
যশোরে রাস্তার গাছ কাটা নিয়ে ব্যাপক হইচই শুরু হয়েছে। জেলা পরিষদের দাবি, রাস্তার গাছ তাদেরই। অপরদিকে, বনবিভাগ বলছে সবগাছগুলোই তাদের। যার তথ্য প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে বলে বনবিভাগের দাবি। তারপরও জেলা পরিষদ নাকি তাদের গাছকাটা বন্ধ করে দিয়েছে। ঘটনাটি সদর উপজেলার তারাগঞ্জ-শেখহাটি সড়কের। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল থেকে গাছ কাটা যন্ত্রপাতি জব্দ করেছে জেলা পরিষদ। কেবল তাই না, অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগে ১৩ জনকে আসামি করে মামলা করেছে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১৬ মার্চ যশোর বনবিভাগকে গাছের টেন্ডার না করার জন্যে জেপয/প্রকৌঃ/বঃবিঃকাঃ/ব-৫(২০১২)-১২৬ স্মারকে চিঠি দেয় জেলা পরিষদ। তারপরও বনবিভাগ তিনশ’৩৭ টি গাছ কাটার জন্যে বিভাগীয় কর্মকর্তার মাধ্যমে ওয়ার্কঅর্ডার দেয়া হয় তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে। ২৭টি লটে টেন্ডার দেয় বনবিভাগ। যার ফলে ঠিকাদাররা গাছ কাটা শুরু করে বলে দাবি বনবিভাগের।
জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার আশরাফ হোসেন মঞ্জু বাদী হয়ে যে মামলা করেছেন তাতে শহরের পুরাতন কসবা ঘোষপাড়ার ঠিকাদার হাবিবুর রহমান, নীলগঞ্জ এলাকার মৃত শাহাদত হোসেনের ছেলে মনিরুজ্জামান মুকুল, হামিদপুরের আব্দুল হকের ছেলে খোরশেদ, মণিরামপুরের কাশিমনগর গ্রামের ঠিকাদার শামীম হোসেন, বাঘারপাড়ার চাড়াভিটার ফসিয়ার রহমানের ছেলে আব্বাস আলী, সদর উপজেলার সুলতানপুরের ঠিকাদার মিজানুর রহমান, হুগলাডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল হামিদ মোল্লার ছেলে জাকির হোসেন, দেয়াপাড়া গ্রামের বাবুর ছেলে রনি, আব্দুল জলিল মোল্লার ছেলে রিপন হোসেন, ফরিদ গাজীর ছেলে হানিফ গাজী, হায়দারের ছেলে জীবন, নিমতলা গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে ইকবাল, কচুয়া গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে জসিম।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, তিনশ’ ৩৭ টি গাছের মধ্যে গত চারদিনে ৩৯টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। যার মূল্য আনুমানিক দশ লাখ টাকা। ২১ নভেম্বর সকাল নয়টায় বাদী আশরাফ হোসেন মঞ্জু জানতে পারেন তারাগঞ্জ হতে একই সড়কের ধানঘাটা সেতু পর্যন্ত কে বা কারা গাছ কেটে নিচ্ছে। তিনি সকাল ১০টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন ২৮টি মূল্যবান রেন্ট্রি ও বাবলা গাছ কেটে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে তিনি ঘটনাটি জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে জানান।

এদিকে, ২৪ নভেম্বর মামলার এক নাম্বার সাক্ষী জেলা পরিষদ সদস্য ইকবাল হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন ওই একই রাস্তা থেকে গাছ কাটছে বনবিভাগের নিয়োগকৃত ঠিকাদাররা। এ ব্যাপারে ইকবাল হোসেন সার্ভেয়ারকে জানালে তিনি দ্রুত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুলকে জানান বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সার্ভেয়ার মঞ্জু বলেন, অবৈধভাবে গাছগুলো কেটে নিচ্ছে বনবিভাগ। কিন্তু গাছ ও রাস্তা উভয়ই জেলা পরিষদের। তাহলে তারা কীভাবে বিক্রি করে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
একইসাথে এ মামলার এক নম্বর সাক্ষী ইকবাল হোসেন বলেন, গত ২৪ নভেম্বর খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তারাগঞ্জ হতে ধানঘাটা সেতু পর্যন্ত রোড থেকে গাছ কেটে নিচ্ছে বনবিভাগের আওতাধীন লোকজন। পরে তিনি গাছ কাটতে বাধা দেন। একইসাথে তিনি ওই রোডে কর্মরত সার্ভেয়ার আশরাফ হোসেনকে জানান।
এ ব্যাপারে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান বলেন, গাছগুলো রোপন করে যশোর বনবিভাগ। রাস্তা জেলা পরিষদের, এ কারণে গাছও তাদের বলে দাবি করছে। তবে ওই গাছগুলো যে জেলা পরিষদের না, তার প্রমাণ রয়েছে বনবিভাগের কাছে বলেও দাবি করেন এ কর্মকর্তা।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যন সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, গত আট মাস আগে বনবিভাগকে গাছ না কাটার জন্যে জেপয/প্রকৌঃ/বঃবিঃকাঃ/ব-৫(২০১২)-৫২৮ স্মারকে চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তাতে কোনো কর্ণপাত না করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছে গাছ কাটার অনুমতি দিয়ে দেয় বনবিভাগ। যে কারণে মামলা করেছে জেলা পরিষদ।