এম. আইউব

যশোরসহ আশপাশ এলাকায় চালের দাম বৃদ্ধির পিছনে কুষ্টিয়ার একটি সিন্ডিকেটের হাত রয়েছে। কেবল এ অঞ্চলে না, গোটা দেশে চালের দাম বৃদ্ধির সাথে এই সিন্ডিকেট নাকি জড়িত। এমন কথা বলছেন খোদ খাদ্যমন্ত্রী। চাল সংগ্রহ অভিযান সফল করার উদ্দেশ্যে বিভাগীয় কমিশনারদের সাথে ভার্চ্যুয়াল কনফারেন্সে এ কথা বলেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্যেও বলেছেন খাদ্যমন্ত্রী।
গত কয়েকমাসে দেশে দফায় দফায় চালের দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, সামনে চালের দাম নাকি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। লাগাতারভাবে দাম বৃদ্ধির কারণে ভোক্তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ শুরু হয়। দাবি ওঠে দাম বৃদ্ধির পিছনে কাদের হাত রয়েছে তা চিহ্নিত করার।
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ধান চাল সংগ্রহ সফল করতে বিভাগীয় কমিশনারদের সাথে ভার্চ্যুয়াল সভায় যুক্ত হন। সেখানে তিনি বলেন,‘ঢাকার অনেক ব্যবসায়ী আমাদেরকে জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার একটি সিন্ডিকেট চালের দাম বাড়াচ্ছে। তারা মিলগেট থেকে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। যে কারণে বাজারে চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। অথচ চালের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই।’ মন্ত্রী বিষয়টি খতিয়ে দেখতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। এ সময় তিনি চলতি বোরো ধান ও চাল সংগ্রহের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
দেশে চলতি বোরো মৌসুমে ধান এবং চাল সংগ্রহ চরম হুমকির মুখে পড়েছে। নির্ধারিত সময়ের অর্ধেকের বেশি পার হলেও ধান এবং চাল যে পরিমাণ সংগ্রহ হয়েছে তা চরম হতাশার। বর্তমানে করোনা দুর্যোগের মধ্যে ধান-চাল সংগ্রহের যে হাল তাতে খাদ্যবিভাগের লোকজন একপ্রকার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারা কী করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।
খাদ্য কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে কৃষক বাজারে ধান বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। খাদ্যগুদামে যে দামে ধান বিক্রি করতে পারবে সেই একই দামে বাইরে বিক্রি করতে পারছেন। বরং খাদ্যগুদামে অনেক ঝামেলার শিকার হতে হয় কৃষককে। বাইরে ব্যাপারিদের কাছে বিক্রি করলে সেই ঝামেলা হয় না। এ কারণে গুদামমুখি হচ্ছেন না কৃষক।
একই অবস্থা চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রেও। ধানের বাজার বেশি থাকার কারণে চালের দামও ঊর্ধ্বমুখি। সরকার মিলমালিকদের কাছ থেকে চাল কিনতে ৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। তবে, মিলমালিকদের বক্তব্য, যে মোটা চালের দাম সরকার ৩৬ টাকা দিচ্ছে সেই চাল বাজারে ৩৯-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে, লোকসানে পড়ছেন মিলমালিকরা-এমন দাবি তাদের।
এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী বিভাগীয় কমিশনারদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন গত আমন মৌসুমে মিলমালিকরা সরকারের কাছে চাল বিক্রি করে প্রতি কেজিতে কমপক্ষে সাত টাকা করে লাভ করেছেন। এ বছর দাম বেড়েছে বলে যে তারা চাল দিচ্ছে না সেটি কোনোভাবেই মানা যাবে না। কারণ ব্যবসায় কখনো বেশি লাভ, কখনো কম লাভ আবার কখনো লোকসান হবে এটিই স্বাভাবিক।
মন্ত্রী বলেন, অনেক মিলমালিক কেজিতে দু’ টাকা বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছেন। অথচ মিলমালিকদের কেজিতে দু’ টাকা বেশি দিলে বাজারে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে যাবে। যার প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের উপর।
চালের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে কুষ্টিয়া জেলা চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফারুক হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘আমি ফেসবুকে মন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছি। কারা কীভাবে তাকে এ তথ্য দিয়েছেন জানিনা। এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’