
ইয়াসমিন আক্তার নামে ১৪ বছর বয়স্ক একটি মেয়ে ঢাকায় গৃহকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিল। ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট সে ঢাকা থেকে দিনাজপুরের দশমাইল এলাকায় নিজ বাড়িতে ফিরছিল। পথিমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাকে পুলিস ভ্যানে করে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর তিন পুলিশ সদস্য তাকে গণধর্ষণ করে এবং তারপর হত্যা করে।
ইয়াসমিন গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরে বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত ইয়াসমিন আক্তার নামক ১৪ বছর বয়স্ক এক বালিকার গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাকে নির্দেশ করা হয়। এ ঘটনার ফলে দিনাজপুরে তীব্র প্রতিবাদ হয়েছিলো।আমরা যশোরেও ইয়াসমিন হত্যার প্রতিবাদে সুষ্ঠু বিচার চেয়ে রাজপথে নেমেছিলাম। অনেকেরই মনে থাকার কথা। তারপর দিন মাস বছর গড়িয়ে যাচ্ছে দেশে নারী ধর্ষণ নির্যাতন ও ধর্ষনের পর মেরে ফেলার ঘটনা ঘটেই চলছে তাকে থামাবার কোন উদ্যেগই নেই। যেন এসব খুবই মামুলি ঘটনা। কিছু সচেতন মানুষ বিবেকের তাড়নায় মাঠে নামে বিচার দাবী করে তারপর আবার চুপচাপ হয়ে যান। আবার ঘটনা ঘটে আবার পথে নামেন। দু'চারটে বিচার হয়। বাকিরা (ধর্ষক) অদৃশ্য হাতের ছত্রছায়ায় নিশ্চিন্তে থেকে একই কুকর্ম পুনরায় করে আবার পার পেয়ে যায়। যাবে না কেন ধর্ষণ আইন গুলোই তো তেমন। একজন ধর্ষিতাকে বিচার চাইতে তাকে আরো বারবার ধর্ষিত হতে হয়। একবার পুলিশের কাছে হাসপাতালে টেষ্ট করাতে যেয়ে সর্বোপরি আদালতে।
বর্তমানে আমরা নারী শিশু কাউকেই নিরাপত্তা দিতে পারছি না। সংবাদপত্রে যেটা বের হয় আসলে ঘটনা তার চেয়েও অনেক বেশী ঘটে। কিন্তু এগুলো জানা যায় না, কারণ মানুষ সহজে মামলা করে না কিংবা পুলিশের কাছে যায় না। ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতার যেসব ঘটনা ঘটে তার একটি অংশ জানা যায় না৷ এ বিষয়ে কোনো মামলা হয় না৷ এগুলো খানিকটা সঠিক । আর যেগুলোর মামলা হয় বিশেষ করে ধর্ষণের ক্ষেত্রে সেখানে শতকরা মাত্র তিন ভাগ ঘটনায় শেষ পর্যন্ত অপরাধী শাস্তি পায়৷ আর ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় শাস্তি হয় মাত্র শূন্য দশমিক তিন ভাগ৷ তাহলে বোঝা যাচ্ছে এ ধরনের কোনো ঘটনায় বিচার হয় না৷
অথচ করোনার ভয়াবহতার চেয়ে এখন ধর্ষণ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। ধর্ষকের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাদ যাচ্ছেনা কন্যাশিশু আদিবাসী নারী ও বৃদ্ধ নারীরাও। এমনকি রেহাই পাচ্ছে না বাক বা বুদ্ধি প্রতিবন্ধীরাও। শুধু তাই নয়, ধর্ষণ শেষে নির্মম নির্যাতন, এমনকি চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিয়ে কিংবা আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। মানুষ নামধারীরা এক বিভৎস্য রূপ নিয়ে হাজির হচ্ছে আমাদের কন্যাশিশু, কিশোরী ও নারীদের সামনে।
বাংলাদেশে ধর্ষণের মামলার বিচার হচ্ছে কতটা?
২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ছয়টি জেলায় ধর্ষণের মামলা পর্যবেক্ষণ করেছেবিশেষজ্ঞরা এ সময়ে ৪৩৭২টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে, কিন্তু সাজা হয়েছে মাত্র পাঁচ জনের।
'ধর্ষণের বিচার পেতে অনেক কাঠখড়ি পোড়াতে হয় আইন আছে কিন্ত আইনের মধ্যে অনেক ফাঁক- ফোকর।
তবে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন ধর্ষণ সর্বকালের রেকর্ড ইতোমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে সেই সাথে ভয়াবহতা। চিরাচরিত সনাতন পদ্ধতির বিচারের বাণীও নিরবে নিভৃতে কাঁদছে। ধর্ষণের আসামী খালাস পেয়ে যাচ্ছে স্বাক্ষীর অভাবে। আর ধর্ষিতা বিচার চেয়ে বারবার ধর্ষিত হচ্ছে। ধর্ষণের কঠিন আইন করার জোর দাবী তুলছি । ধর্ষণের একমাত্র আইন হোক ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্য দন্ড কার্যকর করা।
শ্রাবণী সুর
সভাপতি
রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ