
জবর দখলে ব্যর্থ হয়ে ও চাঁদা না পেয়ে ঝিনাইদহর কোটচাঁদপুরে সলেমানপুর শেখপাড়ায় এক মহিলার নির্মাণ কাজে বাধা দিচ্ছে স্থানীয় একটি অসাধু চক্র।
দফায় দফায় হুমকি দিয়ে নির্মাণ শ্রমিকদের তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। আবার ওই বাড়ি চড়াও হয়ে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে ওই মহিলার পরিবারকে। এ ব্যাপারে ওই মহিলার নিরাপত্তা দিয়ে বিনা বাধায় নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করিয়ে দিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশকে নির্দেশনা দিলেও কোটচাঁদপুর থানা পুলিশ অসাধু চক্রের পক্ষ নিচ্ছে। এ ঘটনায় হতাশা ও উৎকণ্ঠায় সময় পার করছে ভুক্তভোগী পরিবার।
অভিযোগ ও মামলা সূত্রে তথ্য মিলেছে, কোটচাঁদপুরের ৬৩ নাম্বার সলেমানপুর মৌজার আরএস ৪৪৩১ নাম্বার দাগে ১০ শতাংশ জমি ও পুরোনো দ্বিতল বাড়ি পৈত্রিক সূত্রে পেয়ে ভোগ দখলে আছেন মৃত আব্দুল হামিদের ৩ মেয়ে। এরা হচ্ছেন তসলিমা আক্তার, মারুফা বেগম ও মিলন খাতুন। ওই জমি ও বাড়ির উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে প্রতিবেশী মৃত ওসমান গণির ছেলে সোহেল আরমান ও শাহাজান হোসেন চক্রের। তারা ওই তিন বোনের শেষ সম্বল জমি ও পুরোনো বাড়ি জমি জবর দখলে নিতে স্থানীয় আরো কয়েকজন উঠতি যুবককে সাথে নিয়ে কুট কৌশল আটে। এরপর তারা চাঁদা দাবি করে। কিন্তু পৈত্রিক সম্পতিতে বৈধভাবে বসবাস করা তসলিমা আক্তার ও তার পরিবারের লোকজন চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে চক্রটি তাদের নির্মাণ কাজে বাঁধা দিতে থাকে। পুরোনো বাড়ি সংস্কারে নিযুক্ত নির্মাণ শ্রমিক ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয় কয়েক দফা। এরপর আদালতে একটি বানোয়াট অভিযোগ তুলে কাজ বন্ধের আদেশ চায়। কিন্তু তারা আদালতে তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে রায় দেয় আদালত। তসলিমার কাজে বাধা না দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয় সোহেল আরমান চক্রকে। গত ১৯ অক্টোবর কোর্ট পিটিশন মামলা ৩৯৯/২০২০। এরপরও চক্রটি জবরদখলে মরিয়া হয়ে আবার মিস্ত্রি তাড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী তছলিমা আক্তার। ৪৪২৮ ও ৪৪৩৬ দাগে নির্মাণ হচ্ছে বলে আরমান ও শাহাজান চক্র বানোয়াট তথ্য দেন। অথচ প্রকৃত পক্ষে নির্মাণ হচ্ছে ৪৪৩১ দাগে তছলিমার পৈত্রিক বাড়িতে। কাজেই ওই সোহেল আরমান ও শাহাজান চক্রের সাথে জমি সংক্রান্ত কোনো বিরোধ নেই। এরপরও অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
গত কয়েকমাসে ৪ থেকে ৫ বার মিস্ত্রি তাড়িয়ে দিয়ে আতঙ্ক তৈরি করেছে। এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা তুলে ধরে এবং প্রকৃত তথ্য তুলে ধরে গত ২৫ অক্টোবর আবেদন করেন। অভিযোগ ও তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে ঝিনাইদহর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সেলিম রেজা এ আদেশ দেন, আদালতের আদেশ মোতাবেক তছলিমার নির্মাণে বাধা দেয়া যাবে না। বিনা বাধায় নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করিয়ে দিতে তিনি পুলিশ সুপারকে নির্দেশনা দেন। এছাড়া একই নির্দেশনা দেন কোটচাঁদপুর থানার অফিসার ইনচার্জকে। কিন্তু পুলিশের পক্ষে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তছলিমা আক্তারের।
তিনি অভিযোগ করেন, গত ৩ নভেম্বর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সেলিম রেজা ১২৬৯ (২) স্মারকে ঝিনইদহের এসপি ও কোটচাঁদপুর থানার ওসিকে বিনা বাধায় নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করিয়ে দিতে আদেশ দেন। আদেশের কপি ওসিকে দিলেও কার্যত কোনো ফল পাননি। তিনি নির্মাণে গেলে আবারো শ্রমিক তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তার বাড়িতে লোকজন নিয়ে চড়াও হয়ে গালিগালাজ করাসহ হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ওসিকে ফোনে জানালে তার পাঠানো দুজন অফিসার উল্টো আসামিদের পক্ষ নিয়েছেন। তারা বলে গেছেন, সোহেল, আরমান ও শাজাহান চক্রের সাথে ঝামেলা মিটিয়ে নেন। নির্মাণে পুলিশ কোনো সহযোগিতা করতে পারবে না। তাহলে বিষয়টি কি দাঁড়ালো। ন্যায় বিচারের জন্য তিনি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গেলেন। এখন তার নির্দেশনাও মানছে না পুলিশ। তাহলে সন্ত্রাসী চক্র মানবে কেন। এ ব্যাপারে তিনি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের দৃষ্টি কামনা করেছেন। তিনি দ্রুত আরমান ও শাহাজান চক্রের আটক দাবি করেছেন।
এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুব আলমের বক্তব্য নেয়া হলে তিনি গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, আমরা কয়েকবার ফোর্স পাঠিয়ে ওই দুষ্ট চক্রটিকে হটিয়ে দিয়েছিলাম। নির্মাণ কিছুদুর এগিয়েছিল। এরপর ওই পক্ষটি আবারো উচ্চ আদালতে মামলা করায় বিরোধীয় সম্পত্তিতে পুলিশ যেতে পারছে না। এরপরও সেখানে আইনশৃংখলার অবনতির কোনো বিষয় থাকলে পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।