
সরকার নির্ধারিত মূল্যে খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী না যশোরের চাষিরা। একই দাম বাইরে পাওয়ায় অহেতুক ঝামেলায় জড়াতে চাচ্ছেন না তারা। এ কারণে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অ্যাপে চলতি মৌসুমে আমন ধান বিক্রি করতে আবেদন পড়েছে মাত্র সাতশ’ ৫৪ টি। অথচ গত বোরো মৌসুমে এই আবেদনের সংখ্যা ছিল নয় হাজার দুশ’ ১২ টি।
বিগত তিন মৌসুম ধরে যশোর সদর উপজেলায় অ্যাপের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান কেনা হচ্ছে। প্রথমবার বাজারে ধানের দাম কম থাকায় এক হাজার ৪০ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে চাষিরা এক প্রকার হুমড়ি খেয়ে পড়েন। হাজার হাজার কৃষক আবেদন করেন সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করার জন্যে। আবেদনের পর লটারিতে বিজয়ী হন তিন ক্যাটাগরির কৃষক। বিজয়ীরা ধান নিয়ে খাদ্যগুদামে যাওয়ার পর নানাভাবে হেনস্তার শিকার হন। প্রথমে ধানবোঝাই নসিমন আটক করে পুলিশ। সেখানে দেনদরবার করে ছাড়াতে হয়। এরপর গুদামে গিয়ে সিরিয়ালের জটিলতায় পড়েন। এমন অনেক কৃষক ছিলেন যাদের দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। এরপর দুর্ভোগে পড়েন আর্দ্রতা নিয়ে। ১৪ মাত্রার আর্দ্রতা না থাকায় চাষিকে খাদ্যগুদামের মধ্যে ধান রোদে শুকাতে হয়। আর এ কারণে লেবার খরচ হয় তাদের। সর্বশেষ, ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে নাজেহাল হন অজপাড়াগাঁয়ের নিরীহ কৃষক।
ঘাটে ঘাটে দুর্ভোগের কারণে খাদ্যগুদামে ধান বিক্রির আগ্রহ উবে যায় চাষিদের। পরের বোরো মৌসুমে খাদ্যগুদামে ধান বিক্রিতে কৃষকের আগ্রহে ভাটা পড়ে। অ্যাপে আবেদন করেন আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেক চাষি। সংখ্যা ছিল নয় হাজার দুশ’ ১২। যা প্রথমবার দ্বিগুণের মতো ছিল বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গত বোরো মৌসুমে সদর উপজেলায় মোট দু’হাজার আটশ’ ২৬ মেট্রিকটন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এমনকি ধারে কাছেও যায়নি। প্রথমদিকে দু’একজন কৃষক খাদ্যগুদামে আসলেও পরবর্তীতে কেউ আর মাড়াননি। তখন কৃষি ও খাদ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষক গুদামে আসছেন না। শেষ পর্যন্ত কৃষি ও খাদ্যবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ধান সংগ্রহ করতে মাঠে নামেন। ইউনিয়নে ইউনিয়নে মাইকিং করেন। তারপরও কোনো কাজ হয়নি।
চলতি আমন মৌসুমে সদর উপজেলায় এক হাজার ২৩ মেট্রিকটন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ধান কেনার জন্যে অ্যাপে আবেদন আহ্বান করা হয়। গত ২৬ নভেম্বর শেষ হয়েছে আবেদন করার সময়। অথচ দীর্ঘ এক মাসে আবেদন করেছেন মাত্র সাতশ’ ৫৪ জন কৃষক। অথচ গত বোরো মৌসুমে আবেদন জমা পড়ে নয় হাজার দুশ’ ১২ টি। এবারের আবেদন শনিবার পর্যন্ত পেন্ডিং অবস্থায় ছিল বলে খাদ্যবিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। কৃষি অফিস অ্যাপ্রুভ না করা পর্যন্ত এই আবেদন পেন্ডিং অবস্থায় থাকবে। যদিও আবেদনকারী চাষিরা শেষ পর্যন্ত খাদ্যগুদামে আসবেন না বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
এদিকে, মৌসুমের শুরুতেই বাজারে ধানের দাম বেড়েছে সাংঘাতিকভাবে। রোববার বিভিন্ন এলাকার চাষিদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, এখনই এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০ টাকা মণ দরে বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছে। তাও আবার কোনো রকম ঝামেলা ঝঞ্ঝাট ছাড়াই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাপারী অগ্রিম টাকা দিয়ে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় চাষি কোনোভাবেই খাদ্যগুদামে যাবেন না বলে জানান সুজলপুর গ্রামের চাষি সাহারুল ইসলাম, খোলাডাঙ্গার নুরআলী, লেবুতলার মনিরুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজন।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন,‘বর্তমানে বাজারে ধানের দাম বেশি। এ কারণে কৃষক বাড়ি থেকেই ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাছাড়া, খাদ্যগুদামে ধান বিক্রির জন্যে কিছু শর্ত রয়েছে। এসব কারণে কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।’