
করোনা জয় সহজ ছিলো না - বললেন, শহরের নতুন খয়েরতলা কবরস্থান সড়কের সুমাইয়া (২৪)। বলেন, প্রতিটি দিন মৃত্যুভয়ে ছিলেন। অপ্রিয় হলেও সত্য, সবার থেকে কেমন যেন দূরে সরে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল আর কোনোদিন পরিবারের কারো সঙ্গে দেখা হবে না। কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছিল। অদৃশ্য শত্রু করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ের গল্পটা এভাবেই শুরু করেন তিনি।
সুমাইয়া বলেন, গত জানুয়ারি থেকে তিনি কাঁশি ও ঠান্ডাজনিত সমস্যার কারণে গত ২৪ এপ্রিল শহরের টিবি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে যান। সেখানকার ডাক্তার তাকে করোনা সংক্রমিত সন্দেহ করে নমুনা পরীক্ষার পরামর্শ দেন। ২৬ এপ্রিল তিনি যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফ্লু-কর্ণারে গিয়ে নমুনা দিয়ে বাড়িতে ফিরে যান। পরে জানানো হয় তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, তাকে যে বেডে রাখা হয়েছিল, তার চারপাশে কাপড়ের পর্দা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছিল। সব সময় অন্য করোনা আক্রন্ত রোগীদের আত্মচিৎকার কানে আসতো। তারা প্রায় সময়ই ক্ষিপ্ত আচারণ করত। সে রীতিমত এক ভীতিকর পরিবেশ। যা এ মুহূর্তে বলা সত্যিই কঠিন, কেবলমাত্র অনুধাবনের ব্যাপার। এ অবস্থায় মাঝে মধ্যে মানসিকভাবে বেশ দুর্বল হয়ে যেতাম। ভাবতাম আর বোধ হয় পরিবারের কারও মুখ দেখতে পাবো না। তবে মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে সামলে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতাম, প্রতীজ্ঞা করতাম ভেঙ্গে পড়লে চলবে না, এ যুদ্ধে যে জিততেই হবে।
করোনার কারণে কি কি সমস্যা দেখা দিত জানতে চাইলে বলেন, শরীর প্রচন্ড দুর্বল ছিল। কয়েক দিন কিছুই খেতে পারতাম না। দিনে দু’বার ডাক্তার এসে দেখে যেত। পরে ধীরে ধীরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। পরবর্তীতে তিন বার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তিন বারই রির্পোট নেগেটিভ আসে। শুরু থেকে শেষ পর্য়ন্ত চিকিৎসাধীন পর্যন্ত কোনো টাকা খরচ হয়নি। সুস্থতার জন্য সার্বক্ষণিক খবর রাখার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশ বাহিনী, প্রশাসনের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। পাশাপাশি সবাইকে করোনায় আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হবার পরার্মশ দেন। আর গরম পানি ও ভিটিামিন 'সি' জাতীয় খাবার গ্রহণের কথা বলেন। কিভাবে কোথা থেকে তার শরীরে করোনা এলো স্পষ্ট করে বলতে পারেন না তিনি।
১০ মে বিকেল ৩ টার দিকে সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীনের নেতৃত্বে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মীর আবু মাউদ, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মিডিয়া ফোকাল পার্সন ডাক্তার রেহেনেওয়াজ ও মেডিকেল অফিসার আদনান ইমতিয়াজ করোনা জয়ী সুমাইয়ার বাড়িতে গিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। একই সাথে বাড়িটি লকডাউনমুক্ত করেন। হাতে তুলে দেন করোনা জয়ী সার্টিফিকেট।