
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আলি আকবরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্টাফদের মারপিটের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুর্নীতি পরায়ন এ কর্মকর্তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এ ব্যাপারে ১১ জন স্টাফ বিআরডিবির উপপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে, এসব অভিযোগ মোটেও সত্য না বলে দাবি করেছেন প্রকল্প কর্মকর্তা আলি আকবর। তিনি বলেন,‘এসব অভিযোগে আমার কিছুই হবে না। বরং প্রমোশন হবে।’
অভিযোগে জানাগেছে, ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর বাঘারপাড়ায় যোগদানের পর প্রকল্প কর্মকর্তা আলি আকবর নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িয়ে পড়েন। দাপ্তরিক কাজ ফেলে ব্যক্তিগত কাজে সব সময় ব্যস্ত থাকেন তিনি। ঠিকমতো ঋণ কার্যক্রম তদারকি করেন না। যে কারণে ঋণখেলাপীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। তিনি প্রায়ই সকালে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে সেটি নিজের ড্রয়ারে তালাবদ্ধ করে অফিস থেকে বের হয়ে যান। জরুরি প্রয়োজনে অফিসের কেউ ফোন করলে রিসিভ করেন না। যে কারণে ব্যাহত হয় অফিসিয়াল কাজকর্ম। কারসাজি করে স্টাফদের বেতন-ভাতা আটকে রাখেন মাসের পর মাস। এসব বিষয়ে অফিসের কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতেও দ্বিধা করেন না তিনি।
গত ৯ ফেব্রæয়ারি উপ প্রকল্প কর্মকর্তা শাহ আলমকে অফিসের মধ্যেই মারপিট করেন স্বেচ্ছাচারী এই কর্মকর্তা। অফিসের চলতি হিসেবের চেক বইয়ে সভাপতির অগ্রিম স্বাক্ষর করিয়ে নিজের আলমারিতে তালাবদ্ধ করে রাখেন এবং বিলভাউচার পাস না করে হিসাবরক্ষককে বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়ে নিজে চেক লেখেন। স্টাফদের বেতনভাতাদি প্রদানেও বাধা হয়ে দাঁড়ান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প কর্মকর্তা আলি আকবর বলেন, ‘শরীরিক নির্যাতনের বিষয়টি সত্য না। নিয়ম অনুযায়ী সকাল সাড়ে নয়টায় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে হয়। এরপর আমি হাজিরা খাতা নিজের হেফাজতে রাখি। ব্যস্ততার কারণে চেক বইয়ের দু’ একটি পাতায় সভাপতি অগ্রিম স্বাক্ষর করে রাখেন। এটার দায় সভাপতির,আমার না। কেউ ছুটিতে থাকলে তার নামে চেক ইস্যু করা যায় না। তাছাড়া, করোনার কারণে অফিসের ফান্ডে টাকা না থাকায় বেতনভাতা ঠিক মতো দেয়া সম্ভব হয় না।
অফিসের ১২ জন স্টাফের মধ্যে ১১ জনই আপনার বিপক্ষে কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘ অধিকাংশ স্টাফ ঠিক মতো অফিস করেন না। কাজ দিলেও বুঝতে পারেন না। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলি বলেই আমার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তারা।’
ইউবিসিসিএ’র সভাপতি মনিরুজ্জামান বলেন,‘উপ প্রকল্প কর্মকর্তা শাহ আলমকে অফিসের মধ্যে লাঞ্ছিত করার সময় আমি সেখানে ছিলাম না। তবে স্টাফদের কাছে শুনেছি। দু’ একটি চেকে অগ্রিম স্বাক্ষর করে রাখা হয় সুবিধার জন্যে। এ নিয়ে নয়ছয় করার সুযোগ নেই।’
এ ব্যপারে বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানিয়া আফরোজ বলেন,‘অভিযোগের কপি পেয়েছি। তাছাড়া অভিযোগকারীরা আমার কাছে এসেছিলেন। তাদের কাছে মৌখিকভাবে ঘটনা শুনেছি। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন বিভাগ অথবা ডিসি স্যার আমাকে তদন্তের নির্দেশ দিলে আমি দায়িত্ব পালন করবো।’
জানতে চাইলে বিআরডিবির উপপরিচালক তপন কুমার মÐল বলেন, এ ব্যাপারে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত টিম যাবে বাঘারপাড়ায়। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বেতনভাতা প্রদান নিয়ে এক ধরনের ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করছি।’ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।