান্ত রেকর্ড থেকে বোঝা যায়, গত কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশে উষ্ণতার মাত্রা ও এর স্থায়িত্ব বাড়ছে। চুয়াডাঙ্গা, যশোর, রাজশাহী ও পাবনায় তাপপ্রবাহ তুলনামূলক বেশি।
যশোর সিভিল সার্জন অফিসের ডাক্তার অনুপম কুমার দাস বলেছেন, এ প্রচন্ড গরমে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। গরম থেকে তাদেরকে বেশি সাবধানে রাখতে হবে। এছাড়া, মানুষকে সতর্কতার সাথে দিনের বেলা কর্মক্ষেত্রে চলাচল করতে হবে। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রোদে না বের হবার জন্য তিনি জানান। আর রোদে বের হতে হলে অবশ্যই ছাতা ও ঢিলেঢালা সুতি কাপড়ের পোশাক ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়বেন। কোন সমস্যা হলে সাথে সাথেই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ার জন্য তিনি সবাইকে আহবান জানান।
যশোরের জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য বিষয়ক সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রচন্ড গরমে মানুষকে এ সতর্কতা মেনেই কাজ করতে হবে। তা না হলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়বেন।

আরও খবর

🔝