
‘মা বললেই তেল কালি মাখা ধোঁয়া ওঠা রান্না ঘর। ময়লা শাড়িতে হলুদের ছোপ, কপালে ঘাম, মুখে হাসি’ বাঙালী প্রায় প্রতিটি সন্তানের কাছেই শুভ দাশগুপ্তের এ বর্ণনায় মূর্ত হয়ে ওঠে নিজের মায়ের প্রতিচ্ছবি। মা মানেই মমতা, মা মানেই নিশ্চয়তা, মা মানেই নিরাপত্তা, মা মানেই অস্তিত্ব, মা মানেই আশ্রয়, মা মানেই একরাশ অন্ধকারে একবুক ভালোবাসা। মা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয়, সবচেয়ে আপন। সেই মায়ের মমতা, ত্যাগ ও মর্যাদাকে বিশেষভাবে স্মরণের একটি দিন আজ। আজ বিশ্ব মা দিবস।
মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রতিটি মুহূর্তের। তারপরও বিশ্বের সকল মানুষ যেন এক সঙ্গে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারে সেজন্যে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে আন্তর্জাতিক ‘মা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনো ভিন্ন দিনে মা দিবস পালন করা হয়।
১৯১১সাল থেকে ‘মা দিবস’ পালিত হয়ে আসলেও দিবসটির পেছনে অনেক ত্যাগের, সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। মাদার্স ডে অথবা মা দিবসের জন্মকথা নিয়েও নানা তথ্য রয়েছে। প্রচীন গ্রিসে একদল ভক্ত মাতৃত্ব আরাধনায় মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দেবী সিবেলের উদ্দেশ্যে মাতৃভক্তির সূচনা করেন। ইতিহাসবিদদের ধারণা, কয়েক সহস্রাব্দ বছর আগে বসন্ত উৎসবে দেবী মায়ের প্রতি ভক্তিশ্রদ্ধা জানিয়ে মনস্যসহকারে পূজা দেয়া হতো। গ্রিক পূরাণ অনুযায়ী বসন্ত উৎসর্গ করা হত ক্রোনাসের স্ত্রী এবং দেব দেবীদের মা রিয়াকে। তৎকালীন রোম রাজ্যে আড়ম্বর উৎসব ছিল মা দিবস এবং সেটিও ছিল মা সাইবেলাকে উপলক্ষ করে। রোমের এই ধর্মীয় উৎসব যিশু খ্রিস্টের জন্মেরও আড়াইশ বছর পূর্বে শুরু হয়েছিল। হিলারিয়া নামে পরিচিত ধর্মভিত্তিক এই উৎসবগুলো মার্চ মাসের ১৫ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত মোট তিন দিন ধরে চলতো। বহু বছর পূর্বে ইংল্যান্ডে মায়েদের সম্মান জানানোর রীতি প্রচলিত ছিল এবং তা ‘মায়ের জন্য রোববার’ হিসেবে পালন করা হতো। একে আবার মিড লেন্ট সানডে বলা হতো। খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের ৪০দিনব্যাপী বার্ষিক উপবাস পালন লেন্ট হিসেবে পরিচিত। এই উপবাসের চতুর্থ রোববারকেই ‘মিড লেন্ট সানডে’ হিসেবে অবিহিত করা হয়। কারো কারো মতে দেবী সাইবেলার সম্মানে পালিত এই উৎসব আসলে খ্রিস্টের মাতা মেরীর প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধার পরিবর্তিত অনুসরণ থেকেই এসেছে।
তবে, বিশ্ব প্রেক্ষাপটে সর্ব প্রথম ১৯১১ সালের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার আমেরিকার সমস্ত প্রদেশ জুড়ে পালিত হয় মা দিবস। সেই থেকে এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে মা দিবস হিসেবে। আর এ মা দিবসের উদ্ভাবক, মা জুলিয়া ওয়ার্ড হাউই এবং তার কন্যা চিরকুমারী অ্যানা মারিয়া রিভস জার্ভিস মেরী।
সব মায়ের ভালোবাসাই অকৃত্রিম ও এক। প্রতিটি মানুষের কাছে তার মা তুলনাহীনা ও অনন্যা। বাস্তবতার নিরীখে আমরা প্রতিদিন মা কে শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়, আবেগে মুড়িয়ে দিই না, দিতে পারিনা। কিন্তু জন্মধাত্রী মায়ের সাথে সন্তানের আচরণ সন্তানের মতো হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। আনুষ্ঠানিকতা নয়, আজকের এ দিনে নতুন করে প্রতিদিনই মায়েদের প্রতি একই রকম সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ বজায় রেখে মানবিক আচরণের মাধ্যমে স্বর্গীয় সম্পর্কের মর্যাদা অক্ষুন্ন করার অঙ্গীকার করতে হবে। কারণ মা এবং মায়ের ভালোবাসা নোবেল প্রাইজ বা অস্কারের চেয়ে বড় পাওয়া পরম নিশ্চিন্তে।