
দীর্ঘ প্রায় আট মাস পর প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষার্থীদের নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে স্কুল প্রস্তুতের কাজ চলছে। আজ রোববারের মধ্যে যশোরের ১২শ’ ৮৯ টি স্কুল প্রস্তুত করা হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পাঠানো গাইডলাইন অনুযায়ী স্কুলগুলো প্রস্তুত করতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। অধিদপ্তর থেকে ইতিমধ্যে ১১ টি তথ্য চাওয়া হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত যশোরের বেশিরভাগ প্রাইমারি স্কুল গোছগাছ সম্পন্ন হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
করোনার কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। সেই থেকে প্রায় আট মাস ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা বই বিমুখ হচ্ছে বলে শিক্ষাবিদরা বলছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ইতিমধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্যে অ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতি চালু করেছে। এর ফলে, এই চার শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কিছুটা হলেও বইমুখি হচ্ছে।
আগামী ১৫ নভেম্বরের পর কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রাইমারি স্কুলে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কারণে আজ ৮ নভেম্বরের মধ্যে স্কুল প্রস্তুত করতে হবে। আর এই স্কুল প্রস্তুতের ক্ষেত্রে ১১ টি বিষয়ে অধিদপ্তরকে জানাতে বলা হয়েছে। যেসব বিষয়ে জানাতে হবে তা হচ্ছে, কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা, শিক্ষার্থীর সংখ্যা (১ম-৫ম), শ্রেণিকক্ষ ও বেঞ্চের সংখ্যা, বিদ্যালয় কত শিফটে পরিচালনা করা যাবে, তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে প্রতি শ্রেণিকক্ষে কতজন শিক্ষার্থী বসানো যাবে, কতজন শিক্ষার্থীকে প্রতি শিফটে বিদ্যালয়ে আনা যাবে, ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত কোন শ্রেণির শিক্ষার্থী সপ্তাহে কোন কোন দিনে আসবে, চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্যে স্যাভলন, সাবান, ব্লিচিং পাউডার, ইনফ্রারেড থার্মোমিটার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি পর্যাপ্ত সংখ্যক কেনা হয়েছে কিনা, ময়লা ফেলার জন্যে ঢাকনাযুক্ত পৃথক ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা এবং বিদ্যালয় অঙিনা, শ্রেণিকক্ষ, আসবাবপত্র, টয়লেট, ওয়াশব্লক ইত্যাদি পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে কিনা। করোনা প্রতিরোধ সামগ্রী আপাতত প্রধান শিক্ষকদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জোগাড় করতে হবে। এরপর আগামী বছরের স্লিপের বরাদ্দ থেকে এসব খরচ সমন্বয় করা হবে বলে একজন প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের দু’ শিফটে ক্লাস নেয়া হবে। প্রতিটি বেঞ্চে তিন ফুট দূরত্বে শিক্ষার্থীদের বসানো হবে। যেখানে বেশি শিক্ষার্থী সেসব স্কুলে বেঞ্চ সরবরাহ করা হবে কিনা সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে বলে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
বর্তমানে যশোরের আট উপজেলায় সর্বমোট ১২শ’ ৮৯ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ইবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে ৬৫ টি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিন লাখ ৫৪ হাজার একশ’ ৭০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এদের মধ্যে শিশু শ্রেণি বাদে তিন লাখের মতো শিক্ষার্থীকে স্কুলে আনার চেষ্টা করা হবে।
এই সংকটকালীন কারা কী দায়িত্ব পালন করবেন সেই তথ্যও অগ্রিম জানাতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীর তাপমাত্রা পরিমাপ কে করবেন, বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও জীবাণুমুক্তকরণের মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করবেন কে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাবান দিয়ে হাত ধোয়া নিশ্চিত করবেন কে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মাস্ক পরা নিশ্চিত করবেন কে, বিদ্যালয়ে হঠাৎ কোনো শিক্ষার্থী ও শিক্ষক অসুস্থ হলে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করবেন কে, মাস্ক পরিধান, সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশি দেয়ার শিষ্টাচার সম্পর্কে ব্যবহারিক শিক্ষা প্রদানকারী শিক্ষকদের নাম এবং সকল পরিকল্পনার বিষয়টি সকল অভিভাবক ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটিকে অবহিতকারীদের শিক্ষকদের নাম জানাতে হবে।
অতিরিক্ত নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, প্রতিটি বিদ্যালয়ে পৃথক পরিকল্পনা করতে হবে, দু’ শিফটে পরিচালনা করতে হবে, শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আনা যাবে না এবং অসুস্থ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও গর্ভবতী শিক্ষিকা স্কুলে আসবেন না।
এসব বিষয়ে যশোর সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমজাদ হোসেন বলেন,‘সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষা।’