
ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন এমন ১৫ থেকে ২০ জনের তালিকা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন এমন অভিযোগে ১৫ থেকে ২০ জনের তালিকা দুদকের হাতে এসেছে। তাদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। যদিও ক্যাসিনো সংশ্লিষ্ট অপরাধের বিরদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দুদকের কাজ নয়। শুধু অবৈধ সম্পদ অর্জনের অংশটুকু দুদকের তফসিলভুক্ত।’
অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি না, এমন প্রশ্নের তিনি বলেন, ‘আমরা আইনি পথে চলতে চাই। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন, জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন তা হলে তা করবেন। প্রয়োজনে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি, কোনো বিশেষ পেশা দুদকের নিকট মুখ্য বিষয় নয়। দুদকের বিচার্য বিষয় হচ্ছে দুর্নীতি হয়েছে কি না এবং তা কমিশন আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধ কি না। যদি অপরাধটি কমিশন আইনের তফসিলভুক্ত হয়, তাহলে সে যেই হোক তাকে ন্যূনতম ছাড় দিবে না কমিশন।’
১ অক্টোবর থেকে সরকারি কর্মচারী আইন কার্যকর হয়েছে। এই আইন অনুসারে সরকারের অনুমতি ছাড়া সরকারি কর্মচারী গ্রেপ্তার করা বে-আইনি কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমার যতটা মনে আছে, সরকারি কর্মচারী আইনে বলা হয়েছে ‘সরকারি দায়িত্ব’পালনকালে যদি কোনো ফৌজদারি মামলা হয়, তবে চার্জশিট না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে সরকারের অনুমতি ছাড়া গ্রেপ্তার করা যাবে না।’
এসময় দুদক চেয়ারম্যান পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘ঘুষ আদান-প্রদান কি সরকারি দায়িত্ব? ঘুষ খাওয়া কি সরকারি দায়িত্বের মধ্যে পড়ে?। কমিশন আইনের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ঘুষ খাওয়া সরকারি দায়িত্ব নয়।’
এর আগে গত ১ অক্টোবর ক্যাসিনোর মাধ্যমে যারা অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। কমিশনের এক জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত নেয়ার পর অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয় দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরু করে র্যাব। এরপর সারা দেশে র্যাব ও পুলিশ অন্তত ৩৫টি অভিযানে ২৭০ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন যুবলীগ ও কৃষক লীগের তিন শীর্ষ নেতা। ক্যাসিনো ব্যবসা করে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন যুবলীগ ও কৃষক লীগসহ অনেক রাজনৈতিক নেতারা।
এর মধ্যে বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, জি কে শামীমসহ বেশ কয়েকজনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য বের করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কোটি কোটি টাকা ও স্বর্ণসহ গ্রেপ্তার হয় সূত্রাপুরের দুই ভাই এনামুল হক ওরফে এনু ভূঁইয়া ও রুপন ভূঁইয়া।
রাজধানীর মণিপুরিপাড়ায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে। সর্বশেষ ৬ অক্টোবর নাটকীয় অভিযানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও সহ-সভাপতি আরমানকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক জামায়াত নেতার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো বেরিয়ে এসেছে অনেক ভিআইপি ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের নাম। দুদক শুধু অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে জানা গেছে।