
'পায়ের স্যান্ডেল দিয়ে তারা আমাকে মারতো। পেটাতো হাতের কাছে যা পেত তা দিয়ে। টাকা চাইলে বা বাড়িতে ফোন করতে চাইলে হুমকি দিত। যখন আর সহ্য হয় না, চেষ্টা করি জীবন নিয়ে পালিয়ে আসার।' সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
কথাগুলো বলতে বলতে চোখ জলে ভরে ওঠে জয়নব বেগমের। সৌদি আরবে কাজ করতে গিয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন এই ভারতীয় নারী। এক বছরেরও বেশি সময় তিনি ছিলেন সেখানে। এই সময় তাঁর ওপর চলা নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন জয়নব।
জয়নব জানান, অনেকের মতো তিনিও নারী শ্রমিক হিসেবে গমন করেন সৌদিতে। কথা ছিল সেখানে গৃহস্থালি কাজে সাহায্য করবেন। আরাম আয়েশে থাকবেন। পাবেন ভালো বেতনও। কিন্তু প্রথম থেকেই নির্মম নির্যাতন চলে এই নারীর ওপর।
বিষয়টি জানতে পারে জয়নবের পরিবার। তাঁকে উদ্ধারের জন্য আবেদন করা হয় ভারত সরকারের কাছে। একপর্যায়ে রিয়াদে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস তাঁকে উদ্ধার করে। এখনো রাতে দুঃস্বপ্ন দেখেন জয়নব। ঘুমের ভেতর কেঁদে ওঠেন বলে জানান তাঁর মেয়ে রুবিনা।
কেবল জয়নব নন। হায়দ্রাবাদ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে পাচার হন তাঁর মতো অনেক নারী। বেআইনি এজেন্টের খপ্পরে পড়ে পাচার হন তাঁরা। ভালো চাকরির প্রলোভন দেখানো হয়। ভালো বেতন, বিশ্রাম আরাম আয়েশ-এমন অনেক কিছুর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় এসব নারীদের।
ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস আব ইন্ডিয়া কথা বলে জয়নবের সঙ্গে। কেবল তিনি নন, জয়নবের ভাগ্য বরণ করেছেন এমন অনেকের সঙ্গেই কথা হয় তাঁদের। উঠে আসে মধ্যপ্রাচ্যে পাচার হওয়া নারীদের গল্প। যে গল্পে রয়েছে নির্যাতনময় দীর্ঘ সময়ের গল্প।
হায়দ্রাবাদের শাহীননগরের বাসিন্দা ইলিয়াস বেগম। নির্যাতনে পা হারিয়েছেন। ভবনের তিনতলা থেকে ফেলে দেওয়া হয় তাঁকে। চাকরিদাতার ছেলে তাঁকে ফেলে দিয়েছিলেন। সেসব নির্যাতন আর অপমানের গল্প শোনাচ্ছিলেন তিনি।
ইলিয়াস বেগম বলেন, ২০১৬ সালে আমাকে দুবাই নেওয়া হয়। সেদেশে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল আমাকে। ঠিকমতোই পৌঁছেছিলাম সেখানে। কিন্তু অন্য একটি ফ্লাইটে আমাকে রিয়াদে পাঠানো হয়। সেখানে দিনভর কাজের বোঝা। অভিযোগ দেওয়া হলে আমাকে একটি রড দিয়ে পেটানো হয়। চাকরিদাতার নাম কফিল। একদিন, কফিলের ছেলে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমি দৌড়ে তৃতীয়তলায় উঠে যাই। সেখান থেকে ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দেওয়া হয় নিচে।