
কুড়িগ্রামে সাংবাদিককে হয়রানিমূলক মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদন্ড দেওয়ার ঘটনায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সহকারী কমিশনার (আরডিসি) মণিরামপুরের নাজিম উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই ঘটনায় জড়িত অন্যতম ব্যক্তি হিসেবে নাজিমকে গত ৬ আগস্ট বরখাস্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারি করা হয়। ওই ঘটনার পর গত ১৬ মার্চ অভিযুক্ত সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামকে পরবর্তী পদায়নের জন্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করে আদেশ জারি করা হয়েছিল।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানাগেছে, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নাজিমকে সাময়িক বরখাস্ত করতে কিছুটা সময় লেগেছে। নাজিম উদ্দিনকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছাড়াও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও তা বিচার বিশ্লেষণের পরই এই সিদ্ধাস্ত নেওয়া হয়। এখন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে ধরে নিয়ে মোবাইলকোর্টের মাধ্যমে অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিয়াদকে এক বছরের কারাদন্ড দেয় জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন। ওই সাংবাদিকের ঘরে কোনো তল্লাশি চালানো না হলেও তাকে ডিসি অফিসে নেওয়ার পর তারা দাবি করেন, আরিফুলের বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।
আরিফুলের পরিবারের দাবি, কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় তিনি এসব করিয়েছেন। পরে ডিসি সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করা হয়। জামিনে মুক্ত হন সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম।
এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন। তার সাথে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা ও রাহাতুল ইসলাম।
আরডিসি নাজিম উদ্দিন মণিরামপুর উপজেলার দুর্বাডাঙ্গা গ্রামের মৃত নিছার আলীর ছেলে। নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার, বাগেরহাট ও মাগুরার মহাম্মদপুরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগসহ এক বৃদ্ধকে টেনেহেঁচড়ে মারপিট করার ভিডিও ইতিমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। এসিল্যান্ড থাকাকালীন তিনি ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে বিপুল অঙ্কের অর্থ উপার্জন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানাযায়, মণিরামপুর পৌর এলাকার গাংড়া মৌজায় তার শ্বশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের নামে ৪৬ লাখ টাকায় ১৪.৬৯ শতক জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির সেলামি তোলা হয় ৩০ লাখ টাকা। জমি বিক্রেতা আকবর আলী জানান, স্থানীয় মোসলেম উদ্দীনের মধ্যস্থতায় ৪৬ লাখ টাকায় তিনি ওই জমি বিক্রি করেন। যা আব্দুর রাজ্জাকের জামাই ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দিন কিনেছেন। কিন্তু দলিল করা হয় নাজিম উদ্দিনের শ্বশুর আব্দুর রাজ্জাকের নামে।
মণিরামপুর মৌজায় আট শতক জমি ১৩ লাখ টাকায় কেনা হয়। যা নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী সাবরিনা সুলতানার নামে রেজিস্ট্রি হলেও সেখানে স্বামীর নাম দিয়ে বাবা আব্দুর রাজ্জাকের নাম দেওয়া হয়েছে। এই জমির ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে পাঁচতলা বিশিষ্ট বিশাল অট্টালিকা। ইতিমধ্যে যার চারতলা সম্পন্ন হয়েছে বলে নির্মাণ শ্রমিক আতিয়ার রহমান জানান। নাজিম উদ্দিনের সম্পদের বিষয়টি দুদককে খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
এসব বিষয়ে নাজিম উদ্দিনের দাবি, তার শ্বশুর পেনশনের টাকা দিয়ে গাংড়া মৌজায় জমি কিনেছেন। আর শ্বশুরের কিনে দেওয়া স্ত্রী সাবরিনা সুলতানার নামের আট শতক জমির ওপর ভবনটি প্রবাসী শ্যালিকা নির্মাণ করছেন। তার কোনো সম্পদ নেই বলে তিনি দাবি করেন।