এম. আইউব

আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে যশোরে বাজার তদারকি শুরু করেছেন কর্মকর্তারা। সরকারিভাবে দাম নির্ধারণের প্রথম দিন বুধবার যশোরের দু’টি বাজারে অভিযান পরিচালনা করেছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি মূল্যে আলু বিক্রি করায় এদিন চার ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। মুনাফাখোরদের বিরুদ্ধে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে আলুর দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে যে, ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হয়েছে সরকার। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সম্মিলিতভাবে সারাদেশে আলুর দাম বেধে দিয়েছে। সেই অনুযায়ী হিমাগার পর্যায়ে ২৭, পাইকারি এবং আড়ত পর্যায়ে ৩০ এবং খুচরা ৩৫ টাকা দামে আলু বিক্রি করতে হবে। এর বেশি দামে বিক্রি করলে কোনোভাবেই ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বুধবার প্রথমদিন শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড ও রাজারহাটে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় বেশি দামে আলু বিক্রি করার অপরাধে চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের আরিফ স্টোরকে এক হাজার পাঁচশ’ ও রেজাউলকে এক হাজার এবং রাজারহাটে মিজানুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ীকে এক হাজার ও মোমিন ভান্ডারকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যশোরে বর্তমানে আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। যদিও জেলা বাজার কর্মকর্তার দাবি, ৪০ টাকার নীচে আলুর দাম রয়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের যশোর জেলা বাজার কর্মকর্তা সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে আলুর দাম নির্ধারণ করে দেন। হিমাগারের সামনে লাল শালু কাপড়ে পাইকারি ২৩ টাকা এবং খুচরা সর্বোচ্চ ৩০ টাকায় আলু বিক্রি করতে হবে বলে লিখে দিতে বলেন। কিন্তু এই নির্দেশনা কেউই মানেনি। একদিনের জন্যেও ওই দামে বিক্রি হয়নি আলু। আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমাগার মালিক ও আড়তদারদের সাথে দফায় দফায় সভা করেন এই কর্মকর্তা। তারপরও বাজারে আলুর দামে সামান্যতম প্রভাব পড়েনি। যখন দাম বেধে দেওয়া হয় তখন খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছিল ৩৫-৩৬ টাকা। এর কয়েকদিনের মধ্যে আলুর দাম বেড়ে চল্লিশে গিয়ে ঠেকে। পর্যায়ক্রমে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় আলু। সিন্ডিকেটের কবলে পড়েন সাধারণ মানুষ। তাদের অসহায়ের মতো ৫০ টাকায় আলু কিনতে হয়।
খুচরা বিক্রেতারা অভিযোগ করেন, মজুতদাররা কারসাজি করে আলুর দাম বাড়িয়েছে। খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, কার্যকর তদারকির অভাবে যশোরে আলুর দাম নাগালে আসছে না।
এ বছর হিমাগারে যখন আলু রাখা হয় তখন দাম ছিল মাত্র ১৪ টাকা। এরপর প্রতি কেজিতে হিমাগার ভাড়া বাবদ ৩.৬৬ টাকা, বাছাই খরচ ৪৫ পয়সা ও ওয়েটলস বাবদ ৮৮ পয়সা খরচ হয়। সবমিলিয়ে প্রতি কেজি আলুতে সর্বসাকুল্যে খরচ পড়ে ১৮.৯৯ টাকা। তখন সংরক্ষণকারীদের কেজিতে ৩.৫১ টাকা লাভ হয়। এ তথ্য দেন সরকারি কর্মকর্তারাই।
গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে যশোরের বাজারে আলুর দাম হু হু করে বাড়ছে। এ কারণে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এ বছর যশোরে বাণিজ্যিকভাগে আটটি কোল্ডস্টোরে সংরক্ষণ করা হয় খাবার আলু। আটটি কোল্ডস্টোরে সর্বমোট ৩৬ হাজার সাতশ’ ৪৫ মেট্রিকটন আলু মজুত করা হয় বলে জেলা বাজার কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এআরএ রাজারহাট কোল্ডস্টোরে দু’হাজার একশ’ ৫০ মেট্রিকটন, টাওয়ার কোল্ডস্টোরে চার হাজার ছয়শ’ ৫০ মেট্রিকটন, সেনাকল্যাণ কোল্ডস্টোরে চার হাজার মেট্রিকটন, রজনীগন্ধ্যায় ছয় হাজার আটশ’ মেট্রিকটন, আলী কোল্ডস্টোরে এক হাজার পাঁচশ’ মেট্রিকটন, ডিভাইন কোল্ডস্টোরে চার হাজার নয়শ’ মেট্রিকটন ও সুন্দরবন কোল্ডস্টোরে এক হাজার সাতশ’ ৪৫ মেট্রিকটন আলু সংরক্ষণ করেন যশোরের পেশাদার মজুতদাররা।
এদিকে, যশোরের সকল কোল্ডস্টোর কর্তৃপক্ষকে সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে, যদি নির্দেশনার ব্যতিক্রম হয় তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালাবে। কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে জেলা বাজার কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে প্রত্যেকেরই আলু বিক্রি করতে হবে। এতোদিন নানাভাবে এড়িয়ে গেছে অনেকেই। এখন আর সেই সুযোগ নেই। যেহেতু কৃষি বিপণন অধিদপ্তর নির্দেশ দিয়েছে, একারণে সেটি যেকোনো মূল্যে বাস্তবায়ন করা হবে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যশোরের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিবের কাছে এ বিষয়ে জানতে ফোন করলে তিনি তা কেটে দেন।