এম. আইউব :

পরিচালনা পরিষদের চালাকির খপ্পরে পড়েছে বিভিন্ন ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। করোনার ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার পরও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ অনুযায়ী প্রণোদনা পাচ্ছেন না সব কর্মকর্তা-কর্মচারী। অধিকাংশ ব্যাংকেই এমন ঘটনা ঘটছে। যশোরের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে করোনা ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১০ দিন দায়িত্ব পালন করলে তারা পুরো একমাসের বেতনের সমান (বেসিক) প্রণোদনা পাবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ঘোষণায় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কিছুটা হলেও আশার আলো দেখেছিলেন। ১০ দিন কাজ করে পুরো মাসের বেতন পাবেন এই আশায় অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালনে আপত্তি করেননি। কিন্তু ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের চালাকির কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ আশা ইতোমধ্যে ফিকে হতে চলেছে।
যশোরে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে ৩৮ টি ব্যাংকের শাখা রয়েছে বলে সোনালী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এসব শাখার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তারা কেউই নাম না প্রকাশ করার শর্তে হতাশা ব্যক্ত করে বলেন,‘ম্যানেজমেন্ট চালাকি করা শুরু করেছে। তারা শিফিটিং ডিউটি চালু করে কৌশলে ১০ দিন কাজ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছেন অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী নয়দিন করে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাচ্ছেন। ১০ দিন করে কাজ করছেন এমন সংখ্যা অনেক কম। যারা নয়দিন করে দায়িত্ব পালন করছেন তারা একমাসের বেতনের নয়দিনে যা হয় সেই পরিমাণ অর্থ পাবেন। এই কৌশল অবলম্বন করায় প্রত্যেকটি ব্যাংকের লাখ লাখ টাকা বাচবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,‘যারা নয়দিন কাজ করতে পারে তারা আর একদিন করতে পারবে না বলে কি মনে হয়! পরিচালনা পরিষদ চালাকির আশ্রয় নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্রেফ বঞ্চিত করছে।’
কেবল এই প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না। বঞ্চিত করা হচ্ছে প্রফিট বোনাস থেকেও। বেসরকারি ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান,‘প্রতি বছর ব্যাংক সব ধরনের ব্যয় মিটিয়ে যে পরিমাণ লাভ করে তা থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি বোনাস দেয়া হয়। এবার করোনার দোহাই দিয়ে সেই বোনাস থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। অথচ গত বছর অনেক বেসরকারি ব্যাংক হাজার হাজার কোটি টাকা প্রফিট করেছে।
গত বছর এক হাজার কোটি টাকার ওপর প্রফিট করেছে এমন একটি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন,‘ব্যাংক যখন হাজার হাজার কোটি টাকা প্রফিট করে তখনও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিকে যেমন তাকায়না, ঠিক তেমনি গত বছর হাজার কোটি টাকার ওপর মুনাফা করার পরও করোনার অজুহাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এটি স্রেফ রক্তচোষা ছাড়া কিছুই না।’
সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে যতটুকু জানাগেছে তাতে মনে হচ্ছে যশোরের যতগুলো ব্যাংকের শাখা রয়েছে সেখানকার আটশ’র বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রণোদনা সুবিধা বঞ্চিত হবেন। করোনা প্রণোদনাসহ বিভিন্ন খাতের সুবিধা বঞ্চিত হওয়ার কারণে ক্ষোভ বাড়ছে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। এসব বিষয়ে যশোরের কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের সাথে কথা বললে তাদের বেশিরভাগ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। দু’ একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,‘এটি সম্পূর্ণ ম্যানেজমেন্টের বিষয়। তারা যেভাবে চায় সেভাবে ব্যাংকগুলো চলে।’