এম. আইউব

যশোরে ছয়টি অ্যাসেম্বল সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সবজি ও ফুল চাষিকে মধ্যস্বত্ত¡ভোগীদের হাত থেকে রক্ষা করতে এসব সেন্টার স্থাপনের কাজ শুরু করেছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। ইতিমধ্যে সাইট সিলেকশনের কাজ শুরু হয়েছে। এই ছয়টি সেন্টার স্থাপিত হলে চাষি আড়তদারদের হাত থেকেও রক্ষা পাবেন।
যশোরে ব্যাপক পরিমাণে সবজি ও ফুল উৎপাদন হয়ে থাকে। এখানকার সবজি ও ফুল দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়। এমনকি বিদেশেও রপ্তানি হয় যশোরের সবজি-ফুল। তারপরও কৃষক ন্যায্যমূল্য পায় না বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে। কৃষকের অভিযোগ, আড়তদারদের মাধ্যমে তাদের সবজি বিক্রি করতে হয়। আবার কখনো কখনো এক শ্রেণির ব্যবসায়ী কৃষকের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে সবজি কিনে আড়তে তোলে। সেখান থেকে পাইকাররা কিনে নিয়ে যায়। এসব কারণে ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হন চাষি। ফুলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। ফুল চাষিরা স্থানীয়ভাবে ঠিকমতো ফুল বিক্রি করতে পারছেন না। তাদের নির্দিষ্ট কোনো মার্কেট নেই। যে কারণে চাহিদা মতো মূল্য তারা পাচ্ছেন না- এমন বক্তব্য কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের।
এসব অবস্থা বিবেচনা করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ফুলের রাজধানী যশোরে অ্যাসেম্বল সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। ছয়টি অ্যাসেম্বল সেন্টার স্থাপন করা হবে এখানে। সদর উপজেলার বারীনগর, বাঘারপাড়ার পোলেরহাট, ঝিকরগাছা সদর, গদখালি ও পানিসারা এবং শার্শার বাগআঁচড়ায় স্থাপিত হচ্ছে এসব অ্যাসেম্বল সেন্টার।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের জেলা বাজার কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে সাইট সিলেকশনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি সেন্টারের জন্যে ২০ শতক করে জায়গা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কৃষককে মধ্যস্বত্ত¡ভোগী বিশেষ করে আড়তদারদের হাত থেকে রক্ষা করতে স্থাপন করা হচ্ছে ছয়টি অ্যাসেম্বল সেন্টার। এরমধ্যে দু’টিতে ফুল এবং বাকি চারটিতে সবজি বিক্রি হবে। কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসল নিকটস্থ অ্যাসেম্বল সেন্টারে আনবেন। সেখান থেকে সরকারি পাইকাররা কিনে নিবে। এরমধ্যে কোনো আড়তদার কিংবা মধ্যস্বত্ত¡ভোগী থাকবে না। ফলে, তারা আর্থিকভাবে লাভবান হবে।
বর্তমানে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের চাষিকে ঘাম ঝরানো ফসল নিয়ে আড়তদারদের কাছে ধর্না দিতে হয়। আড়তদাররা তাদেরকে এক প্রকার জিম্মি করে ফেলে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ আদায় করে বিক্রি করে দেওয়ার কথা বলে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় কৃষক আড়তদারদের কথায় তার কষ্টার্জিত ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হন। অনেক সময় পাইকাররা আড়তদারদের সাথে যোগসাজস করে কৃষককে ঠকায় বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও দু’জন আড়তদার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ দু’ আড়তদার তাদের নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান। তাদের বক্তব্য, প্রতিদিনের বাজার দর বিবেচনা করে কৃষককে মূল্য পরিশোধ করা হয়। তারা কেবলমাত্র কমিশন নিয়ে থাকেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষকের ঘাম ঝরিয়ে উৎপাদিত ফসলের অর্থে আড়তদারসহ অন্যরা যাতে ভাগ বসাতে না পারে সেই চিন্তা করছে সরকার। তার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে অ্যাসেম্বল সেন্টার স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।
জেলায় সবজি ও ফুলের জোন হিসেবে পরিচিত এলাকায় এসব অ্যাসেম্বল সেন্টার স্থাপিত হওয়ায় কৃষকের পরিবহন খরচ কমে যাবে। বাঁচবে সময়ও। স্বচ্ছন্দে তারা পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। সবমিলিয়ে কৃষক অনেক বেশি লাভবান হবেন বলে মনে করছেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জেলা বাজার কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান বলেন, কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করা জরুরি। তার অংশ হিসেবে যশোরে ছয়টি অ্যাসেম্বল সেন্টার স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। জায়গা দেখার কাজ চলছে। দ্রæত জায়গা চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে জানান তিনি। এরপরই স্থাপনার কাজ শুরু হবে। ছয়টি অ্যাসেম্বল সেন্টার নির্মাণে কত টাকা ব্যয় হবে সেটি জানাতে পারেননি জেলা বাজার কর্মকর্তা।