
জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অফিস ফাকি, অসদাচরন ও দূর্নীতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অফিস প্রধানের সীমাহীন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার ফলে সমগ্র স্বাস্থ্য প্রশাসনের বিভাগীয় কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে এবং সাধারন মানুষ প্রতিদিন বঞ্চিত হচ্ছে তাদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা থেকে। অফিস না করে নিয়মিত বেতন নেন এই কর্মকর্তা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাস্থ্য প্রশাসক ডা.আব্দুল জব্বার শিকদার গত ০৫.০২.২০২০ইং এ উপজেলায় অফিস প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি তার খেয়াল খুশিমত অফিস পরিচালনা শুরু করেন। ঠাকুরগাঁও জেলা সদরের নিজ বাসভবনে থেকে তিনি কর্মস্থলে যাতায়াত করতে থাকেন। অফিস প্রধান হিসেবে তার অফিস ক্যাম্পাসের সরকারী বাসভবনে সার্বক্ষনিক অবস্থান করা বাধ্যতামূলক হলেও তিনি সরকারী বিধি বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কর্মস্থল থেকে ৩৫ কিমি দুরত্বের নিজ বাড়ীতে অবস্থান করে সপ্তাহে ১/২ দিন অফিসে যান। অফিসে গেলেও তিনি ১১ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত অবস্থানের পর নিজ বাড়ীর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। সম্প্রতি এপ্রিল মাসে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার জন্য প্রায় কোটি টাকা মূল্যের সরকারী গাড়ী বরাদ্দ হয়,যার নং ঢাকা মেট্রো-১৮-৫৭০৮। গাড়িিট তিনি প্রাপ্তির পর হতেই স্বাস্থ্য বিভাগের কাজে ব্যবহার না করে এবং নিযুক্ত ড্রাইভারকে অন্যকাজে লাগিয়ে ব্যাক্তিগতভাবে ড্রাইভার রেখে কর্মস্থল থেকে নিজ বাড়ীতে যাতায়াতের কাজে ব্যবহার করে চলছেন।
বৈশ্বিক করোনা মহামারীতে এ উপজেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশই এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কোন সহযোগীতা পাননি। করোনা রোগীদের নিয়মিত খোজখবর ও এতদসংক্রান্ত কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিংয়ের কথা থাকলেও আক্রান্তরা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাক্ষাত পর্যন্ত পাননি। কোনদিন কোন রোগীর খোজ নেননি বলে জানিয়েছেন শহরের বীরমুক্তিযোদ্ধা খয়রাত আলী, জগন্নাথপুর গ্রামের মারফত আলী, বলিদ্বারা গ্রামের আব্দুস সালাম সহ অনেকে। এসব করোনা আক্রান্তরা জানান, অসুস্থ থাকাকালীন তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাক্ষাত কিংবা কোন সহযোগীতা পাননি।
আমাদের প্রতিনিধি এই স্বাস্থ্য প্রশাসকের সাক্ষাতের জন্য গত ১ সপ্তাহে কয়েকদিন অফিসে গিয়েও তার দেখা পাননি। ২৯ আগষ্ট থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ২ দিন ৩ ঘন্টা অফিস করেছেন তিনি। বৃহষ্পতিবার দুপরে তার জেলা সদরের নিজ মালিকানাধীন স্বপ্ননীড় নামীয় ৫ তলা বাসভবনের নীচে উপজেলা অফিসের জন্য বরাদ্দকৃত ঢাকা মেট্রো-১৮-৫৭০৮নং গাড়ীটি পার্কিং অবস্থায় দেখা যায়। স্থানীয়দের মধ্যে আব্দুস সুবহান ও রাজা মিয়া জানান প্রায় বেশ কয়েকমাস ধরেই এই সরকারী গাড়ীটি ঐ বাসায় সার্বক্ষনিক দেখা যাচ্ছে। ব্যাক্তিগত কাজে সরকারী গাড়ী ব্যবহার করে এই কর্মকর্তা প্রতিমাসে অফিস থেকে ফুয়েল বাবদ প্রায় ১৫-২০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন যা হিসাব রক্ষন অফিসের সুত্র নিশ্চিত করেছে।
অফিস প্রধানের এই অননুমোদিত অনুপস্থিতির কারনে হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার থাকার পরেও রাত ১০টার পরে জরুরী বিভাগে কোন ডাক্তার থাকেননা। এর আগে ডাক্তাররা নিয়মিত ডিউটি করলেও অফিস প্রধানের এই অনুপস্থিতির সুযোগে ডাক্তাররা তাদের সেবা সঠিকভাবে দিচ্ছেননা, ফলে প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারন মানুষ। দিনের বেলা অফিস আওয়ারেও দুপুর ১টার পরে আর ডাক্তাররা রোগী দেখেননা ফলে ডাক্তারের চেম্বার ও ডিসপেন্সারী বন্ধ হয়ে যায় দুপুর ১ টায়। ১১ টা ১ টা পর্যন্ত ডাক্তাররা রোগী দেখেন। এখানে বর্তমানে ১৫ জন ডাক্তার থাকলেও সমন্বয়হীনতা ও তদারকির অভাবে এলাকার মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এদিকে অফিস প্রধানের এই অনুপস্থিতির কারনে ৩ লাখ জনসাধারনের এই উপজেলার ১০ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোর কার্যক্রমও ঝিমিয়ে পড়েছে। তারা দায়সারাভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করায় এ বিভাগের প্রতিটি সেকশনে বন্ধাত্বের সৃষ্টি হয়েছে। বিশাল জনবলের এ বিভাগে চলছে রাম রাজত্ব। যে যার মত চলছে করছে যেন বলার কেউ নেই।
এসব বিষযে উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান বলেন এই কর্মকর্তা যোগদানের পর থেকেই যত বিভ্রাট। তিনি নিয়মিত সভা করেননা। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির কোন সভা হয়না, কোন সমন্বয় বা মনিটরিং নেই, তিনি নিজের খেয়াল খুশিমত চলেন। ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ.সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আখতারুল ইসলাম বলেন, আমিও শুনেছি নানা রকম অব্যবস্থাপনার কথা কিন্তু মাসিক মিটিং না হলে এসবের সমাধান হয় কি করে? কমিটির সদস্য ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রেজাউল করিম বলেন, আমি এ বিষয়ে কোন কিছু জানিনা। তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুল জব্বার শিকদার বলেন অভিযোগগুলো সত্য নয়।