এম. আইউব

পিঁয়াজ, আলু ও কাঁচাঝালে মনোযোগ দিচ্ছে প্রশাসন। নিত্য প্রয়োজনীয় এই তিন পণ্যের দামে লাগাম টানতে হার্ডলাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যশোরে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্মকর্তারা।
কেবল তাই না, পিঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করতে দু’একদিনের মধ্যে যশোরে আসছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব। তিনি স্থলবন্দর বেনাপোলে আমদানিকারকদের সাথে মতবিনিময় করবেন। পিঁয়াজের দাম কমাতে কৌশল বের করবেন সেখান থেকে।
বেশ কিছুদিন ধরে পিঁয়াজ, আলু ও কাঁচাঝালের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের মধ্যে এক প্রকার নাভিশ্বাস উঠেছে। ক্ষোভ বিরাজ করছে ভোক্তাদের মধ্যে। ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এই অবস্থায় প্রশাসন কয়েকদিন ধরে তিন পণ্যের দামে লাগাম টানার চেষ্টা করছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সন্তোষজনক কোনো অবস্থা তৈরি হয়নি।
এরই মধ্যে রোববার সভা অনুষ্ঠিত হয় যশোর কালেক্টরেট সভাকক্ষে। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। এই সভায় তিনটি বিষয় প্রাধান্য পায় বলে উপস্থিত কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন। সেখানে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে পিঁয়াজ, আলু ও কাঁচাঝালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার উপরে। কর্মকর্তারা একমত হয়েছেন যেকোনো মূল্যে উল্লেখিত তিন পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলবে নিয়মিত। কেউ কথা না শুনলে তার বিরুদ্ধে নেওয়া হবে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, টিসিবির পণ্য শহরের প্রাণকেন্দ্রে বিক্রি করতে হবে। কোনোভাবেই জামরুলতলা মোড়ে বিক্রি করা যাবে না। কারণ জামরুলতলা শহরের বাইরে। সেখানে আগ্রহী বেশিরভাগ মানুষ যেতে পারবে না। ফলে, টিসিবির ভর্তুকির এই পণ্য কালোবাজারে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।
এদিকে, আলুর বাজার স্থিতিশীল করতে রোববার হিমাগার কর্তৃপক্ষ ও বড় বড় ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করেছেন জেলা বাজার কর্মকর্তা। ওই বৈঠকে রজনীগন্ধ্যা, টাওয়ার, সরদার রোকেয়া ও ডিভাইন কোল্ডস্টোরের ম্যানেজাররা উপস্থিত ছিলেন। তাদের সাথে উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী। বৈঠকে হিমাগারে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর নির্ধারিত দাম লিখে ব্যানার টাঙানোর সিদ্ধান্ত হয়। যদিও ব্যবসায়ীরা এই দাম মানতে নানা ধরনের টালবাহানা করেন।
তাদের দাবি, হিমাগারে নাকি কৃষক আলু রেখেছেন। সেই কৃষকই নাকি কম দামে আলু বিক্রি করতে চাচ্ছেন না। যদিও তাদের এই দাবি অগ্রহণযোগ্য বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সাধারণ মানুষের স্বার্থে সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্ত যে কেউ মানতে বাধ্য। সেখানে আলু মজুত রাখা চাষি মানবেন না এটি অবিশ্বাস্য।
এদিকে, গ্রামের কাগজের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, যশোরের আটটি হিমাগারে মজুত করা অধিকাংশ আলু ব্যবসায়ীদের। চাষিদের আলুর পরিমাণ খুবই কম। এর বাইরে হিমাগার মালিকদের নিজস্ব উদ্যোগে আলু মজুত করা রয়েছে।
কৃষক ঘাম ঝরিয়ে আলু চাষ করলেও তেমন একটা লাভবান হতে পারে না। এ বছর তেমন ঘটনাই ঘটেছে। তারা মাত্র সাত টাকায় আলু বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। তবে, কোনো কোনো চাষি শেষের দিকে এসে ১৪ টাকা দরে আলু বিক্রি করেছেন। কৃষকের ঘাড়ে ভর করে মুনাফা লুটে নিচ্ছেন ব্যবসায়ী আর হিমাগার মালিকরা।
এদিকে, জেলা বাজার কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান জানিয়েছেন, যশোরের হিমাগারগুলোতে এখনো পর্যন্ত যে পরিমাণ আলু রয়েছে তা আগামী দু’মাসের চাহিদা পূরণ করবে। আর দু’মাস পরেই নতুন আলু বাজারে আসবে। তিনি ব্যবসায়ীদের এই দু’মাস যশোরের আলু বিক্রি করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি তাদেরকে বলেছেন, স্থানীয় হিমাগার থেকে আলু নিয়ে বিক্রি করলে দাম অনেকটা কমে আসবে। কোনোভাবেই খুচরা ৩০ টাকার বেশি আলু বিক্রি করা যাবে না বলে ব্যবসায়ীদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জেলা বাজার কর্মকর্তা।
জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন জানান, পিঁয়াজ, আলু ও কাঁচাঝালের বাজার নিয়ন্ত্রণ, টিসিবির পণ্য শহরের মধ্যে বিক্রি এবং মাদক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, যশোরের বাজারে এখনো পর্যন্ত পিঁয়াজ ৬০-৬৫, আলু ৩৫-৪০ এবং কাঁচা ঝাল একশ’ ৪০ থেকে একশ’ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।