
বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও অভিনেতা নাট্যজন আলী যাকের মারা গেছেন। শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) সকালে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।
গত চার বছর ধরেই মরণব্যাধি ক্যান্সারে ভুগছিলেন এ অভিনেতা। বেশ কিছু দিন ধরেই শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছিলেন আলী যাকের। সেটি হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে করোনা টেস্ট করা হলে পজিটিভ ফল আসে।
বার্ধক্যজনিত সমস্যা ও হৃদরোগসহ কিছু শারীরিক জটিলতা নিয়ে গত ১৭ নভেম্বর ঢাকার শ্যামলীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আলী যাকেরকে। সেখানে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল।
১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের রতনপুর ইউনিয়নে আলী যাকেরের জন্ম। ১৯৬০ সালে সেন্ট গ্রেগরি থেকে ম্যাট্রিক পাস করে নটরডেমে ভর্তি হন। সেখান থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন তিনি। এরপর সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক করেন। অনার্স পড়াকালেই ছাত্ররাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। অনার্স শেষ হওয়ার পর অর্থাৎ ১৯৬৭ সালে চলে যান করাচি। সেখানেই প্রথম অভিনয় করেন আলী যাকের। ১৯৬৯ সালে ঢাকায় ফিরেন তিনি।
১৯৭২ সালের আলী যাকের আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকে অভিনয় করেন। একই বছরের জুন মাসের দিকে আতাউর রহমান ও জিয়া হায়দারের আহ্বানে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে যোগ দেন। এই দলের হয়ে আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ো রোঁ’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৭৩ সালে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে প্রথম নির্দেশনা দেন বাদল সরকারের ‘বাকি ইতিহাস’ নাটকটি। যা ছিল বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনী।
দর্শকের ভালোবাসা যেমন কুড়িয়েছেন নন্দিত এই শিল্পী, তেমনি প্রাপ্তির ঝুলিতে জমা পড়েছে অসংখ্য পুরস্কার। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক পেয়েছেন এই গুণীজন। এছাড়াও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদক প্রভৃতি সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আলী যাকের বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটির কর্ণধার। আলী যাকের ১৯৭৫ সালে অভিনেত্রী সারা যাকেরকে বিয়ে করেন।