
সব সম্ভবের আমাদের দেশে সব কিছুই সম্ভব। তাইতো একজন লাইব্রেরিয়ান কাম মিউজিয়াম কিপার যার শিক্ষাগত যোগ্যতাও নেই খুটির জোরে কিংবা টাকার জোরে আজ জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তার চেয়ার দখল করে বসেছেন।
২০০৫ সালের ১৩ মে শুক্রবার বাংলাদেশ শিশু একাডেমি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একাডেমির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মো: হাবিবুর রহমান। সম্মেলন শুরুতে প্রধান অতিথি কর্তৃক জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের ঘোষণা দেয়া হয়। জাতীয় সংগীত শুরুর সাথে সাথে একাডেমির প্রধান কার্যালয়ের তৎকালীন কেয়ারটেকার দেওয়ান হাফিজুর রহমান মাইকে উচ্চস্বরে জাতীয় সংগীত বন্ধের নির্দেশ দেন। এমতাবস্থায় অনুষ্ঠানের নেতৃবৃন্দসহ অতিথিগণ বিস্ময় প্রকাশ করেন। আয়োজকগণ কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে যান। তাঁরা তৎক্ষনাৎ বাংলাদেশ শিশু একাডেমির তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক জোবাইদা গুলশান আরার কাছে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান। চেয়ারম্যানও এ বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি এ বিষয়ে হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমির তৎকালীন পরিচালক এস. এম নিয়াজ উদ্দিন কেয়ারটেকার হাফিজুরকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এ বিষয়ে ‘দৈনিক সংবাদ’ এ ১৪ মে ২০০৫ এ ‘জাতীয় সংগীত পরিবেশনে বাঁধা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রবাশিত হয়।
দ্বিতীয় শ্রেণিভূক্ত উপজেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তাগণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম শ্রেণি ভূক্তের সুযোগ পাবেন।
কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় প্রধানমন্ত্রীর আদেশ উপেক্ষিত হয়ে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা এক গ্রেড টপকিয়ে প্রথম শ্রেণি ভূক্ত হচ্ছেন।
একজন উপজেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা দুঃখ করে বললেন ১৯৯৬ সাল থেকে অদ্যাবধি চব্বিশ বছর চাকুরীতে থেকেও তাঁর পদোন্নতি হয়নি। অথচ একজন জাতীয় সংগীত বিরোধী কেয়ারটেকারকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ রূপে অবৈধ এবং বে-আইনী। তার ক্ষোভ এবং দুঃখ একজন অধঃস্তন কর্মচারীকে এখন তাঁর সিনিয়র অফিসার হিসাবে সমীহ করতে হবে। তা ছাড়া নেই তাঁর একাডেমিক শিক্ষাগত যোগ্যতা।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমির কর্মকর্তা এবং কর্মচারী গণের নিয়োগের এখতিয়ার একমাত্র বোর্ডের। কিন্তু সেই বোর্ডের কোন মিটিং ছাড়াই করোনাকালীন সময়ে হাফিজুরকে নিয়োগদেন বোর্ড কর্মকর্তা।
এ ক্ষেত্রে আরেকটি বিধি রয়েছে। প্রথম শ্রেণি পদে পদোন্নতি পেতে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক হতে হবে। যা হাফিজুরের নেই। সে চাকুরীতে যোগদানের সময় যে সার্টিফিকেট জমা দিয়েছে সেটি এইচ.এস.সি পাশের।
হাফিজুর ৩য় শ্রেণির কেয়ারটেকার হয়ে করোনা সংকটের মধ্যে এক লাফে জেলা কর্মকর্তা হয়ে গেল বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্তের প্রয়োজন। তাও আবার বোর্ড মিটিং ছাড়াই শুধুমাত্র বোর্ড প্রধানের স্বাক্ষরে।
আমরা বুঝতে পারছি ‘ডাল মে কুছ, কালা হ্যায়’। এখানে বড় অংকের কোনো লেন দেন হয়েছে নিশ্চয়ই। কিন্তু বিষয়টি তদন্ত আবশ্যক সেই সাথে দায়ী ব্যক্তির যথোপযুক্ত শাস্তিও।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু সেখানে যদি দক্ষতার ভিত্তিতে কর্মকর্তা না থাকে তাহলে ভবিষ্যত নিয়ে অভিভাবকসহ সকলেই সন্দিহান। আমরা আশা করব এই প্রতিষ্ঠানটি যেন কোন গাফিলতির কারণে মুখ থুবড়ে না পড়ে। ফলে এটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের জিরোটলারেন্স নীতি অবশ্যই প্রয়োজন।
সামসুজ্জামান লেখক/কলামিস্ট