
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বৃহত্তর খুলনায় নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দমকা বাতাসের সঙ্গে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। চারদিকে বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। সবার মাঝে এখন আম্পান আতঙ্ক।
বুধবার (২০ মে) সকাল থেকেই খুলনাঞ্চলের আকাশে ঝড়ো হাওয়াসহ মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। হঠাৎ করেই খুলনার উপকূলীয় অঞ্চল ও আশপাশের নদ-নদীগুলোতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপকূলের মানুষের মধ্যে বাড়ছে শঙ্কা। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষেরা ভয় পাচ্ছে, পানি বাড়লেই যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে যেতে পারে। সেই সঙ্গে জলোচ্ছ্বাসের ভয়ও তাড়া করছে উপকূলবাসীকে।
উপকূলীয় অঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলের কয়রা সদর, উত্তর বেদকাশী ও দক্ষিণ বেদকাশীর বিভিন্ন স্থানে নদীর পানি বেড়ে বেড়িবাঁধের ওপর উপচে পড়ছে। স্থানীয়রা মাটি দিয়ে বাঁধ সংস্কারের চেষ্টা করছে। তবে জোয়ারের পানি বাড়লে পানির চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কয়রার দক্ষিণ বেদকাশীর ঝুঁকিপূর্ণ আংটিহারা এলাকায় স্বাধীন সমাজকল্যাণ যুব সংস্থার সদস্যরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ করছে।
কয়রার দক্ষিণ বেদকাশীর বাসিন্দা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবু সাঈদ খান বলেন, কয়রার অধিকাংশ বাঁধই ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষত আংটিহারা এলাকার দিলীপ মন্ডলের বাড়ির সামনে থেকে শাহাবুদ্দিন গাজী মন্টুর বাড়ি পর্যন্ত ওয়াপদার রাস্তা খারাপ। এছাড়াও জোড়শিং লঞ্চঘাট থেকে পূর্বদিকের বেড়িবাঁধের রাস্তার অবস্থাও নাজুক। নদীর পানি বেড়ে বেড়িবাঁধে ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব স্থান দিয়ে নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে । নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ধ্বসে গেছে বেড়িবাঁধের কয়েকটি অংশের মাটি। অধিকাংশ জায়গায় বাঁধের গোড়ায় মাটি না থাকায় সংকীর্ণ ও খাড়া হয়ে গেছে বেড়িবাঁধের রাস্তা। দুর্বল বাঁধ ভেঙে যেকোনো মুহূর্তে নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে বিস্তীর্ণ এলাকা।
কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন লাভলু বলেন, আমার ইউনিয়নের বাঁধের অনেক স্থান ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে দশহালিয়ার বেড়িবাঁধ মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে। বাঁধ উপচে পানি ভিতরে প্রবেশ করছে। যে কোনো মুহূর্তে বাঁধভেঙে এলাকা প্লাবিত হতে পারে । ভাঙন রোধে কাজ অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি পাউবোর কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
খুলনায় বাঁধ পাহারায় উপকূলবাসী
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, খুলনার উপকূলীয় নদীতে স্বাভাবিকের থেকে .০৪ মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ধারণা করা যাচ্ছে, পানি আর বাড়বেনা। ডেঞ্জার লেভেল ক্রস করেনি এখনো। খুলনার মধ্যে শুধুমাত্র কয়রা উপজেলার বাঁধগুলো দুর্বল। অন্যসব উপজেলার বাঁধগুলো জোয়ারের পানির চাপে ভাঙার সম্ভাবনা নেই। শুধু কয়রাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। জোয়ারের পানিতে বাঁধ উপচে পানি আসার কথা শুনেছি। তবে পানি আর বাড়ার সম্ভাবনা তেমন নেই বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, উপকূলবাসীর অনেকে বাঁধের ওপরে আশ্রয় নিয়ে বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন। যেস্থান ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে সেখানে দ্রুত সংস্কারের চেষ্টা করছে। বৃহত্তর খুলনার দাকোপ-কয়রা-পাইকগাছা-সাতক্ষীরা-মংলার উপকূলের লক্ষাধিক মানুষ নদীর পানি বাড়ায় বাঁধ ভাঙনের আতঙ্কে প্রহর গুনছে।