
বিধি ও নীতিমালা উপেক্ষা করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের টিআর প্রকল্পের একটি পাকা বাড়ি বাগিয়ে নিলেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না কাশিমপুর গ্রামের ধনী রাশেদ বিশ্বাসের। দৈনিক গ্রামের কাগজে সংবাদ প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ওই বাড়িতে আর উঠতে পারছেন না তিনি।
কাশিমপুর গ্রামের রাশেদ বিশ্বাসের মাঠে ৫ বিঘার উপরে জমি। নিজস্ব ছাদের পাকা বাড়ি, এমনকি পাকা গোয়াল ঘরও রয়েছে। নিজে কাজ করেন। ছেলেরা প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করেও উপার্জন করেন। এরপরও ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকার বাড়ি বরাদ্দ পান এক সময়ের স্থানীয় বিএনপির বড় নেতা বহু বিতর্কিত রাশেদ। অথচ তার বাড়ির পাশেই দিন আনা দিন খাওয়া বেড়ার ঘরে বাস করা আইয়েব আলীর পরিবারসহ ওই গ্রামের অনেকের ভাগ্যে জোটেনি টিআর কর্মসূচির এই বাড়ি। ওই গ্রামের এক ডজন দরিদ্র পরিবার ওই বাড়ি পাওয়ার যোগ্য থাকলেও নজরে আসেনি এ সংক্রান্ত কমিটির।
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী ফারুক হোসেন দরিদ্র হিসেবে এক সময়ের বিএনপি নেতা ধনী রাশেদকে গৃহহীন হিসেবে বাছাই করেন বলে তথ্য মিলেছে। যদিও সহকারী প্রকৌশলী ফারুক হোসেনের দাবি, তার উপরে বিশেষ নির্দেশনা ছিল, তার কিছুই করার ছিল না। আবার এখন বাড়িটি ভেঙে আনাও সম্ভব নয়।
এদিকে বাড়ি বরাদ্দ নিয়ে ওই এলাকায় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে সরেজমিনে খোঁজখবর নেয়া হয় দৈনিক গ্রামের কাগজের পক্ষে। সর্বোচ্চ ১০ শতক জমির মালিক দরিদ্র এবং পাকা টেকসই বাড়ি নেই এমন পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে টিআর প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে বাড়ি বরাদ্দ দেয়া শুরু হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি বাড়ি পেয়ে যান কাশিমপুর গ্রামের প্রভাবশালী টেকসই পাকা ছাদের বাড়ির মালিক রাশেদ বিশ^াস। দ্’ুরুম, এক বাথ রুম ও রান্না ঘরের পাকা সরকারি বাড়িটি পাওয়ার ওই প্রকল্পের নূন্যতম কোনো শর্ত পূরণ হয়নি রাশেদের বেলায়। প্রজেক্ট কমিটি ও কারিগরি কমিটিকে ভুল তথ্য দিয়ে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চলা এক সময়ের বিএনপি নেতা রাশেদ বাড়িটি বাগিয়ে নেন। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে টিআর প্রকল্পের বাড়িটি রাশেদকে দেয়ায় প্রকল্পের কার্যক্রম বিশালভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ওই গ্রামের বয়বৃদ্ধ শহর আলীসহ (৯০) আরো অনেকের সাথে কথা বললে তারা জানান, রাশেদের সরকারি পাকা বাড়ি পাওয়া হাস্যকর! যেনোতেনো পরিবেশে অনেকটা খোলা আকাশের নিচে সময় কাটানো আইয়েব আলী, কাশিমপুরের তাইজুলের ছেলে ভ্যান চালক টিপুসহ অনেক দরিদ্র ওই টিআর প্রকল্পের বাড়ি পাওয়ার যোগ্য প্রদিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসলে তুমুল হৈচৈ শুরু হয়।
সূত্র জানায়, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে উপজেলায় ওই ক্যাটাগরিতে ঘর পাওয়া ২৩টি ঘর হ্যান্ডওভার করা হলেও রাশেদের ঘরটি আটকে গেছে। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর কারগরি ও প্রজেক্ট কমিটির সদস্যরা পরিস্কার হয়েছেন রাশেদ ধনী মানুষ, তিনি এই ঘরটি পাওয়ার যোগ্য নন। আবার ঘর বরাদ্দের সময় একটি বিশেষ মহলের সুপারিশ থাকায় এখন ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ পরিস্থিতিতে পড়েছেন কারিগরি কমিটির সদস্যরা। এদিকে সাধের সরকারি বাড়িতে উঠতে না পেরে বিভিন্ন মহলে দৌঁড়ঝাঁপ করছেন। জমি তার তাই যে কোনো মুল্যে রাশেদ ওই বাড়িতে উঠবেন এমন পণ করে মাঠে নেমেছেন বলে জানিয়েছেন ওই গ্রামের লোকজন।
এ ব্যাপারে কথা হয় ওই প্রকল্পের যশোর সদর উপজেলা কারিগরি কমিটির সদস্য সচিব ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদেরে সাথে। তিনি গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, কাশিমপুরে রাশেদ নামে যে ব্যক্তি টিআর প্রকল্পের পাকা বাড়ি পেয়েছেন, তিনি এর যোগ্য নন। তার বেলায় শর্ত ভঙ্গ হয়েছে বলেও তিনি স্বীকার করেছেন। যে কারণে তার বাড়িটি হস্তান্তর থেমে আছে। তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে। শর্তের ব্যত্যয় ঘটায় বিষয়টি নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।