এম. আইউব

করোনা দুর্যোগে শিশুদের পুষ্টি যোগাতে স্কুল ফিডিং নতুন করে চালুর উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। করোনার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রত্যেক শিশু বাড়ি বসে ৪০ প্যাকেট করে বিস্কুট পাচ্ছে। একইসাথে মিড ডে মিলের সুবিধাভোগীদের বাড়িতেও পৌঁছে যাবে সব ধরনের সামগ্রী। এ মাসের মধ্যে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাবে বিস্কুট ও মিড ডে মিলের চাল, ডাল ও ভোজ্য তেল।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, যশোরের তিনটি উপজেলায় স্কুল ফিডিং ও মিড ডে মিল প্রকল্প চালু রয়েছে। এগুলো হচ্ছে, সদর, ঝিকরগাছা ও চৌগাছা। এই তিনটি উপজেলার মোট পাঁচশ’ ২৮ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুল ফিডিং প্রকল্পের আওতায়। উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন বিস্কুট দেওয়া হয় এসব স্কুলের শিক্ষার্থীদের। সদর উপজেলায় দুশ’ ৫৬ টি স্কুলের ৫৭ হাজার পাঁচশ’ ৪৮ জন শিশু শিক্ষার্থী, ঝিকরগাছা উপজেলার একশ’ ৩৩ টি স্কুলের ২৮ হাজার দুশ’ ৯৩ জন ও চৌগাছার একশ’ ৩৯ টি স্কুলের ২৮ হাজার একশ’ শিশু এই সুবিধা পেত। একই সাথে ঝিকরগাছার ২০ টি স্কুলের চার হাজার দুশ’ ৫৪ জন শিশুর জন্যে চালু ছিল মিড ডে মিল। তাদেরকে পুষ্টিসম্পন্ন খিঁচুড়ি খাওয়ানো হতো। করোনার কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। মুখ থুবড়ে পড়ে স্কুল ফিডিং ও মিড ডে মিল কার্যক্রম। এ কারণে বাড়িতে থাকা দরিদ্র পরিবারের শিশুদের পুষ্টিহীনতায় পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেটি বিবেচনা করে স্কুল ফিডিং ও মিড ডে মিল কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
কেবল সিদ্ধান্তই নেয়নি, বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে পুষ্টিমান সম্পন্ন বিস্কুট ও অন্যান্য সামগ্রী। সদর ও চৌগাছা উপজেলায় স্কুল ফিডিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আরআরএফ। ঝিকরগাছার দায়িত্বে রয়েছে উত্তরণ নামে আরেকটি এনজিও।
আরআরএফের প্রকল্প সমন্বয়কারী আব্দুল আজিজ জানিয়েছেন, প্রকল্পভুক্ত প্রতিটি স্কুলের প্রত্যেক শিশুর বাড়িতে উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন ৪০ প্যাকেট করে বিস্কুট এ মাসের মধ্যে পৌঁছে দেয়া হবে। গত মে মাসেও তারা প্রত্যেক শিশুকে ৩১ প্যাকেট করে বিস্কুট দিয়েছে বলে জানান তিনি। আব্দুল আজিজ বলেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ অন্যান্য অফিসার এবং স্কুল শিক্ষকদের সহযোগিতায় তারা সুচারুভাবে এ প্রকল্পের কাজ করছেন।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উত্তরণের এই প্রকল্পের মনিটরিং এন্ড রিপোর্টিং অফিসার নিজামুল ইসলাম বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে তারা বাড়ি বাড়ি ৪০ প্যাকেট করে বিস্কুট এবং মিড ডে মিলের চাল, ডাল ও ভোজ্য তেল পৌঁছে দেবেন। চেষ্টা করবেন এ মাসের মধ্যেই সম্পন্ন করার।
আব্দুল আজিজ আরও জানান, করোনার কারণে অনেক মানুষ এক প্রকার বেকার হয়ে পড়েছেন। এ কারণে পৌরসভার বস্তি এলাকা এবং গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ খুব অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছে। ফলে, তাদের সন্তানদের পুষ্টির যোগান দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। সরকার স্কুল ফিডিং সচল করায় দরিদ্র পরিবারের শিশুরা পুষ্টিহীনতার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ অহিদুল আলম বলেন, স্কুল ফিডিং এবং মিড ডে মিল সরকারের একটি কার্যকর প্রকল্প। এই প্রকল্প দরিদ্র পরিবারে আশার আলো জ্বালিয়েছে। একদিকে পুষ্টিহীনতার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে লাখ লাখ শিশু। অপরদিকে, এসব শিশু স্কুলমুখি হচ্ছে। অভিভাবকরাও আগ্রহ সহকারে তাদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন। করোনার মধ্যে এটি চালু থাকায় দরিদ্র মানুষ অনেকখানিক উপকৃত হবে।