
মেহেরপুরে গত ৩ দিন যাবত টানা বর্ষণে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেই সঙ্গে জনজীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। গত বুধবার (২৩ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে সব থেকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষরা। কৃষক, ভ্যান-রিকশা চালক, শ্রমিকরা বসে বসে দিন পার করছেন।
শুধু তাই নয়, লাগাতার বর্ষণে আমন ধান, কপি, নতুন লাগানো পেঁয়াজ, রসুনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আবাদি জমিগুলো হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে।
শোলমারী গ্রামের আব্দুল জাব্বার জানান, দুই বিঘা আগাম পেঁয়াজ লাগিয়েছিলাম কিন্তু টানা বৃষ্টিতে সে জমি এখন পানির নিচে। এতে আমার প্রায় লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেল।
তেরোঘরিয়া গ্রামের ফারুক হোসেন জানান, আমন ধান ছিল দুই বিঘা, কপি ছিল এক বিঘা অসময়ের এ বৃষ্টিতে সবকিছু পানির নিচে।
এ দিকে, ব্যস্ত মেহেরপুর বৃষ্টির কারণে অনেকটাই ফাকা দেখা গেছে। নেই মানুষের কোলাহল, নেই গাড়ি-ঘোড়ার চাপ।
মেহেরপুর শহরের রিকশা চালক চাঁদ আলী জানান, বাড়ি রাজাপুর। পেটের দায়ে রিকশা চালায়। দুইদিন ধরে দুইশ টাকার কাজও করতে পারিনি। রাস্তায় তেমন মানুষ নেই যে দুই একজন আছে তারা সবাই অটোতে যাতায়াত করছে।
দিন মজুর কয়েকজন জানান, রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজের সন্ধানে মেহেরপুরে চলে আসি। গত বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) থেকে কোনো কাজ নেই। কেউ কাজের জন্য ডাকছেও না। বাড়িতে ছেলে সংসার আছে এভাবে চলতে থাকলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।
টানা বৃষ্টিতে গ্রামের চায়ের দোকান গুলোতে ব্যাপক লোকজনের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কাজ-কাম করতে না পেরে চায়ের আড্ডাতে মেতেছে অনেকেই।
এদিকে, টানা বৃষ্টিতে মুজিবনগর পর্যটন কেন্দ্র পুরোপুরি ফাকা। সেখানকার ব্যবসায়ীরা অনেকটা খেয়ে-ঘুমিয়ে দিন পার করছে। সেই সঙ্গে নতুন ও উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, বুধবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি থাকতে পারে আরও দুইদিন। আগামী সোমবার (২৮ অক্টোবর) আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে পারে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান জানান, যেহেতু মেহেরপুর বন্যা মুক্ত এলাকা তাই এখানে ফসলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে যদি এরকম বৃষ্টি লেগে থাকে তাহলে শীতকালীন সবজির কিছুটা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এখন বৃষ্টি হওয়ার উপযুক্ত সময় না।
দুইদিন ধরে লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে। এতে শীতকালীন সবজির জন্য জমির জোঁ আসতে দেরি হবে। ফসল চাষ এ বছর একটু পিছিয়ে যাবে। আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব সময় তদারকি করছে। ফসলের যেন ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে কৃষকদের যে কোনো সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করা হবে।