
কেশবপুর পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে আগাম গণসংযোগ ও প্রচারণা শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের একাধিক সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় ইতিমধ্যে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন। নিজেদের প্রার্থীতা জানান দেয়ার জন্যে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ পোস্টার ও ব্যানার-ফেস্টুন টাঙিয়েছেন। যা নিয়ে প্রতিদিন চায়ের স্টলসহ সর্বত্র আলোচনার ঝড় উঠছে।
কাউন্সিলর পদে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্যে নেতা-নেত্রীদের হিড়িক পড়েছে। বাদ যাচ্ছেন না হঠাৎ গজিয়ে ওঠা বা ভুঁইফোড় নেতাকর্মীরাও। দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রার্থীরা নিজ নিজ দলের নেতাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ চালাচ্ছেন। অনেকে মনোনয়ন লাভের আশায় দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে সুসজ্জিত হয়ে পরিবারের লোকজন ও নিজস্ব কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে নেমে পড়েছেন শোডাউনে। এখন সর্বত্রই আলোচনা হচ্ছে কোন দলের কে পাচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন।
পৌরসভার সম্ভাব্য মেয়র মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় পৌর আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি বর্তমান মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়ল ছাড়াও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মিলন মিত্র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা রয়েছেন।
সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বরের প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ পৌরসভায় ২০১৫ সালের নির্বাচনে প্রথমবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী মেয়র পদটি দখল করেন। এ নির্বাচনে রফিকুল ইসলাম মোড়ল নয় হাজার দুশ’ ৪৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক এম এন এ প্রয়াত সুবোধ মিত্রের একমাত্র সন্তান মিলন মিত্র বিগত একটি পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তিনি নিয়মিত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। ২০০৩ সাল থেকে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী সাবেক ছাত্রনেতা গাজী গোলাম মোস্তফার ওপর জনপ্রতিনিধির খাতায় নাম লেখানোর জন্যে দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল থেকে চাপ রয়েছে বলে জানাগেছে। তিনিও তার কর্মী-সমর্থকদের সাথে যোগাযোগ ও গণসংযোগ চালাচ্ছেন।
রাজনৈতিকভাবে কেশবপুর পৌরসভাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে আওয়ামী লীগ ক্লিন ইমেজের কাউকে মনোনয়ন দিতে পারে। বিএনপির মেয়র প্রার্থী হিসেবে পৌর বিএনপি নেতা ও সাবেক মেয়র আব্দুস সামাদ বিশ্বাস গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাকে আসন্ন পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্যে দল থেকে তাকে সিগন্যাল দেয়া হয়েছে বলে গ্রামের কাগজকে জানান তিনি। দু’ বারের মেয়র আব্দুস সামাদ বিশ্বাস সর্বশেষ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পাঁচ হাজার ছয়শ’ দু’ ভোট পেয়েছিলেন।
এদিকে, নির্বাচনকে সামনে রেখে কেশবপুর পৌর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গত ৪ নভেম্বর সম্ভাব্য কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রাথমিক তথ্য আহ্বান করা হয়। গত মঙ্গলবার ছিল ওই তথ্য জমা দেয়ার শেষ দিন। পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নয়টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে মনোনয়নের দাবি নিয়ে তথ্য জমা দিয়েছেন ৫২ জন নেতানেত্রী।
পৌর আওয়ামী লীগ সূত্রে জানাগেছে, নয়টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ৩৮ জন। তার মধ্যে ১ নম্বর (কেশবপুর-ভোগতী নরেন্দ্রপুর পূর্বাংশ) ওয়ার্ডে তিনজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। তারা হলেন শেখ আতিয়ার রহমান, নূরুল ইসলাম খান ও লিটন গাজী। ২ নম্বর (ভোগতী নরেন্দ্রপুর পশ্চিমাংশ) ওয়ার্ডের ছয়জন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। তারা হলেন হাবিবুর রহমান হাবিব, আবু শাহীন, তরিকুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, সাজ্জাত হোসেন ও হাবিবুর রহমান। ৩ নম্বর (বায়সা-সাবদিয়া) ওয়ার্ডের সাতজন মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন জামাল উদ্দীন সরদার, মনিরুজ্জামান শাহীন, প্রদীপ চক্রবর্ত্তী, মশিয়ার রহমান, কামরুজ্জামান কামরুল, নাছির উদ্দীন সরদার ও জি এম কবীর। ৪ নম্বর (আলতাপোল পশ্চিমাংশ) ওয়ার্ডে মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন প্রাক্তন ফুটবল খেলোয়ার জাহাঙ্গীর আলম ও এনজিও ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আকমল আলী। ৫ নম্বর (আলতাপোল পূর্বাংশ) ওয়ার্ডের চারজন মনোনয় নপ্রত্যাশী হলেন বিএম শহিদুজ্জামান শহিদ, আবুল হাসান, একরামুল হোসেন ও শেখ আবু শাহীন। ৬ ন¦র (সাবদিয়া-বাজিতপুর) ওয়ার্ডে পাঁচজন মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন মনোয়ার হোসেন মিন্টু, মঞ্জুরুল আলম, নজরুল ইসলাম, আব্দুল কুদ্দুস ও বজলুর রহমান। ৭ নম্বর (মধ্যকুল-হাবাসপোলে) ওয়ার্ডের পাঁচজন মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন কামাল খান, মদন সাহা অপু, সালাম খান, মানিক লাল সাহা বাবু ও শাহরিয়ার কবীর সান্টু। ৮ নম্বর (বালিয়াডাঙ্গা উত্তর-ব্রহ্মকাটি) ওয়ার্ডের চারজন মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন মফিজুর খান, আমিনুর শেখ, গফুর মোড়ল ও সেলিম খান এবং ৯ নম্বর (বালিয়াডাঙ্গা) ওয়ার্ডে শেখ এবাদত সিদ্দিকী বিপুল ও আবুল কালাম মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানাগেছে।
এছাড়া, সংরক্ষিত তিনটি আসনে মহিলা কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন চাচ্ছেন ১৪ জন। সংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়ন প্রত্যাশী চারজন হলেন মেহেরুন্নেছা মেরী, খাদিজা খাতুন, মঞ্জুয়ারা বেগম ও রাশিদা খাতুন। সংরক্ষিত ২ নম্বর ওয়ার্ডে চারজন মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন মমতাজ বেগম, মুক্তি বিশ্বাস, আসমা খাতুন ও ফতেমা বেগম এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ডে মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন মনিরা বেগম, জাহানারা বেগম, আসমা বেগম, তহমিনা বেগম, ফতেমা বেগম ও হীরা খাতুন।
পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক কার্ত্তিক চন্দ্র সাহা বলেন, পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নয়টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৫২ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী তাদের তথ্য জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে পাওয়া প্রাপ্ত তথ্য বিবেচনা করার জন্যে স্থানীয় সংষদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে পেশ করা হবে। কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী কারা এটি জানার জন্যই মূলত প্রাথমিক তথ্য আহ্বান করা হয়।