gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ১৬ মে ২০২৪ ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
gramerkagoj

❒ রায়, ডিক্রি ও নিষেধাজ্ঞার পরও মাছ লুট

ঝিকরগাছায় ৮ একর জলাশয় নিয়ে নাজেহাল মালিক পক্ষ
প্রকাশ : সোমবার, ২৯ এপ্রিল , ২০২৪, ০৯:১৫:০০ পিএম , আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৬ মে , ২০২৪, ০২:১৩:৫৮ পিএম
দেওয়ান মোর্শেদ আলম:
GK_2024-04-29_662fba5e6105a.jpg

ঝিকরগাছার শিমুলিয়া ইউনিয়নের উত্তর রাজাপুর এলাকায় ৮ একরের একটি জলাশয় নিয়ে বছরের পর বছর নানামুখি হয়রানী ও নাজেহালের শিকার হচ্ছেন মালিক পক্ষ। আদালতের রায়, ডিক্রি ও চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ওই জলাশয় থেকে দিনের পর দিন মাছ লুট করা হচ্ছে বলে জেলা, উপজেলা প্রশাসন ও থানায় অভিযোগ করেছেন মালিক পক্ষ।
শিমুলিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মাহাবুর রহমানসহ তার কয়েক সহযোগীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে এসব অভিযোগ করেছেন ওই জলাশয় মালিক সোহরাব হোসেনের ছেলে শহিদুল ইসলাম পল্লব। স্থানীয় প্রশাসন অভিযুক্ত মেম্বার মাহবুর রহমান পক্ষকে নোটিশ করে বাধ সাধলেও তারা বেপরোয়া। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
আদালতের রায়, ডিক্রি, চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া অভিযোগ থেকে তথ্য মিলেছে, উত্তর রাজাপুরের মৃত আব্দুল আজিজ বিশ্বাসের ছেলে সোহরাব হোসেন ও মেয়ে খায়রুন নাহার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ১৭নং উত্তর রাজাপুর মৌজায় ১০১৭নং এসএ দাগে ১৮.২৫ একর জমির মধ্যে বাস্তভিটে সংলগ্ন ৭.৮০ একর জলাশয়ের মালিক। কিন্তু ভুল ক্রমে এস,এ রেকর্ডে ১ নাম্বার খাস খতিয়ানে ১০১৭ দাগের ১৮.২৫ একর জমি খাল শ্রেণি হিসেবে রেকর্ড হয়ে যায়। ওই ১৮.২৫ একরের মধ্যে স্থানীয় একটি চক্র সোহরাব হোসেন ও খায়রুন নাহারের নামীয় ৭.৮০ খাল খাস হিসেবে রেকর্ড করিয়ে দেয়। আর কৌশলে সরকারি খাস খাল হিসেবে সরকার পক্ষের কাছ থেকে লিজ গ্রহণ করে দখলে নেয়। এ ঘটনায় স্থানীয় মেম্বার মাহবুর রহমান গং ও সরকার পক্ষের বিরুদ্ধে ওই ৭.৮০ একর জমি দলিলমূলে দাবি করে সোহরাব হোসেন ও খায়রুন নাহার গং আদালতে মামলা করেন। মামলার শুনানী শেষে বিজ্ঞ আদালত সোহরাব হোসেন গংয়ের অনুকূলে ৭.৮০ একর জমির প্রাথমিক ডিক্রী প্রদান করেন। এছাড়া বিজ্ঞ আদালতের নিয়োগকৃত কমিশনের মাধ্যমে সরজমিনে জমির সঠিক পরিমাপ করে লাল ফ্লাগ উত্তোলন করে দখল বুঝিয়ে দেন। পরবর্তীতে জমি মালিক সোহরাব হোসেন ও খায়রুন নাহারের পক্ষে যশোরের যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালত চূড়ান্ত ডিক্রির আদেশ দেন। কিন্তু সরকার পক্ষের নাম ভাঙিয়ে স্থানীয় মাহবুর রহমান গং একটি ‘নামকাওয়াস্তে’ সমিতির নামে আদালতের রায় ও ডিক্রিকে অমান্য করে ইজারার নামে চালাচ্ছেন মাছ লুটপাটের কার্যক্রম।
প্রথম কয়েকটি মাছ মারার ঘটনা ও নির্যাতনের ঘটনায় ২০২২ সালের ৮ মে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লিখিত আবেদন করলে জেলা প্রশাসকের পক্ষে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর ০৫.৪৪.৪১০০.০০৫.১৫.০০১.২২-৭৫৩ নাম্বার স্মারকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নিদের্শনা দেন। আদালতের রায় ডিক্রি বুঝে পাওয়ার পরও ওই অসাধু চক্রটি জলাশয় জবর দখলে রেখে মাছ লুট অব্যাহত রাখেন বলে অভিযোগ করেন জমির মালিক পক্ষ। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর ও ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এক স্মারকে মতমতা দেন।
বলা হয়, তফসিল বর্ণিত জমির ১৮.২৫ একর জমির মধ্যে ৭.৮০ একর জমি দলিলমূলে দাবি করে খায়রুন নাহার দিং বাংলাদেশ সরকারকে বিবাদী করে মামলা করেন। পরবর্তীতে সোলেসূত্রে বাদী পক্ষ প্রাথমিক ডিক্রি প্রাপ্ত হন। অপরদিকে মামলার বাদী তফসিল জলাভূমি নিয়ে বিজ্ঞ ঝিকরগাছা সহকারী জজ আদালতে আরো একটি মামলা করেন (নাম্বার ৬৫/২১)। মামলায় সরকারের বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন। কাজেই চুড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত লিজ প্রদান না করতে বিজ্ঞ সরকারি কৌশুলী যশোর মতামত প্রদান করেন। মালিক পক্ষের অভিযোগ, এরপরও মাহবুর রহমান চক্রটি লিজ গ্রহণ করেছেন বলে মাছ মারা অব্যাহত রেখেছেন।
এদিকে, গত ১৩ মার্চ সোহরাব হোসেন ও খায়রুন নাহারের পক্ষে রায় ডিক্রি প্রদান করেন আদালত। এই চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী ওই জমি স্থায়ীভাবে মালিক হলেন সোহরাব ও খাইরুন নাহার গং। ওখানে আর সরকার পক্ষ বা কোনো পক্ষ হস্তক্ষেপ করবে না, প্রবেশও করবে না। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা না করে মাহবুর রহমান চক্র আবার যথেচ্ছা চালালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন মালিক পক্ষের শহিদুল ইসলাম পল্লব।
অভিযোগে বলা হয়, দেওয়ানী ৬৫/২১ মামলায় আদালত থেকে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার পরও মাছ লুট কাযক্রম চলছে ওই জলাশয়ে। বিজ্ঞ ঝিকরগাছা জজ আদালত ৬৫/২১ মামলায় চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন সরকার পক্ষ জেলা প্রশাসক দিংয়ের বিরুদ্ধে। তাহলে কোনো লিজ আর কার্যকর থাকে না। এরপরও বর্তমানে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহাবুর রহমান বাটুলসহ আরো ৭/৮ জন মিলে বিভিন্ন সময়ে জলাশয়ের মালিক পক্ষের সদস্যদের উপর নির্যাতন করছে এবং মাছ লুটপাটসহ আর্থিক ও বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি সাধন করে আসছে।
থানায় অভিযোগ করা হলে এসআই বখতিয়ার হোসেন এ ঘটনায় মাঠে নামেন। কিন্তু মাছ লুটপাট থামেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।
মালিক পক্ষের শহিদুল ইসলাম পল্লব জানিয়েছেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদের পথে বসিয়ে দিয়েছে বিবাদীরা। উপজেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছিল আগে ওই জলাশয় হাড়িয়া যুব উন্নয়ন বহুমুখি সমবায় সমিতিকে ইজারা দেয়া ছিল। কিন্তু হাড়িয়া যুব উন্নয়ন বহুমুখি সমবায় সমিতির কোনো সদস্য জলাশয়ে যাচ্ছে না। সেখানে শিমুলিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহবুর রহমানকে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে দেখা গেছে। ইউপি সদস্য ওই জলাশয় থেকে ২৪ লাখ টাকার মাছ লুটপাট করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, বরং জলাশয়ের পাড়ে থাকা নারিকেল গাছসহ অন্যান্য ফলের গাছ কর্তন, পাড় ভাঙ্গা, পাটা, বাঁশ, নেট সরিয়ে প্রতিনিয়ত বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করছে। তিনি এসব নিয়ে বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার অফিসার ইনচার্জের কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করেন।
জলাশয়ের মাছ লুটপাট অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা থানার এসআই বখতিয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ওই ৭.৮০ একরের জলাশয় মালিক এখন সোহরাব হেসেন ও খায়রুন নাহার গং এটা আদালত থেকে মিমাংসিত। মাছ লুটপাটের বিষয়ে অভিযুক্ত মাহবুর রহমান গংকে নোটিশ করা হয়েছে। তারা সময় চেয়েছে। এছাড়া অভিযোগকারী বাদী ঝিকরগাছার বাইরে থাকায় বিষয়টি এখনও মিমাংসা হয়নি। তবে কয়েক দফা স্পটে গিয়ে মাছ মারতে বা জলাশয়ে যেতে বারন করে আসা হয়েছে অভিযুক্ত মাহবুর পক্ষকে। দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পক্ষের মাহাবুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি জানিয়েছেন, মাছ লুটপাটের অভিযোগ সত্য নয়। মূলত তার লোকজন গত ৩০ চৈত্র পর্যন্ত লিজ নিয়েছিল ওই জলাশয়। কাজেই গত ৩০ চৈত্র পর্যন্তই মাছ মেরেছে। পরে কেউ আর নামেনি ওই জলাশয়ে। হাড়িয়া যুব উন্নয়ন বহুমুখি সমবায় সমিতির নামে লিজ নেয়া ছিল। এর আগেও লিজ ছিল। যে সোহরাব হোসেন গং সরকার পক্ষকে হারিয়ে জলাশয়টি পেয়েছেন সেই সোহরাবের আত্মীয় স্বজন যখন চেয়ারম্যান ছিলেন তারাও কিন্তু লিজ দিয়েছিলেন। সে সময় শহিদুল ইসলাম পল্লবরা কোথায় ছিলেন? তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একজন শান্তিপ্রিয় মানুষ। জলাশয় এখন পল্লবদের। সেখানে আর যাবে না তার লোকজন।

আরও খবর

🔝