
ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার বাজার যশোরের রাজারহাট। চরম হতাশায় থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মুখে কিছুটা হলেও হাসি ফুটেছে। এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ঈদুল আজহার পর দ্বিতীয় হাটে শনিবারে ৪০ হাজারের বেশি চামড়া বিক্রি করেছেন। ক্রেতারা দামও পেয়েছেন ভালো।
প্রথম হাটের হতাশা কেটেছে দ্বিতীয় হাটে। শনিবার ব্যাপক ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় ছিল চামড়ার বাজারে। শুক্রবার রাতেই রাজারহাটে চামড়ার স্তুপ পড়ে যায়। শনিবার সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে বিক্রি হয়ে যায় সব চামড়া।
এ বছর পহেলা আগস্ট শনিবার ঈদুল আজহা হওয়ার একদিন পর সোমবার রাজারহাটে প্রথম চামড়ার বাজার বসে। প্রথম হাটে বিক্রেতারা হতাশাজনক দামে চামড়া বিক্রি করেন। এ কারণে ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তারা। সেই হতাশা কেটেছে দ্বিতীয় হাট শনিবারে।
ক্রেতা, বিক্রেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গরুর চামড়ায় সর্বোচ্চ সাড়ে তিনশ’ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর ছাগলের চামড়ায় বেড়েছে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
জেলা বাজার কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান চামড়ার হাট থেকে জানান, শনিবার গরুর চামড়া গড়ে পাঁচশ’ ৫০ থেকে ছয়শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এরমধ্যে ছোট চামড়া দুশ’ থেকে তিনশ’, তার পরের সাইজের চামড়া চারশ’ ৫০ থেকে পাঁচশ’ ৫০ টাকা, মাঝারি সাইজের চামড়া ছয়শ’ ৫০ থেকে সাতশ’ ৫০ টাকা এবং সবচেয়ে বড় সাইজের চামড়া আটশ’ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়। অথচ সোমবারের প্রথম হাটে গরুর চামড়া একশ’ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ছয়শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
শনিবার ছাগলের চামড়া ৩০ থেকে শুরু করে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। যা প্রথম হাটে বিক্রি হয় ১০ থেকে ৩০ টাকায়।
শনিবার ৩০ থেকে ৩২ হাজার গরুর চামড়া এবং ১০ থেকে ১২ হাজার ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে বলে জেলা বাজার কর্মকর্তা জানিয়েছেন। অবশ্য, ইজারাদার সংশ্লিষ্টরা চামড়া বিক্রির পরিমাণ আরও বেশি বলে দাবি করেছেন।
রাজারহাটে চামড়া বিক্রি করতে আসেন শহিদুল ইসলাম, আনন্দ ও মিন্টু। শহিদুল ইসলাম জানান, গরুর চামড়া ৪০ টাকা ফুট দরে বিক্রি করেছেন। যা গত হাটে ছিল ৩০-৩২ টাকা। তিনি ১৫ বছর ধরে চামড়ার ব্যবসা করছেন।
আনন্দ নামে আরেক ব্যবসায়ী জানান, প্রতিটি গরুর চামড়া গত হাটের তুলনায় দুশ’ টাকা বেশিতে বিক্রি করেছেন। আর ছাগলের ৩০-৪০ টাকার চামড়া বিক্রি করেছেন ৬০-৭০ টাকায়। দাম পাওয়ায় খুশি বিক্রেতারা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত থেকেই হাটে চামড়া আসতে শুরু করে। এক পর্যায়ে রাতেই স্তুপ পড়ে যায়। সকালেও কিছু চামড়া আসে। এরপর শুরু হয় বিক্রি। সকাল ১০ টা থেকে সাড়ে ১০ টার মধ্যে বিক্রি হয়ে যায় সব চামড়া। হাট ইজারাদারদের একটি সূত্র জানিয়েছে, শনিবার ২০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। তবে, এই লেনেদেনের পরিমাণ আরও বেশি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শনিবারের হাটের দিকে কঠোরভাবে নজর রাখে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের নির্দেশে হাটের শুরু থেকেই অবস্থান নেন জেলা বাজার কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যশোরের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব।
কেবল এ দু’ কর্মকর্তা না, এসআই সেলিমের নেতৃত্বে ডিএসবি সদস্যরাও হাটে অবস্থান করেন বলে জানান বাজার কর্মকর্তা।
রাজারহাটের ইজারাদার হাসানুজ্জামান হাসু জানান, শনিবারের হাটে ৪০ হাজারের বেশি চামড়া বিক্রি হয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২৫ কোটি টাকার মতো। গত হাটের চেয়ে দাম বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ কারণে স্বস্তি দেখা গেছে বিক্রেতাদের মধ্যে। সবমিলিয়ে সন্তুষ্ট তিনিও।