
গোলাম মোস্তফার কাছ থেকে দাদনে দু’ লাখ টাকা নিয়েছিলেন আটক কাঠ ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ। তিনি বিভিন্ন সময় সুদের ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করলেও আসল দু’ লাখ টাকার জন্যে চাপ সৃষ্টি করে আসছিলেন গোলাম মোস্তফা। এ ঘটনার জের ধরে চুড়ামনকাটির কাঠ ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে প্রধান অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল মামুন। মামুন চুড়ামনকাটি এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে।
এর আগে কাঠ ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন এবং হত্যার সাথে জড়িত কাঠ ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও তার সহকারী সদর উপজেলার শাখারিগাতি গ্রামের মাজেদ মোল্লার ছেলে সহিদুল ইসলামকে আটক করে ডিবি পুলিশ। একইসাথে তাদের কাছ থেকে গোলাম মোস্তফার মোবাইল ফোন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু ও একটি মোটরসাইকেলও উদ্ধার করে তারা। বৃহস্পতিবার বিকেলে আটক দু’জনকে আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সাইফুদ্দীন হোসাইন তাদের জবানবন্দি গ্রহণ শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিকে, আসামি আটকের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশসুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন প্রেস ব্রিফিং করেন। তিনি জানান, গোলাম মোস্তফা চুড়ামনকাটি এলাকার একজন বড় কাঠ ব্যবসায়ী ছিলেন। দাদনে দু’ লাখ টাকা নিয়ে ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করলেও আসল দু’ লাখ টাকার জের ধরে খুন করে আব্দুল্লাহ। আব্দুল্লাহও এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী। ফলে, গোলাম মোস্তফা না থাকলে ওই এলাকায় কাঠ ব্যবসার একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তারের স্বপ্ন দেখেন আব্দুল্লাহ। গোলাম মোস্তফা বয়সে বড় হলেও আব্দুল্লাহকে নেশার জগতে নিয়ে যান তিনি। এসব ক্ষোভে গোলাম মোস্তফাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আব্দুল্লাহ। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন বিকেলে ব্যবসায়িক প্রলোভন দেখিয়ে গোলাম মোস্তফাকে ডেকে আনা হয়।
এর আগে তার বন্ধু বাসচালক শহিদুলকেও টাকার প্রলোভন দেখিয়ে চুড়ামনকাটিতে ডেকে আনা হয়। তারা তিনজন মোটরসাইকেলে করে চৌগাছার সলুয়ায় যান। সেখানে তিনজনে ফেনসিডিল পান করেন। পরে তারা মোটরসাইকেলে চুড়ামনকাটিতে ফিরে আসেন এবং একজন মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে গাঁজা কিনে ঘোনা গ্রামের বুড়ি ভৈরব নদের পাশের একটি মেহগনি বাগানে যান। ওই বাগানে মোটরসাইকেল রেখে তারা বুড়ি ভৈরব নদের পাড়ে খনন করা মাটির ঢিবিতে বসে গাঁজা সেবন করেন। কিন্তু এরই এক ফাঁকে সুযোগ বুঝে পেছন থেকে গোলাম মোস্তফার গলায় চাকুর পোচ দিলে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এরপর মাটির ঢিবি থেকে নীচে বুড়ি ভৈরব নদের পাড়ে পড়ে যান গোলাম মোস্তফা। সাথে সাথে আব্দুল্লাহ ও শহিদুল সেখানে যান। এ সময় শহিদুল হাত ধরে রাখলে আব্দুল্লাহ চাকু দিয়ে গলা কেটে তাকে হত্যা করেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর শহিদুল নিহতের মানিব্যাগ নিয়ে নেন। আর আব্দুল্লাহ মোবাইল ফোন সেট নিয়ে কিছুদূরে ফেলে দেন। এরপর দু’জনে গোলাম মোস্তফার লাশ বুড়ি ভৈরব নদে ফেলে কচুরিপনা দিয়ে ঢেকে দেন।
উল্লেখ্য, গত ২৫ অক্টোবর সকালে সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের ঘোনা গ্রামের বুড়ি ভৈরব নদ থেকে কাঠব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। ফলে ক্লুলেস এই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ অভিযানে নামে। এরপর নানা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ গত বুধবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে কাঠব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে আব্দুল্লাহকে আটক করে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সালাহউদ্দিন শিকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম (ডিএসবি), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক সার্কেল গোলাম রব্বানী, ডিবি পুলিশের ওসি সোমেন দাস, এসআই মফিজুল ইসলাম, নূর ইসলাম ও শামীম হোসেন।