
২০১৭ সালে জাতীয় শুটিং প্রতিযোগিতায় যশোর জেলা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন তিনি। এছাড়াও জাতীয় শুটিং প্রতিযোগিতার জন্যে ঢাকা, রাজশাহী ও চট্রগ্রামে পর পর চার বছর অংশ গ্রহণ করেছেন। ভলিবল খেলাতেও পারদর্শী তিনি। বিয়ের আগে খেলাধুলায় রেখেছেন সাফল্যের কৃতিত্ব। বিয়ের পর খেলোয়াড় জীবনে না থাকলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে তিনি তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। বর্তমানে একজন সফল সাবেক এ্যাথলেটার, সফল গৃহবধূ, মেধাবি শিক্ষার্থী, শিক্ষিকা, বুটিক কর্মী ও একাধিক গৃহপালিত প্রাণির সফল খামারি।
বলছিলাম যশোরের বাঘারপাড়ার ইন্দ্রা গ্রামের আশরাফুজ্জামান মুনের স্ত্রী এবং একই উপজেলার তালবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের দ্বিতীয় সন্তান সামিয়া রাজ্জাক পপির গল্প।
পপি উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময়ে বিয়ে করলেও অন্য গৃহবধূর মতো জীবন বেছে নেননি। লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসারের আর্থিক অবস্থা উন্নয়নের জন্যে বিভিন্ন বাণিজ্যিক কাজের সাথে যুক্ত হয়েছেন।
পাঁচ বছর বয়সী এক ছেলে সন্তানের জননী পপি বাঘারপাড়া সরকারি পাইলট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজে পড়ালেখা শেষ করেন। এরপর বিএ সম্মান শ্রেণিতে (সমাজবিজ্ঞান) ভর্তি হন যশোরের বাঘারপাড়া মহিলা কলেজে। এতদিনে অনার্স শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু করোনার কারণে পরীক্ষার মাঝপথেই তা আটকে যায়। এখন তিনি বুটিকের কাজ, গরু, পাখি, মুরগি ও হাঁসের খামার নিয়েই ব্যাস্ত সময় পার করছেন। একাজে তার সর্বক্ষণিক সঙ্গী শ্বাশুড়ি মঞ্জুয়ারা বেগম। এগুলো বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে সহযোগিতা করেন তার স্বামী আশরাফুজ্জামান মুন। দু’জনের (শ্বাশুড়ি-বৌমা) অক্লান্ত পরিশ্রমে পৌঁছে যাচ্ছেন তারা কাংখিত লক্ষ্যে।
সরেজমিনে তার বাড়িতে ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির একপাশে রয়েছে বড় পুকুর। পুকুর পাড়েই তৈরি করেছেন হাঁস ও মুরগির খামার। যেখানে দ্রুত বর্ধনশীল ৭০টি পেকিন হাঁস ও সাতশ’টি টাইগার মুরগি। বাঘারপাড়ায় এ দু’জাতের হাঁস ও মুরগির খামার গড়ে তুলেছেন পপিই প্রথম। তিনি বাড়ির উঠানে তৈরি করেছেন সিরাজি ও দেশি গ্রিবাজ জাতের আটজোড়া কবুতরের খামার। যা বিভিন্ন এলাকার কবুতরপ্রেমীরা বাড়িতে এসে উপযুক্ত মূল্যে কিনে নিয়ে যান। আছে ২০টি সৌন্দর্য্যবর্ধক লাভবার্ড পাখি। এছাড়াও আছে চারটি গরু ও দু’টি ছাগল।
পপি বলেন, ‘শ্বশুরবাড়িতে এসেই দেখেছি শ্বশুরের চিকিৎসার (ক্যন্সারে আক্রান্ত অবস্থায় মারা যান) কারণে আর্থিক দেনার দায়ে জর্জরিত এই পরিবার। তখন থেকেই সংকল্প করি আমাকে কিছু করতে হবে। তারপর স্বল্প পরিসরে আমি ও আমার শ্বাশুড়ি মিলে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালন ও বুটিকের কাজ শুরু করি।এখনো তা চলমান’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সব সময় চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। তাই নতুন নতুন জাতের প্রাণি সংগ্রহ করি। এসকল প্রাণি ও তাদের খাদ্য সংগ্রহের কাজে সহযোগিতা করেন আমার স্বামী আশরাফুজ্জামান মুন। এখন আমার পরিবার আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী’।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে আমি কোনো পরামর্শ গ্রহণ করি না। তবে মাঝে মাঝে সেখান থেকে হাঁস, মুরগিসহ বিভিন্ন প্রাণির ভ্যাকসিন এনে থাকি।
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘নারীরা সমাজে অবহেলিত। নিজেকে পরিবারের বোঝা মনে করেন তারা। এ থেকে নারীদের বেরিয়ে এসে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে’।