
যশোরের পুরাতনকসবা ঘোষপাড়া ও পালবাড়ি এলাকায় কয়েকটি মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অপ্রতিরোধ্যভাবে মাদক বেচাকেনা করে চলেছে। ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ, গাঁজাসহ নানা ভার্সনের মাদক বিক্রি করছে চিহ্নিত চক্রটি।
সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের অব্যাহত এই অনৈতিক কারবারে স্থানীয় যুবসমাজ মাদকে বুদ হচ্ছে। একইসাথে তাদের অপতৎপরতায় এলাকার আইনশৃংখলার অবনতির পাশাপাশি শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবক মহল।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ঘোষপাড়া মিঠুর বাগান, নদীর পাড়ের পরিত্যক্ত হাঁসের খামার ও পালবাড়ি নতুন খয়েরতলার কয়েকটি স্পটে এখন মাদক ব্যবসায়ীদের বড় বড় ডেরা পরিচালিত হচ্ছে। সম্রাট একছেরের মৃত্যুর পর ওই এলাকার মাদক সিন্ডিকেটের হাল ধরেছে মহিসহ ডজন খানেকের চক্র। মাদক ব্যবসায়ী চক্রে আরো রয়েছে একই এলাকার মহি, টালিখোলার টিপন, বাঙাল রাজু, ধর্মতলা এলাকার ছোট বাবু, পুরাতন কসবা ঘোষপাড়া এলাকার শাহিন, ঘোষপাড়া ঢাকা রোড এলাকার পলাশ, বাবু, নতুন খয়েরতলা স্কুল পাড়ার বাপ্পি, গাজীর ঘাট রোড এলাকার হাসান, তেঁতুলতলা এলাকার সোহান, বোলপুর গ্রামের জলিল ওরফে ফান্টু জলিল, টিপু ওরফে গাঁজা টিপু ও মধূগ্রামের ওবাইদুল।
একটি রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে চক্রের গোদা মহিসহ উপরে উল্লেখিতরা ঘোষপাড়ার মিঠুর বাগানসহ ডজন খনেক স্পটে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ডেরা চালাচ্ছে। নেশার আলামত পাশর্শবর্তী অনেকের বাড়ির আঙিনায় ছুড়ে ফেলা হচ্ছে। নানা অপ কৌশলে থানা পুলিশ, র্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ও গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা মাদক বিকিকিনি করছে শহরতলীতেও। এর আগে ওই চক্রের ফেন্সি জলিল আটক হয় পুলিশের হাতে। পরে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে গ্রামে ফিরে আসে সে। আর ফিরে এই জলিল একই ইয়াবা কারবার করে চলেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পুরাতনকসবা ঘোষপাড়া ও পালবাড়ি এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে মহি চক্রের মাদক ব্যবসা নিয়ে আরও কয়েকটি সিন্ডিকেট সক্রিয়। প্রায় সময় তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হাতাহাতি সংঘর্ষ হলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার ভয়ে পুলিশের কাছে মুখ খোলে না। যার কারণে এসব কারবারীদের নাম রয়ে যায় অজানা। খরিদ্দাররা মোবাইল ফোনে যে কোনো ধরনের মাদকের অর্ডার করলেই ‘ডেলিভারিম্যানের’ মাধ্যমে মোটরসাইকেল বা বাইসাইকেলযোগে দ্রুত পৌঁছে দেয়া হচ্ছে তাদের ঠিকানায়। সেবনকারীরা ঝুঁকি ছাড়াই ওই চক্রের ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা ইত্যাদি হাতে পেয়ে যাচ্ছে।
যশোরের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মাদকের চালান নিয়ে আসছে এই চক্রটি। শার্শার রুদ্রপুর-কাশীপুর, গোগা, শিকারপুর, হরিশচন্দ্রপুর, বেনাপোলের পুটখালী, দৌলতপুর, গাতিপাড়া, সাদিপুর, বড়আঁচড়া, রঘুনাথপুর ও চৌগাছা সীমান্ত দিয়ে এই চক্রের আস্তানায় চলে আসছে কাঙ্খিত মাদক। ঘোষপাড়ার পালবাড়ি এলাকার উঠতি সন্ত্রাসীসহ নেতাগোছের কিছু লোকজন তাদের অভয় দিচ্ছে পুলিশ ঠেকিয়ে দেবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পালবাড়ি এলাকায় অবাধ মাদক বিকিকিনির কারণে ছাত্র ও যুবসমাজ চরমভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। ছাত্রদের কেউ কেউ সেবনসহ এই ব্যবসায় জড়িয়ে তাদের পরিবারকেও অতিষ্ট করে তুলছে। এ ব্যাপারে তারা পুলিশের উর্ধŸতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্থানীয়রা আরো জানিয়েছেন, এই চক্রের টিপন এলাকার টুলুকে হত্যা করে। আর ছোট মহি মাদক ব্যবসা ছাড়াও নানা দোষে দুষ্ট। ছোট মহিসহ ওই মাদক চক্রের সদস্যদের বেশিরভাগই আগে বিএনপির ছত্রছায়ায় চলত। এখন তাদের মাদক ববসা বহাল রাখতে এবং আটক এড়িয়ে চলতে ভোল পাল্টে ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে চলছে।
এ ব্যাপারে যশোর কেতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, মাদক ব্যবসায়ী, সেবনকারী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। এছাড়া যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে খোঁজ খবর নিয়ে আটক অভিযান চালানো হবে। যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।