
গত এপ্রিল ও মে মাসে ভেজাল এবং বিষাক্ত মদ পানে ১৭ জনের প্রান যাওয়া সংক্রান্ত ৩ মামলারই চার্জশিট প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়েছে। যশোরে করোনার প্রথম পর্যায়ে ওই মৃত্যু ঘটনার দিনগুলোতে শহরের মাড়ুয়ারি মন্দির এলাকার অবৈধ মদ ব্যবসায়ী হাসানসহ ওই সিন্ডিকেটের ১৪ জন বিকিকিনিতে সক্রিয় ছিল। ছয় মাসের তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে।
ভেজাল ও বিষাক্ত মদ পান করে গত ২৩ এপ্রিল যশোর শহরের গরীব শাহ মাজারের পশ্চিম পাশে বসবাসকারী মৃত মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক চিশতির ছেলে শরফুদ্দিন মুন্না ওরফে মনি বাবু (৪৫) মারা যান। একদিন পর বাংলামদ (চোলাই মদ) পান করে মারা যান ঝুমঝুমপুর বালিয়াডাঙ্গার ফজলুর রহমান চুক্কি। এরপর ভেজাল মদ পান করে মারা যান বেজপাড়ার শাহিন মাহমুদ খন্দকার। ২৮ এপ্রিল যশোরে ভেজাল মদপানে যশোর শহরের আরবপুর গোরা পাড়ার মৃত অজিত দাসের ছেলে প্রশান্ত দাস (৩৮) ও কেষ্টপদ দাসের ছেলে প্রল্লাদ দাস (৪৮) মারা যান। এর আগে মণিরামপুর মোহরপুরের মোক্তার আলী, মোমিনুর রহমান ও তপন হালদার নামে ৩ জন মারা যান। এর দুদিন আগে জেলায় মারা যান আক্তার ইসলাম, ইনামুল হক, সাহেব আলী, সবুর রহমান, নান্টুমিয়াসহ ৮ জন। এরপর মে মাসে মারা যান আরো ২ জন।
মদ সেবনে ওই সব লোক মারা যাওয়ার সময়কালে করোনার কারণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্সধারী মদ ব্যবসায়ীদের কাছেও মদ সরবরাহ বন্ধ ছিল। কাজেই ভেজাল মদ পান করেই তারা মারা যান বলে পরিস্কার হয়ে পুলিশ ৩টি মামলা গ্রহণ করে। গরীব শাহ রোডের শরিফ উদ্দিন মুন্না, ঝুমঝুমপুর বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ফজলুর রহমান চুক্কি ও বেজপাড়ার শাহিন খন্দকারের মৃত্যু ঘটনায় ৩ মামলায় মদ কারবারী সিন্ডিকেট প্রধান হাসানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্পটে আটক অভিযান চালায়। ওই সময় মাড়ুয়া মন্দির এলাকা কেন্দ্রিক জোরেসোরে ব্যবসা পরিচালনা করে হাসান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা।
তথ্য মিলেছে, গরীব শাহ রোডের শরফুদ্দিন মুন্না ওরফে মনি বাবু, ঝুমঝুমপুর বালিয়াডাঙ্গার ফজলুর রহমান চুক্কি. বেজপাড়ার শাহিন মাহমুদ খন্দকারসহ যশোর শহর এলাকায় মারা যাওয়া ৭ জন হাসান সিন্ডিকেটের ডেরা থেকে মদ কিনতো। এমনকি ওই ডেরাগুলোতে বসেই তারা সেবন করেছে। ওই ৩ জন ভেজাল মদ পানে মৃত্যুর ঘটনার আগে ও পরে মদ বিকিকিনিতে সক্রিয় ছিল শহরের হরিনাথ দত্ত লেইনের আনেয়ার হোসেনের ছেলে মাদক ব্যবসায়ী মাহমুদুল হাসান ওরফে হাসানসহ ১৪ জন। অন্যরা হচ্ছে বেজপাড়ার আব্দুল জলিলের ছেলে সাহেদ হোসেন সবুজ ও আমির হোসেন বাবু, বাশিরাম ঘটকের ছেলে কাজল কুমার ঘটক ও বিশ^জিৎ কুমার ঘটক। হাটখোলা রোডের মহিউদ্দিন শেখের ছেলে খোকন, গোলাম বিশ^াসের ছেলে আবু বক্কর রতন, লোন অফিসপাড়ার উমেশচন্দ্র লেইনের মৃত কাওছার শেখের ছেলে আবুল শেখ, ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের জাফর খাঁর ছেলে চান খাঁ, সদর উপজেলার সীতারামপুরের নরেন পালের ছেলে পিন্টু পাল, ভোলা জেলার বাসিন্দা আবু হানিফের ছেলে যশোর শহরে ভাসমান মহসীন শেখ শুভ, কাঠেরপুলের বিষে চন্দ্রের ছেলে কৃষ্ণ ওরফে ফারুক, রেল রোডের মৃত দাউদ রহমানের ছেলে আনিচুর রহমান পিকুল ও শেখহাটির নিমাই হালদারের ছেলে তপন কুমার হালদার।
৩ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিস্কার হয়েছেন, মুন্না, চুক্কি ও শাহিনের সখ্যতা ছিল ওই ১৪ জনের সাথে। মাড়ুয়ারি মন্দির এলাকাসহ আরো কয়েকটি এলাকায় বহু বিতর্কিত এই চক্রটি ব্যারেল, কন্টিনার, ড্রাম, ছোট পট ও ঢমে করে ভেজাল মদ সরবরাহ শুরু করে। যশোর শহর, শহরতলী, এমনকি জেলার বাইরেও তারা ভেজাল মদ সাপ্লাই দেয়। ওই সময় মুন্না, চুক্কি ও শাহিনের কাছে মদ সরবরাহ করেছিল বলে তথ্য মিলেছে। হাসান চক্র এপ্রিল ও মে মাসে বিধি লংঘন করে বিভিন্ন ডেরায় ভেজাল মদ সরবরাহ করে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যথাক্রমে এসআই হারুন অর রশিদ ও এসআই শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, হাসান সিন্ডিকেটের ভেজাল বিষাক্ত মদ পান করেই ওই ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এমন তথ্য প্রমাণ মিলেছে। ওই চক্রে ১৪ জন রয়েছে। কাজেই তারা অপরাধ করেছে। ওই চক্রটির মদ বিক্রির ব্যাপারে কোনো লাইসেন্স ছিলনা, বৈধতাও ছিলনা। ওই সিন্ডিকেটের চিহ্নিতদের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন উর্ধŸতন অফিসারের অনুমতি পেলেই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে