
৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১। দেশের সব স্থান থেকে যখন পরাজয়ের সংবাদ আসতে থাকে, তখন যুদ্ধ পরিস্থিতির বিবরণ দিয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে গোপন রিপোর্ট পাঠান জেনারেল নিয়াজি। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা (তার ভাষায় বিদ্রোহী) ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৪টি ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট সমর্থিত ৮ ডিভিশন সৈন্য নিয়ে সম্মিলিত আক্রমণ পরিচালনা করছে। স্থানীয় জনগণের মাঝেও পশ্চিম পাকিস্তান বিরোধী মনোভাব তীব্র। দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার ও চাঁদপুর প্রবল চাপের মুখে রয়েছে। তিনি এও উল্লেখ করেন, রিপোর্ট পাঠানোর ১৭ দিন আগে থেকে পাকবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির হার বেড়ে গিয়েছে। রাজাকাররাও পাকবাহিনীর কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে নিজেরাই গা ঢাকা দিয়েছে ভয়ে। হেডকোয়ার্টার থেকে বিভিন্ন স্থান থেকে সেনা সমাবেশের নির্দেশ দেয়া হলেও ৬ ডিসেম্বর গভীর রাতেই যশোর সেনানিবাস ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকবাহিনী।
এদিন ভোরে ভারতীয় ছত্রীসেনারা সিলেটের কাছাকাছি অবস্থিত বিমানবন্দর শালুটিকরে নামে। চতুর্দিক থেকে আক্রমণে টিকতে না পেরে পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। একাত্তরের এই দিনে মুক্ত হয় চান্দিনা ও জাফরগঞ্জ। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে মুক্ত হয় টাঙ্গাইল। একে একে নড়াইল, কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ ও ছাতক ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকবাহিনী।
মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যোদ্ধারা ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলো থেকে প্রায় প্রতি রাতেই ঢাকার ভেতরে ঢুকে আক্রমণ পরিচালনা করতে থাকেন। ভীত-সন্ত্রস্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা মিলে তখন তৈরি করছিল বাংলাদেশের কৃতী সন্তানদের তালিকা।