
সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে কিশোর-কিশোরীদের জেন্ডার বেইজড ভায়োলেন্স প্রতিরোধে সক্ষম করতে গড়ে তোলা কিশোরী ক্লাব নতুন করে প্রাণ পেতে যাচ্ছে। দ্রুতই ক্লাবগুলোতে সংযোজিত হতে যাচ্ছে হারমোনিয়াম ও তবলা।
করোনা ইস্যুতে পিছিয়ে পড়া কার্যক্রমকে নয়া উদ্যমে এগিয়ে নিতে যশোরের ৮ উপজেলাসহ দেশের ২১৫টি উপজেলায় পৌঁছে যাবে ওই সঙ্গীত সরঞ্জাম।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, সমাজের বিভিন্ন স্তরে এবং তৃনমূলে কিশোর কিশোরীরা জেন্ডার বৈষম্য, সেক্সুয়াল হেরেজমেন্টের শিকার হয়ে থাকে। সচেতনতা কম থাকা ও আত্মনির্ভরশীল না হওয়ায় এর শিকার হয়ে থাকে বেশি। এর প্রতিকার ও প্রতিরোধে কিশোর কিশোরীদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নারীদের আয়বর্ধক কার্যক্রমের আওতায় এগুতে সরকার জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন করে। সংগীত আবৃত্তিসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে গড়ে তুলে আত্মনির্ভরশীল ও দক্ষ মানব সম্পদে রূপান্তর করার দৃঢ় প্রত্যয়ে কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন করা হয়। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রান্তিক কিশোর-কিশোরীদের জেন্ডার বেইজড ভায়োলেন্স প্রতিরোধে সক্ষম করা, সেক্সুয়াল রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ এন্ড রাইটস বিষয়ে সচেতচনা বৃদ্ধিও এই ক্লাব স্থাপন প্রকল্পের লক্ষ্য ধরা হয়। নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ততার হার বৃদ্ধি করে সমাজে দারিদ্র দূর করার উদ্দেশ্যে কর্মকান্ড শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে যশোরের ৮ উপজেলায় ১০১টিসহ সারাদেশে ৫ হাজার ক্লাব স্থাপন করা হয় প্রকল্পের আওতায়।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দিক নির্দেশনায় গোটা দেশে সংগীত শিল্পী, আবৃত্তি শিল্পী ও জেন্ডার প্রমোটর মিলিয়ে ১১ হাজার লোকবল নিয়োগের কার্যক্রম হাতে নিয়ে ৮ হাজার জনবল নিয়োগ দেয়া হয়। প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকার প্রতিটি ক্লাবে ২০ জন কিশোরী ও ১০ জন কিশোরকে ক্লাব সদস্য করে ৩০ জনকে নিয়ে কার্যক্রম এগুতে শুরু করে। কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রকল্প সেক্সুয়াল রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ এন্ড রাইটস বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নারীদের আত্মনির্ভরশীল ও দক্ষ মানব সম্পদে রূপান্তর করার কাজটি শুরু হলেও গত মার্চ থেকে চলমান করোনা সঙ্কটে থমকে গেছে। একদিকে এই প্রকল্পের চালিকা শক্তি জেন্ডার প্রমোটর, আবৃত্তি শিল্পী, সংগীত শিল্পী মিলিয়ে প্রায় ৭ হাজার সৃজনশীল মানুষকে সম্মানী থেকে বঞ্চিত হয়। আবার ক্লাসও বন্ধ রয়েছে। জেন্ডার প্রমোটর, আবৃত্তি শিল্পী, সংগীত শিল্পীদের সপ্তাহে দুদিন ক্লাস বা সচেতনতামূলক কাজ করার কথা। কিন্তু তাদের ৮ হাজার টাকা করে সম্মানী বাকি রয়েছে করোনার ৭ মাস। তবে অল্পসময়ের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাবগুলো নব উদ্যোগে এগুতে শুরু করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এবার হারমোনিয়াম তবলার সাথে সঙ্গত করবে কিশোর কিশোরীরা।
সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে তাদের গড়ে তুলতে প্রজেক্টে যোগ হয়েছে এই সঙ্গীত সরঞ্জাম সরবরাহ কার্যক্রম। দেশের ২১৫টি উপজেলার কিশোর ক্লাবের জন্য হারমোনিয়াম ও তবলা সরবরাহ করার টেন্ডার হয়ে গেছে। এর মধ্যে যশোরের ৮ উপজেলা রয়েছে। করোনা সঙ্কটে সরকারি স্বাস্থ্য বিধি মেনে সরকারি নির্দেশনামতে কিশোর ক্লাবগুলোর কার্যক্রম চলবে।
এ ব্যাপারে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক সকিনা খাতুন জানিয়েছেন, করোনার কারণে কিশোর কিশোরী ক্লাবের ক্লাস কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে সত্য। জেন্ডার প্রমোটর, আবৃত্তি শিল্পী ও সংগীত শিল্পীদের সম্মানী আপাত বন্ধ থাকায় তারা উৎসাহ হারাচ্ছে। তবে এ সমস্যা দ্রুতই সমাধান হচ্ছে। নতুন উদ্যমে পরিচালনা করতে আসছে হারমোনিয়াম ও তবলা। প্রজেক্টের আওতার ব্যাপারে তারা ঢাকাতে জোরালো যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। হারমোনিয়াম তবলা পৌঁছে গেলে কিশোর ক্লাবগুলো প্রাণ ফিরে পাবে।