
স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া প্রতিদিনের তথ্য অনুসারে, সারা দেশে এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছেন তিন লাখ ৭৯ হাজার ৭৩৮ মানুষ। এদিকে শুধু রাজধানী ঢাকার ৪৫ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে এক জরিপে জানা গেছে। করোনার প্রকোপের মধ্যে রাজধানীতে একটি খানা জরিপ চলেছে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত। সে সময়ে আইইডিসিআর-এর তথ্যমতে, রাজধানী ঢাকাতে করোনা শনাক্ত হয় ৬৫ হাজার ৭৯০ জনের। আর খানা জরিপের হিসাব ধরলে, ঢাকাতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় এক কোটির মতো। তাহলে আমাদের প্রশ্ন, আসলে সংখ্যাটা কতো?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত তথ্যের বাইরেও অসংখ্য মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। লক্ষণ-উপসর্গ না থাকার কারণে তারা পরীক্ষার বাইরে থেকেছেন। এসব কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, দেশের কতো মানুষ তাহলে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন? তবে কেবল বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর সব দেশেই শনাক্ত হওয়া ব্যক্তির চেয়ে আক্রান্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা বেশি মন্তব্য করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারির সময়ে সবাইকে আরটিপিসিআর টেস্টের আওতায় আনাও সম্ভব নয়। দেশে প্রথম করোনার সেরোসার্ভিলেন্স নিয়ে করা এক যৌথ গবেষণায় ঢাকাতে ৪৫ শতাংশ মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) যৌথভাবে এই গবেষণা করে। তবে শুরু থেকেই সরকারি তথ্য নিয়ে সাধারণ মানুষ এবং জনস্বাস্থ্যবিদরা সংশয় প্রকাশ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খানা জরিপ আর স্বাস্থ্য অধিদফতরের মোট হিসাবকে কোনোভাবেই তুলনা করা যাবে না, কোনও দেশেই কেউ করবে না। বাংলাদেশের এই যৌথ গবেষণার মতো একইরকম স্টাডি ভারতের মুম্বাই, পুনে এবং দিল্লিতে হয়েছে। সেখানেও শনাক্ত হওয়া রোগীর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ আক্রান্ত। দেশে সংক্রমণ ব্যাপক হলেও সেটা মানুষ বুঝতে পারেনি। জনস্বাস্থ্যবিদদের ধারণা ছিল, প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু সেটা যে এতো বেশি তা ধারণার বাইরে ছিল।
অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় ঢাকার ৪৫ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে ঢাকার বস্তিগুলোতে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৪ শতাংশ মানুষ। অর্থাৎ ঢাকার ৪৫ শতাংশ মানুষের শরীরে ইতোমধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। অপরদিকে, ঢাকার বস্তিগুলোর ৭৪ শতাংশ মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। আর তাদের শরীরেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যারা ইতোমধ্যেই কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসেবে বাইরে থাকার প্রধান কারণ, শতকরা ৮২ শতাংশ মানুষই লক্ষণ উপসর্গবিহীন। আর লক্ষণ না থাকায় তারা পরীক্ষা করাতে যাননি। উদাহরণ দিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ১০০ জনের পরীক্ষাতে উপসর্গহীন ৮২ জন মানুষকে প্রথমেই বাদ দিলে থাকে ১৮ জন। এই ১৮ জনের মধ্যে কিছু মানুষ পরীক্ষা করাতে গিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের যে তথ্য আমরা পাই, সেটা হচ্ছে শুধু পরীক্ষা করাতে আসা মানুষের। এছাড়া মানুষ পরীক্ষা করেছে কম, অনেকে চিকিৎসা নেয়নি, বাড়ির কাছের ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেয়েছে। যার কারণে মানুষ বুঝতে পারেনি। তাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য আর এই গবেষণার তথ্য মিলবে না বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।