
ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদে ৩৬ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ৮টি “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মুর্যাল” নির্মাণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। মুর্যাল নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম, দূর্নীতি, নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে মুর্যাল গুলোর দায় সারা ভাবে তৈরি করে মোটা অংকের অর্থ ধাবলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলজিইডি প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে কাগজ কলমে টেন্ডার দেখানো হলেও ৩৬ লক্ষ টাকার নির্মান কাজ করা হয়েছে পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে কোটেশনের মাধ্যমে।
জানা গেছে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের এডিপি রাজস্ব উদ্বৃত্ত খাত থেকে ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৮টি মুর্যাল নির্মাণের জন্যে ৩৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ নেয় উপজেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। সরকারি নিয়ম কানুন ও নির্মাণ কাজের নীতিমালা ভঙ্গ করে ব্যাক্তি স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রেজাউল করিম, উপজেলা প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন ও কাজ বাস্তবায়নের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বঙ্গবন্ধুকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে ও পরিকল্পিত ভাবে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে দায় সারা ভাবে মুর্যাল তৈরি করেছে। নির্মিত ম্যুরালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করে ব্যাঙ্গভাবে করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর আস্থা ভাজন পীরগঞ্জ টিএন্ডটি রোড এলাকার মিজানুর রহমান মিজান কে দিয়ে অতি গোপনে এসব মুর্যাল তৈরি করে সিংহভাগ অর্থ আত্মসাৎ করেছে সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া ম্যুরালগুলো অভিজ্ঞ ও সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি প্রাপ্ত ব্যক্তিদের দ্বারা ডিজাইন না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে কম খরচে দায় সারা ভাবে ডিজাইন করানো হয়েছে। ফলে বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের প্রতিচ্ছবির পরিমাপ ও ডিজাইন সঠিক হয়নি বলে অভিজ্ঞরা ধারনা করছেন। এসব নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে দায়সারা ভাবে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল তৈরি করায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে ভোমরাদহ, খনগাঁও, কোষারাণীগঞ্জ, সৈয়দপুর, হাজীপুর, সেনগাঁও, জাবরহাট ও বৈরচুনা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে এসব বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী রাণীশংকৈল উপজেলায় ইউএনও, স্থানীয় জাতীয় ও ইংলিশ ন্যাশনাল ডেইলি পত্রিকায় ম্যুরাল নির্মাণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ঠিকাদার নিয়োগ করে যথা নিয়মে বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল নির্মাণ করেছে। ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি ম্যুরাল পরিমাপ ও ডিজাইন সঠিক না হওয়ায় সম্প্রতি তিনি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন করে নিয়ম অনুযায়ী তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন নিযুক্ত ঠিকাদারকে। অথচ পীরগঞ্জ উপজেলায় নির্মিত ৮টি ব্যাঙ্গ ম্যুরাল ভাঙ্গা তো দুরের কথা নির্মাণ কাজের সময় সঠিক ভাবে কাজের তদারকি করেননি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজাউল করিম ও প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন। পীরগঞ্জ উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মিত ৮টি ম্যুরাল ব্যাঙ্গ ও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তৈরি না হওয়ায় জরুরী ভিত্তিতে অপসারণ করে নতুন করে তৈরি করা প্রয়োজন বলে সুশীল সমাজ মনে করেন। উল্লেখ্য যে, একই অর্থ বছরে রাজস্ব উদ্বৃত্ত এডিপি খাত থেকে ৩ লক্ষ ৩৩ হাজার ৫৯৭ টাকা মূল্যে উপজেলা পরিষদ চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অদম্য কর্ণার নির্মাণের জন্য টাকা বরাদ্দ নেওয়ার ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ কাজের কোন অস্থিস্ত খুজে পাওয়া যায়নি। এ প্রকল্পের সমুদয় অর্থ আতœসাৎ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারনা। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রেজাউল করিম দুর্নিতীর কথা অস্বীকার করে এ প্রতিনিধিকে বলেন ম্যুরাল নির্মান কাজগুলো ইউপি চেয়ারম্যানদের মতামতক্রমে কোটেশনে করা হয়েছে। তবে উপজেলা প্রকৌশলীর স্বাক্ষরিত রিপোর্টে টেন্ডারের মাধ্যমে ম্যুরাল নির্মানের তথ্য পাওয়া গেছে, বলা হলে তিনি বলেন, কাজগুলোতো প্রকৌশলীর দপ্তর থেকেই হয়ে থাকে তাই টেন্ডার হলেও হয়ে থাকতে পারে তবে এটা টেন্ডারেও করা যায় কোটেশনেও করা যায়। অপর দিকে ম্যুরাল নির্মানকারী ঠিকাদার মিজানুর রহমান মিজান বলেন, চেয়ারম্যান সাহেবরা বলেছেন আমি কাজ করে দিয়েছি মাত্র। কাজটি কিভাবে নিয়েছেন জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এটি কোটেশনের মাধ্যমে আমাকে দেয়া হয়েছিল। কাগজ কলমে টেন্ডার দেখানো, নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা, অর্থ ঘাপলা ও ব্যাঙ্গ মুর্যাল নির্মাণ কারীদের বিরুদ্ধে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার সচেতন মহল।