
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন যে টানটান উত্তেজনার মধ্যে হতে চলেছে। এখন থেকেই রাজনৈতিক হাওয়ার গতি প্রকৃতি বলে দিচ্ছে নির্বাচনী উত্তেজনা। এবার বিধানসভা নির্বাচনে সবচে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠবেন রাজ্যের সংখ্যালঘু বা মুসলিমরা। কারন এবারের ভোটে সংখ্যালঘুদের ভোট প্রদানের একাধিক সমীকরণ এখন থেকেই তৈরি হচ্ছে।
ফলে রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংক নিয়ে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের বাজিমাত করার রাস্তায় বাগড়া হতে চলেছে বলে রাজনৈতিক মহলের মত। এমনকি সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক নিয়ে রাজ্যের কংগ্রেস বা সিপিএম যে বাড়তি সুবিধা আদায় করে নিতো সেই পথেও এবারে দেখা দিতে পারে সমস্যা।
কারণ, এবারে রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট দখলে নিতে একদিকে যেমন আসাদুদ্দিন ওয়েইসির মিম নির্বাচনে লড়াই করার জন্য যেমন প্রস্তুতি নিচ্ছে, তেমনি রাজ্যের ফুরফুরাব শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি নিজে দল ঘোষণা করার অপেক্ষায় রয়েছেন। আর এই দুই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সমর্থনে দুটি দল নির্বাচনে অংশ নিলে রাজ্যের শাসক বা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি যে সংকটে পড়বে তা বোধহয় বলার অপেক্ষা রাখে না।
ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী জানিয়ে দিয়েছেন, ডিসেম্বরে দল ঘোষণার কথা। জানুয়ারিতে প্রতীক চলে আসবে। এইভাবেই তিনি রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাওয়াশি আত্মবিশ্বাসের সুরে বলেন, আমরা ইতিমধ্যে রাজ্যে ১০০ টি আসনে জয়ের জায়গায় চলে এসেছি। তিনি বাংলা বাঁচাতে এবং বিজেপিকে রুখতে বাম, কংগ্রেস এবং তৃণমূলকে নিয়ে মহাজোট তৈরির ডাক দিয়েছেন। সিদ্দিকি বলেন, যারা এই মহাজোটে আসবে না তারা বিজেপিকে সাহায্য করছে বলে প্রমাণিত হবে।
আর আমরা তাদের বয়কট করবো। বৃহস্পতিবার ভাঙ্গড়ে এক ধর্মী সভায় দাঁড়িয়ে সিদ্দিকে মহাজোটের আহ্বান জানান। রাজনৈতিক মহলের ধারনা, এবারের বিধানসভা নির্বাচনে রজ্যে সংখ্যালঘুদের সমর্থনে আব্বাস সিদ্দিকির দল এবং ওয়েইসির দল মিম যেভাবে ময়দানে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে তাতে বাংলার সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক নিয়ে তৃণমূল, বাম বা কংগ্রেসের তুরুপের তাস খেলার জায়গা অন্তত থাকবে না।
আর সংখ্যালঘু ভোট কাটাকুটি মানেই একদিকে যেমন কিছুটা সুবিধা হবে বিজেপির তেমনি প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নিজেদের রাজনৈতিক নীতি আদর্শের উপরে দাঁড়িয়ে জোরদার লড়াই করতে হবে।
এতদিন ধরে সংখ্যালঘুদের তোষণ করে অতি সহজেই যে ভোট পকেটে আসতো এবারে মিম কিংবা আব্বাস সিদ্দিকির দল ময়দানে নামলে সেই সহজ পথ হয়তো আটকে যাবে। কারন, মিম বা সিদ্দিকির দল এখন থেকেই জানিয়ে দিয়েছে, তারা সংখ্যালঘুদের পাশে থেকে একমাত্র তাদের উন্নয়নেই কাজ করতে চায়। ফলে তারা শুধুমাত্র সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকের প্রত্যাশা নিয়েই ময়দানে নামবে।
আর সেক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহনে সমস্যা বাড়বে রাজ্যের বাম কংগ্রেস বা তৃণমূলের। কারণ, বিজেপি তাদের ভোট জয়ের ক্ষেত্রে রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকের সামান্য কিছু অংশের প্রত্যাশা করলেও সেই ভোট ব্যাংক তাদের ঘরে না এসে বরং কাটাকুটি হয়ে গেলে তাদেরই বেশি সুবিধা হবে। ফলে এবারের নির্বাচনে রাজনৈতিক সমীকরন কি কথা বলবে তার দিকে আপাতত তাকিয়ে থাকা ছাড়া রাস্তা নেই।