
যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের রাশেদ বিশ্বস। মাঠে তার পাঁচ বিঘার উপরে জমি। নিজস্ব ছাদের পাকা বাড়ি। নিজে কাজ করেন, ছেলেরা প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করেন। এরপরও বিধি ও নীতিমালা উপেক্ষা করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে একটি পাকাবাড়ি বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগসাজসে দু’লাখ ৫৮ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাড়িটির মালিক হয়েছেন রাশেদ। তিনি এক সময়ে বিএনপির বড় নেতা ছিলেন। অথচ তার বাড়ি লাগোয়া দিন আনা-দিন খাওয়া, বেড়ার ঘরে বাস করা আইয়েব আলীর ভাগ্যে জোটেনি এই বাড়ি। গ্রামে বহু দরিদ্র পরিবার থাকলেও তাদের কপালে জোটেনি প্রধানমন্ত্রীর এমন উপহার। এ নিয়ে ওই এলাকায় সমালোচনার ঝড় বইছে।
খোঁজখবর নেয়া হয় যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের একটি সরকারি বাড়ি বরাদ্দের ব্যাপারে। তথ্য মিলেছে, দরিদ্র এবং পাকা টেকসই বাড়ি নেই এমন পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে টিআর প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে বাড়ি বরাদ্দ শুরু হয়।
এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে দুই রুম ও এক বাথ রুম এবং রান্না ঘরের পাকা বাড়িটি এখন অপেক্ষা করছে রাশেদের পরিবারের ওঠার অপেক্ষায়। প্রকল্পে এই বাড়ি পাওয়ার নূন্যতম কোনো শর্ত পূরন ছাড়াই নীতিমালা ও বিধি উপেক্ষা করে বাড়িটি দেয়া হয়েছে রাশেদকে। বাড়ি বরাদ্দ দিতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদসহ ৩ জনের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি গঠিত হয়, যারা দরিদ্র ও পকা বাড়ি নেই এমন পরিবার ও ব্যক্তি বাছাই করনে। কিন্তু কাশিমপুরের অনেক দরিদ্র বাদ রেখে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চলা এক সময়ের বিএনপি নেতা রাশেদকে বাড়িটি দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে টিআর প্রকল্পের বাড়িটি রাশেদকে দেয়ায় প্রকল্পের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
এলাকায় হাঁটতে হাঁটতে রাশেদের সরকারি বাড়ির দিকে গেলে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। সামনে চলে আসে তার নিজস্ব পাকা ছাদের বাড়িটি। পাশের গোয়াল ঘরটিও পাকা। গোয়ালে গরুও আছে। অথচ তার বাড়ির পাশে আইয়েব আলীর বাড়িটি চাটাই দিয়ে ঘেরা। আইয়েব আলীর স্ত্রী রিজিয়া খাতুন জানান, তাদের খবর কেউ রাখে না। ধনী মানুষ সরকারি বাড়ি পেল, আর দরিদ্র হয়েও তারা বঞ্চিত হল। টিনের বেড়ার ঘরে বাস করা ভ্যান চালক টিপুর ভাগ্যেও জোটেনি এই বাড়ি। তার বড় সাধ ছিল সরকারি একটি বাড়ির। কিন্তু তার ভাগেও জোটেনি। তিনি জানান, তাদের ফাটা কপাল, আর ধনী রাশেদের জোড়া লাগা বড় কপাল। তাই সরকারি বরাদ্দের পাকা বাড়ি পেয়েছেন।
প্রতিবেদক তার বাড়ি পৌঁছালে তেলে বেগুনে জ¦লে ওঠেন রাশেদ বিশ্বাস। নিজের পরিচয় গোপন করে রাগান্বিতভাবে তিনি জানান, নিয়ম মেনেই বাড়ি পেয়েছেন। এক নেতার মাধ্যমে বাড়িটি পেয়েছেন। এলাকায় সাংবাদিক ঢুকিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেয়া মন্টু। এই মন্টুই তার পেছনে লেগেছে বলে হুংকার ছাড়েন। ছবিটবি তুলে কোনো লাভ নেই বলে প্রতিবেদক টিমের সামনেই মুক্তিযোদ্ধা মন্টুকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন।
এ ব্যাপারে কথা হয় যশোর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদের সাথে। তিনি জানিয়েছেন, কাশিমপুরে রাশেদ নামে একজন টিআর প্রকল্পের পাকা বাড়ি পেয়েছেন। তবে তার বেলায় শর্ত ভঙ্গ হয়েছে কিনা খোঁজ খবর নিতে হবে। সাধারণত দরিদ্র ও পাকা বাড়ি নেই এমন লোকই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়িটি পাবেন। কিন্ত রাশেদের ব্যাপারে যে অভিযোগ আসছে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। প্রয়োজনে তিনি বাড়িটি বাতিল করার ব্যবস্থা করবেন।