
সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মরণঘাতী কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশেও। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় বিদেশফেরত মোট ১১৬৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
তবে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের কারও শরীরে এখনো করোনার ভাইরাসের উপস্থিতি মেলেনি বলে নিশ্চিত করেছেন আইইডিসিআর।
আইইডিসিআর-এর মতে বিদেশফেরত ব্যক্তিদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন জেলায় বিদেশফেরত ব্যক্তিদের এখন পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
চাঁদপুর : দেশের অন্যান্য জেলার থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে চাঁদপুরে। এখন পর্যন্ত এই জেলায় ৬০৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত এদের সকলে বিদেশফেরত বলে জানা গেছে।
মানিকগঞ্জ : চাঁদপুরের পরই মানিকগঞ্জের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। এখানে এখন পর্যন্ত ১৬৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। গত চারদিনে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় বিদেশফেরত এসব ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। তাদের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ না থাকলেও বিদেশফেরত হওয়ার কারণে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জে ৪০ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ইতালিফেরত দুইজন আইইডিসিআরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া তারা ওই ৪০ জনের সংস্পর্শে আসায় তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
ফরিদপুর : করোনা আক্রান্ত সন্দেহে ফরিদপুরে ইতালিফেরত তিন ভাইকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তারা তিনজনই সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন।
শরীয়তপুর : শরীয়তপুরে বিদেশ থেকে আসা ১৪৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তারা
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তা জানার জন্যই তাদের রাখা হয়। প্রবাসীর মধ্যে
রয়েছে ইতালি, সৌদি আরব, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, কাতার, কুয়েত, জর্দান, ওমান,
মালদ্বীপ, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাহরাইন, ফ্রান্স, গ্রিস, সিঙ্গাপুর ও দুবাইফেরত
যাত্রী।
সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার সৈয়দা শাহিনুর নাজিয়া
জানান, করোনাভাইরাস রোগী শনাক্তকরণের লক্ষ্যে বিদেশ থেকে আসা ১৪৯ জনকে হোম
কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার ২৪, নড়িয়ার ৪৮, জাজিরার
১৯, ভেদরগঞ্জ উপজেলার ১৭, ডামুড্যার ৩৪ ও গোসাইরহাটের সাতজন রয়েছেন। তাদের
প্রত্যেককে ১৪ দিন নিজ বাড়িতে একা থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সিভিল
সার্জন এসএম আব্দুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, এরইমধ্যে ছয় উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্স ও সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন কক্ষে পাঁচটি আসন, সদর হাসপাতালে
পাঁচটি আসনসহ প্রত্যেকটি বেসরকারি হাসপাতালে একটি করে আইসোলেশন ইউনিট
প্রস্তুত রাখা হয়েছে। করোনা রোগীদের সেবা দিতে প্রত্যেক হাসপাতালে একটি করে
র্যাপিড রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে।
মাদারীপুর : এ দিকে সম্প্রতি ইতালি থেকে এক প্রবাসী মাদারীপুর গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। একপর্যায়ে তার দেহে করোনার লক্ষণ দেখা দিলে তিনি আইইডিসিআরকে অবগত করেন। পরে তাকে রাজধানীতে আইসোলেশনে রাখা হয়। এছাড়া ২৯ জনের সঙ্গে চলাফেরা করার কারণে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৩০ জন আইসোলেশনে রয়েছে।
টাঙ্গাইল : করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টাঙ্গাইলে স্বাস্থ্য বিভাগ ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে সিঙ্গাপুর ও চীন ফেরত দুইজনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তবে তদের শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো উপসর্গ পাওয়া যায়নি।
দিনাজপুর : দিনাজপুরে এক শিক্ষার্থী চীন থেকে ফেরার সপ্তাহখানেক পর জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হওয়ায় নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া তাকে দিনাজপুর থেকে রংপুর মেডিকেলে নিয়ে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বগুড়া : বগুড়ায় বিদেশফেরত দুইজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে এবং তাদের ১৪ দিন ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ : ভৈরবে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে দুইজন নারীসহ মোট ৩৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তারা সকলেই বিদেশফেরত যাত্রী।
ফেনী : ফেনীতে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে বিদেশ ফেরত নয়জনকে নিজ বাসায় হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
নোয়াখালী : নোয়াখালীর হাতিয়ায় করোনা সন্দেহে এক কাতার প্রবাসীকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
নরসিংদী : নরসিংদী সদর ও রায়পুরা উপজেলায় প্রবাসফেরত দুই প্রবাসীকে নিজ নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
যশোর : চৌগাছায় ইতালিফেরত দম্পতিসহ মোট ছয়জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এতে তাদের জন্য একজন ডাক্তার নিয়োজিত রয়েছে।
খুলনা : করোনা থেকে দূরে থাকতে ইতালিফেরত এক ব্যক্তিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
সিলেট : লন্ডন খ্যাত সিলেটে সৌদিফেরত এক নারীকে স্থানীয় একটি হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জামালপুর : সম্প্রতি মালয়েশিয়া থেকে ফিরে আসা এক প্রবাসী নিজের বাড়িতে স্বাস্থ্য বিভাগের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার নিজ বাড়িতে পর্যবেক্ষণে আছেন তিনি।
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ সদরের আরাপপুর মাস্টারপাড়ায় ইতালিফেরত এক দম্পতিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তবে তাদের শরীরে করোনার উপস্থিতি নেই।
চুয়াডাঙ্গা : জেলার দামুরহুদা উপজেলায় সৌদিফেরত এক নারীকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে স্থানীয় হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। গত ১০ মার্চ দুপুরে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রাজবাড়ী : রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলায় ইতালি থেকে আসা বাবা ও ছেলেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী এক ব্যক্তি ও তার স্ত্রীকে হোম কোয়ারেন্টশনে রাখা হয়েছে। শুক্রবার (১৩ মার্চ) সকালে ওই প্রবাসী ও তার স্ত্রীকে তাদের নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
জানা যায়, গত ২ মার্চ দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এক যুবক কুষ্টিয়ায় আসেন। এরপর তার স্ত্রীর কাশি আছে বলে নিজে ফোন করে বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানায়। তিনি সুস্থ থাকলেও। তাদের দুজনকেই তাদের নিজ বাড়িতে একটি কক্ষে আলাদাভাবে কোয়ারেন্টেশনে রাখা হয়েছে।